প্রথমে একটি ইতিবাচক সংবাদের পুনরাবৃত্তি করেই মহিষ-বন্দনা শুরু করছি। বিশ্বে মহিষের প্রথম ক্লোন করেছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিজ্ঞানীরা। বাছুরটির নাম ছিল 'সামরূপা'। হজমে ব্যাঘাত ঘটায় এটা এক সপ্তাহের মধ্যে মারা যায়। এর পর 'গরিমা' নামের আরেকটি ক্লোন-মহিষও তারা তৈরি করেন।
আফ্রিকান, অস্ট্রেলিয়ান ও এশিয়ান মহিষের মাঝে স্বভাবগত কিছু ব্যবধান রয়েছে। এশিয়ান মহিষ হচ্ছে ওয়াটার বাফেলো (জল-মহিষ কি বলা যায়?) বেশির ভাগ সময় জলেই কাটায়। ডানপিটে গ্রাম্য ছেলের মতো জলে নামলে উঠতে ভুলে যায়। অন্য মহিষও পানিতে নামে। পানির কাছাকাছিই অবস্থান নেয়।
কিন্তু খাঁটি জল-মহিষের মতো পানিতে সব সময় খেলা করে না।
বিশ্বে ৭৪ প্রজাতির জল-মহিষ থাকলেও বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস,ভারতের আসাম ও উড়িষ্যার মহিষ মূলত একই প্রজাতির। এ গ্রহবাসী নাকি ৫ হাজার বছর আগে মহিষের ঘাড়ে জোয়াল চাপাতে পেরেছিল। সেই জোয়াল এখনও নামাতে পারেনি মহিষরা।
গরীব ভিয়েতনামীদের কাছে এটা এখনও 'ট্রাক্টর' হিসেবেই পরিচিত।
শুধু তাই নয়, এখনও তারা মহিষকে পরিবারের সদস্যই ভাবে। ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত ২২তম সাউথইস্ট এশিয়ান গেমসের মাসকট ছিল মহিষের।
মোষ সংস্কৃত শব্দ। এটা থেকে বাংলায় মহিষ শব্দটি এসেছে। সংস্কৃতে মোষ শব্দের মূল 'মহ্' ধাতু।
ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে, প্রাণিটি জলে নামলে উঠতেই চায় না আবার জলে নামলেই যেন উৎসবে মেতে উঠে। এ কারণে এটার নাম হয়েছে মোষ। তবে সংস্কৃতে মোষ শব্দটি খুব একটা প্রচল নয়। যদিও শব্দটির দেখা মেলে ঋগ্বেদে। সংস্কৃতে মোষের প্রতিশব্দ হিসেবে রয়েছে লুলাপ, কৃষ্ণশৃঙ্গ, যমবাহন, সৈরিভ ও কাসর।
এটা ঠিক যে, সংস্কৃতে মহিষের প্রতিটি প্রতিশব্দের রয়েছে আকর্ষণীয় ব্যাখ্যা, যা মহিষের আচার-আচরণ প্রত্যক্ষণের দলিল। যেমন, সংস্কৃত 'লুল'ধাতু থেকে আসা লুলাপ শব্দটি বেশ তাৎপর্যবহ। কারণ 'লুল' মানে মর্দন। জল ছিটিয়ে ডলাই-মলাই করলে মহিষ একেবারে শান্ত-সুবোধ বালকের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এই লুল ধাতুর সঙ্গে 'অলপ্' প্রত্যয় যোগে তৈরি হয়েছে 'লুলাপ'।
মহিষের জল-প্রীতির আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে 'কাসর' শব্দটি। সংস্কৃত 'ক' শব্দের অর্থ জল। আর মহিষ জল দেখলেই ছুটে যেতে চায় বলে এটার নাম হয়েছে কাসর। চুপে চুপে বলছি সংস্কৃত 'ক' শব্দটি দিয়ে বাতাসও বোঝায়। যেমন, কপোত।
অর্থাৎ 'যা বাতাসে পোত বা নৌকার মতো ভেসে থাকে।
হিন্দু ধর্মের সঙ্গে মহিষ ওতপ্রোতভাবে লেপ্টে আছে। কারণ সূর্যদেব ও বিশ্বকর্মার মেয়ে সজ্ঞার ছেলে যমরাজ বিমাতার অভিশাপে দুর্বল পায়ের অধিকারী হন। পরে দেবতারা প্রীত হয়ে যমরাজের জন্য 'পৌণ্ড্রিক' নামের এক মাদী মহিষ নিযুক্ত করেন। ব্যস! মহিষ হয়ে গেলো যমরাজের বাহন।
আর মহিষ হলো 'যমবাহন'।
বুনো মহিষ দল বেঁধে চলে। এরা খুবই হিংস্র। বাঘও তাদের ভয় পায়। তবে মওকা পেলে ঘাড় মটকায়, এই যা!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।