আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক আওলিয়া পরিবারের কাহিনী



১৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দের কোন এক দিন । তখন বাংলা ছিল মোঘল শাসনাধীন । সম্রাট শাহজাহান তখন মোঘল সম্রাট । তাঁর ছেলে সুজাউদ্দৌলা তখন বাংলার সুবাদার । মুসলিম শাসনে যাওয়ার আগে থেকেই এদেশে ইসলামের আগমন ঘটে ইসলাম প্রচারক আওলিয়াদের মাধ্যমে ।

মুঘল আমলেও আওলিয়াদের এ দেশে ইসলাম প্রচারের ধারা চলতে থাকে । তাদের অনেকেই ইরাক,ইরান প্রভৃতি দেশ থেকে এসে ইসলাম প্রচারে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিলেন । তাদের অনেকেরই বংশধরেরা আজো দেশের আনাচে কানাচে রয়ে গেছে । অন্যতম এক জবরদস্ত ওলী হযরত শাহ বায়েজীদ বোস্তামী(রহ: ) এর কথা আমরা অনেকেই জানি । অনেকে বলে থাকে এমনকি বিশ্বাসও করে যে, চট্টগ্রামে উনার মাযারও রয়েছে ।

কিন্তু, সত্য কথা হল, উনি বাংলাদেশে আসেননি । উনার দুই ছেলে ছিল । একজন ছিলেন হযরত কাতওয়ান বোস্তামী, আরেকজন ছিলেন হযরত জাদওয়ান বোস্তামী । হযরত কাতওয়ান বোস্তামী ইসলাম প্রচারের জন্য ইরান থেকে ভারতের জৌনপুরে আগমন করেন । তাঁর এক ছেলে ছিলেন হযরত শাহ আকবর বোস্তামী ।

তিনি পাঙসি নিয়ে পদ্মা নদী দিয়ে রাজশাহীতে আসেন ইসলাম প্রচারের জন্য । সুজাউদ্দৌলা ছিলেন তখন বাংলার সুবাদার । তিনি যখন পাঙসি নিয়ে বিরাহীমপুর এলাকার গন্ধবপুরে পৌঁছান তখন আছরের নামাযের সময় হয়ে যায় । তখন সঙ্গীদেরকে পাঙসি ভেড়ানোর নির্দেশ দেন । ঠিক একই সময় ওই নদী পথে সুজাউদ্দৌলা পাঙসি নিয়ে যাচ্ছিলেন ।

তাঁর পাঙসি মাঝনদীতে আটকা পড়ে । কিছুক্ষণ পর পাঙসি ছেড়ে দিলে তিনি অবাক হয়ে ঘটনা জানার জন্য সঙ্গী নিয়ে কূলে যান । গিয়ে দেখেন, হযরত আকবর বোস্তামী সঙ্গী-সাথী নিয়ে নামায শেষ করে জায়নামাযেই বসে আছেন । এরপর নিজের পরিচয় দিয়ে তিনি তাঁর মুরিদ হন আর তাঁকে ওই এলাকার দুইটি পরগনা দান করেন । উনি ওই এলাকাতেই আবাস স্থাপন করেন ।

তাঁর এক ছেলে ছিলেন হযরত শাহ মিয়াকাযী বোস্তামী । তিনি পিতার সাথেই এদেশে আগমন করে ইসলাম প্রচারের জন্য পাবনায় আসেন । তৎকালীন দুলাই থানায় (বর্তমানে সুজানগর থানা ) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আসেন । বিবাহসূত্রে সেখানেই নিশ্চিন্তপুর নামক গ্রামে আবাস গাড়েন । সুজাউদ্দৌলা তাঁরই সূত্র ধরে বেশ কয়েকবার নিশ্চিন্তপুর আসেন ।

একবার তিনি সুজানগরে যাত্রা বিরতি দেন । তাঁর নাম অনুযায়ী এলাকার নাম হয় সুজানগর । তিনি হযরত মীয়াকাযী বোস্তামীর নামে ওই এলাকার দশটি গ্রামের জমিদারী দিয়ে দেন । তাঁর ছেলে ,নাতী এরাও তাঁর অনুসরণে ইসলাম প্রচারের ধারাবাহিকতা চালু রাখেন । তাঁর সিলসিলা যারা চালু রাখেন তারা ছিলেন যথাক্রমে : তাঁর ছেলে হযরত শাহ আযীযুল্লাহ বোস্তামী -> তদীয় পুত্র হযরত শাহ সানাউল্লাহ বোস্তামী ( উনার সম্পর্কে লোকমুখে শোনা যায়, উনি বনের কাছে গিয়ে বাঘকে নাম ধরে ডাকতেন ।

বাঘ চলে আসত আর উনি পিঠে উঠে বিভিন্ন এলাকায় ইসলাম প্রচারে চলে যেতেন । ) এরপরে তাঁর দারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখেন তার পুত্র রফাউল্লাহ বোস্তামী । এরপরে আসেন তাঁর পুত্র তরিকূল্লাহ বোস্তামী । তাঁর থেকেই তাঁর বংশের সাথে খোন্দকার উপাধী যুক্ত হয় । এরপরে আসেন তার পুত্র জহিরুদ্দীন বোস্তামী ।

তখন পদ্মায় ভাঙ্গন দেখা দেয় । তিনি পদ্মার ভাঙ্গন রোধ করতে গিয়ে তাঁর সব সন্তান মারা যান । শুধু বেঁচে থাকেন খোন্দকার খোরশেদ আলম বোস্তামী । তাকে তিনি বহু আদরে অনেক ভাষায় শিক্ষিত ও যোগ্য করে গড়ে তুলেন । তিনি পর্যন্ত তাঁদের বংশের এই সিলসিলা জারি থাকে ।

উনার ইন্তেকালের পর উনাকে উনার প্রতিষ্ঠিত মসজিদের পাশেই দাফন করা হয় । উনাদের নিদর্শন বলতে টিকে আছে বর্তমানে বাড়ির উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ আর এই বংশের শেষ আওলিয়া হযরত খোন্দকার খোরশেদ আলম বোস্তামীর মাযার(মসজদি সংলগ্ন ) , আর তাদের বংশধরেরা । তাঁদের পূর্বপুরুষের স্মৃতিময় বাড়িটা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে । টিকে আছে শুধু খোরশেদ আলম বোস্তামীর স্মৃতিময় বাড়িটা । সংগ্রহে: পারিবারিক সংগ্রহশালা, নিশ্চিন্তপুর খোন্দকার বাড়ি, নিশ্চিন্তপুর,সুজানগর, পাবনা ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।