আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লবণ-বন্দনা



লবণ এখন অতি মামুলি চিজ হলেও এক সময় তা ছিল না। এটা ছিল সোনার চেয়েও দামি! রোমান সৈন্যরা বেতন না নিয়ে বেতন হিসেবে 'লবণ' নিতেন। ভারতীয়রা কবে থেকে প্রথম লবণের ব্যবহার শিখেছিল, সে ব্যাপারে ইতিহাস নীরব। তবে ঋগ্বেদে শব্দটি না থাকার কারণে ধরে নেয়া যেতে পারে, ভারতীয়রা লবণের স্বাদ পেয়েছে সম্ভবত তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বছর আগে। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হলে একটা গ্রহণযোগ্য উপাত্ত পাওয়া যেতে পারে।

কিন্তু এ জিনিসটির অপরিহার্যতা প্রমাণিত হবার পর যে তা আর সাধারণের সম্পত্তি থাকেনি, তা বুঝতে কষ্ট হয় না। কারণ ততদিনে এটা রাজকীয় সম্পদে পরিণত হয়ে যায়। রাজশক্তির সমর্থনে এগিয়ে এসে একদিন শাস্ত্রকাররাও ফতোয়া দিলেন : জাতভেদের কারণে সব বাড়িতে লবণ খাওয়া হবে মহাপাপ!! এক সময় হিন্দুরা সব বাড়িতে লবণ খেতে পারতো না। একান্ত খেতে হলে নিজেকেই লবণ নিতে হতো। সোজা কথায়, সামাজিক শোষণ পাকাপোক্ত করতে শাস্ত্রকাররা সব সময় রাজার সমর্থনে এগিয়ে আসতেন ফতোয়ার ঢাউস তোরঙ্গ নিয়ে।

সংস্কৃত 'লবণ' থেকে বাংলায় নুন বা লুন শব্দটি এসেছে। ফারসিতে এটা 'নমক'। পরে উর্দু ও বাংলায় তা হয়েছে নিমক বা নেমক। ভারতীয় উপমহাদেশে এককালে লকবণ খাওয়া নিরুৎসাহিত করতে শাস্ত্রও রচিত হয়েছিল। বিশেষত ছাত্র, পুত্রবধূ ও বিধবারা লবণ খেতে পারতেন না।

আবার শাস্ত্রের বিধান মেনে যার বাড়িতে লবণ খাওয়া যেতো, তাকে বলা হতো 'কৌদ্রাবিক'। আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে চিহ্নিত হবার কারণে সেই আদি কাল থেকে রাজা-মহারাজাদের নজর ছিল ছিল লবণের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের দিকে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রেও বিধান দেয়া হয়েছে : 'লবণের উপর একমাত্র অধিকার রাজার। ' এক সময় ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু রাজারা লবণের উপর ৬ প্রকার কর ধার্য করতেন বলে জানা যায়। পরে মুসলিম শাসকরাও একই পথ ধরেন।

সমুদ্রের তীরে লবণের গর্তগুলোকে তখন বলা হতো 'লবণাকর'। পরে মুসলিম শাসনামলে এগুলোর নাম হয়ে যায় 'নিমকমহল'।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।