কাজী নজরুল ইসলাম চুমো চুরি করার পক্ষে ওকালতি করছেন। কত আবেগ ভরেই না লিখেছেন "
'নিষপিষ ঠোঁট যার মিঠা কিসমিস
জাফ্রান গালে তার দিস চুমা দিস।
আলুথালু যেথা বালা আবেশে বিভোর
পাঠাইয়া দিস সেথা চুম্বন-চোর'।
সাদামাটা বা আনাড়ি ভাষায় বলা যায়, ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট বা দেহের অন্য কোনো অংশ চেপে ধরে পেষণ দেয়াই চুম্বন। আবেগ, ভালোবাসা, স্নেহ, শুভেচ্ছা, বন্ধুত্ব ও শুভকামনার আবেগ ঢালতে মানুষ এই কর্মটির আশ্রয় নেয়।
কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণি, পাখি ও কীট-পতঙ্গ যখন একে অপরকে আদর করতে চায়, ওটাও এক ধরনের চুম্বন এবং তা আন্তরিকতার।
চুম্বনের উৎপত্তি নিয়ে নৃতত্ত্ববিদরা এখনও ঐকমত্যে আসতে না পারলেও প্রাথমিকভাবে তারা এটা মেনে নিয়েছেন, সন্তানের প্রতি মায়ের উপমাবিহীন আন্তরিকতা থেকেই চুম্বনের বিবর্তন ঘটতে পারে।
সময়, পরিবেশ ও আবেষ্টনের সীমানায় চুম্বনের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পৃথিবীর সব সমাজে এক নয়। তবে প্রেমের প্রথম চুম্বনকে ইলেকট্রিক শকের সঙ্গে নাকি তুলনা করা চলে।
নৃতত্ত্ববিদরা এটাও নিশ্চিত হতে পারেননি, চুম্বন কি শিখতে হয় নাকি এটা মানব প্রকৃতির সহজাত অভিব্যক্তি।
চিকিৎসাবিজ্ঞান মতে, চুম্বনকালে মুখের ৩৪টি পেশি ও ১২২টি postural পেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। চুম্বন বিজ্ঞান ফিলিমেটোলজি নামে পরিচিত। আর এ বিজ্ঞান মতে, আঙ্গুলের নরম ডগার চেয়ে ঠোঁট নাকি একশো গুণ বেশি স্পর্শকাতর। ওহ মাই গড!!
মুখের লালায় ইনফেকশাস ভাইরাস থাকলে চুম্বনের সাহায্যে রোগও ছড়াতে পারে (ইন্নালিল্লাহ) । তবে চুম্বনের ইতিবাচক দিক হচ্ছে, এটা স্নায়ুবিক চাপ কমায়।
দুজনের আত্মিক সম্পর্ক গভীর হয়। রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যায় (সোবাহান আল্লাহ)। তবে ফ্লাইং কিস বা উড়ন্ত চুম্বনের মানসিক প্রতিক্রিয়া থাকলেও ফিজিক্যাল লাভ-লস নেই।
দোসরা শুভ সংবাদ হলো : চুম্বন দাঁতের জন্য বিশেষ উপকারি (মারহাবা, মারহাবা)। বিজ্ঞানীদের মতে, এ কর্মকালে
(মাঝে মাঝে এটা অপকর্মও বটে!!!) মুখের লালার পরিমাণ এতোটাই বেড়ে যায় যে,দাঁত নাকি 'দন্তমল বিনাশী গোসল' সেরে নিতে পারে, একদম ফ্রি!! অবশ্য এ সময় প্রতি মিনিটে ২৬ ক্যালরি পুড়েবে।
ক্যালরি পুড়লে ক্ষতি নাই!!!
পশ্চিমা বিশ্বে চুম্বন সার্বজনীন হলো মাত্র একশো বছর আগে। অথচ শাদা চামড়ার মাঙ্কিরা সভ্যতার ডেফিনেশন নিয়ে বেশ পাঁয়তারা করে বেড়ায়। ১৬ 'শ শতকেও ইতালির নেপলসে চুম্বনের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। আর ভারতীয় উপমহাদেশে আড়াই হাজার বছর আগেই বাৎসায়ন তার 'কামসূত্রে' ৩০ কিসিমের চুম্বনের ফিরিস্তি দিয়ে গেছেন। 'জিহ্বার যুদ্ধ' নামে পরিচিত যে ফ্রেঞ্চ কিস-এর জন্য ফ্রান্সবাসী হামবড়াই দেখায়, ওটার বর্ণনা তো বাৎসায়নই দিয়ে গেছে।
চুম্বনের এই রেসিপি চোররা কিনা এটাকে 'জাঙ্কচার অব সোলস' আখ্যা দিয়ে এখন লাফায়।
ইতিহাস বলছে, মিসরীয়রাও চুম্বন শিল্পে ভারতীয়দের থেকে ফার্লং ফার্লং পিছিয়ে আছে। কারণ ওরা তখন চুম্বন করতে শেখেনি, স্রেফ নাক ঘষাঘষি করতো।
রবীন্দ্রনাথ দিয়ে শেষ করছি :
'যবে কোন অধ রাতে সহসা হেরিব
জাগি নির্মল শয্যাতে। পড়েছে চন্দ্রের
আলো নিদ্রিতা প্রেয়সী।
লুণ্ঠিত শিথিল বাহু
পড়িয়াছে খসি গ্রন্থি শরমের। মৃদু সোহাগ-চুম্বনে
সচকিতে জাগি উঠি গাঢ় আলিঙ্গনে
লতাইবে বক্ষে মোর-----।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।