আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণ্ডার-বন্দনা



কাতুকুতু দেয়ার তিন দিন পর নাকি গণ্ডার হাসে! মাফ করবেন, আমি কোনো গণ্ডারকে কাতুকুতু দিয়ে বিয়টি পরীক্ষা করে দেখিনি। তবে এতেটুকু শুনেছি, বন্দুকের গুলিও নাকি গণ্ডারের চামড়া ভেদ করতে না পারার বাজার-চলতি ধারণা থেকেই বলা হয়, কাতুকুতু দেয়ার তিন পর নাকি গণ্ডার হাসে। এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং সামান্য চাকু দিয়েও গণ্ডারের চামড়া কাটা সম্ভব। অবশ্য গণ্ডারের চামড়া বেশ মোটা।

আর 'গণ্ডারের চামড়া' বলে রাজনৈতিক নেতাদের গালি দেয়া হয়। নেতারাও কম যান না। তারা 'মারলে গণ্ডার মারেন আর লুটলে ভাণ্ডার লুটেন। ' বাংলাদেশে গণ্ডার নেই। গণ্ডারের চামড়াওয়ালা (লাজ-শরমের মাথা খাওয়া অর্থে) এক দঙ্গল নেতা আছেন, যারা শুতে-বসতে একটাই মন্ত্র জপেন :'মানি না মানি না'।

পথিক জিজ্ঞেস করে : ভাই কি মানেন না? 'জানি না জানি না' নেতার সাফ জবাব। দুর্জনেরা বলেন, এসব নেতার সরব উপস্থিতির কারণে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শয়তান ইবলিস মহাশয় (বাবার নাম খবিস, মায়ের নাম নিলবিস)খুশি মনেই নাকি এলপিআরে চলে গেছেন। যাই হোক, এটা নেতাবধ কাব্য নয়, গণ্ডার-বন্দনা। এক সময় গঙ্গার তীরে নাকি গণ্ডার দেখা যেতো। এখন ওদের বংশধরদের দেখা যায় আসামের গহীন জঙ্গলে।

কালচে বাদামি রঙের এসব গণ্ডার এখনও ভারতের নানা জায়গায় দেখা যায়। অথচ ভারতীয় সাহিত্যে গণ্ডারের উপস্থিতি নগন্য। এটার কারণ নির্ণয় নিয়ে গবেষণা হতে পারে। কে কে করবেন হাত তোলেন! সংস্কৃতে কিন্তু গণ্ডার শব্দটি নেই। শব্দটি দ্রাবিড় অথবা মুন্ডারি ভাষা থেকে বাংলায় এসেছে বলে ভাষাবিদরা ধারণা করেন।

সংস্কৃতে যে 'গণ্ডার' শব্দটি পাওয়া যায়, তা দিয়ে পোস্টের গণ্ডার বোঝানো হয় না। সংস্কৃতে গণ্ডারের প্রতিশব্দ হচ্ছে খড়গ বা খড়গী। কিন্তু শুক্ল যজুর্বেদে খড়গ শব্দটি দিয়ে গণ্ডার নয়, হরিণ বোঝানো হয়েছে। আবার মহাভারতের অর্জুনের হাতে যে খড়গ রয়েছে, তা যে গণ্ডারের হাড় দিয়ে তৈরি, তারও প্রমাণ নেই। বরং ওটা এক ধরনের হরিণের শিং থেকে তৈরি বলেই গবেষকদের বিশ্বাস।

অন্যদিকে বাসবদত্তায় 'খড়গী' শব্দটি দিয়েও গণ্ডার বোঝানো হয়নি, মহাদেবকে নির্দেশ করা হয়েছে। মাত্র চারশো বছর আগেও পেশোয়ারে সম্রাট বাবর গণ্ডার শিকার করেছেন বলে ইতিহাসে প্রমাণ রয়েছে। কালো রঙের গণ্ডার মেলে সুদান ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, ক্যামেরুন, চাদ, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা, জায়ারে, জাম্বিয়া ও মোজাম্বিকে। আর সাদা গণ্ডার পাওয়া যায় জায়ারে, উগান্ডা ও সুদানে। আর বাংলাদেশে পাওয়া যায় বর্ণচোরা নেতা-গণ্ডার।

ওজনের তুলনায় গণ্ডার বেশ জোরে ছুটতে পারে (ঘণ্টায় ৪০ মাইল)। পৃথিবীতে ৫ হাজার পাউন্ড ওজনের গণ্ডার রয়েছে। এটার দৃষ্টিশক্তি অতিশয় ক্ষীণ। কিন্তু তা সহজেই পুষিয়ে নিতে পারে ঘ্রাণশক্তি ও শ্রবণশক্তির সাহয্যে। এটা দাঁড়িয়ে অথবা শুয়ে ঘুমাতে পারে।

দিনের চেয়ে রাতেই বেশি এরা সক্রিয় থাকে। আর এটার শিং বাড়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।