আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাঁজা-বন্দনা



গোলকায়নের এ যুগে কেমিক্যালসের দাপটে কুলীন 'গাঁজা' নাকি জাত খুইয়ে নেশার রাজ্যের এক কোণায় চুপটি মেরে বসে আছে। তাই ভূবনগাঁয়ের নেশার রাজ্যে গাঁজা এখন আর বনেদি নয়, আমজনতার কাতারে। এক সময় সাধু-সন্ত থেকে শুরু করে রাজা-বাদশা ও সমাজপতিদের নেশা চাগিয়ে দিতো এই গাঁজা। হাশিশ নামে জিনিসটি এখনও সারা দুনিয়া চষে বেড়ায়। ভাং ও চরসের সঙ্গে রয়েছে গাঁজার রক্তের সম্পর্ক।

কারণ সিদ্ধি জাতীয় উদ্ভিদের শুকনো মঞ্জুরি থেকে হয় গাঁজা, পাতা থেকে হয় ভাং আর গাঁজার আঁঠা থেকে তৈরি হয় চরস। ছিলিমভর্তি গাঁজা টেনে এখনও নাকি সাধু-সন্তরা তুরীয় আনন্দ পান। তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই ভেইয়া! ভারতচন্দ্রের কাব্যে রয়েছে, স্বয়ং শিবঠাকুর নাকি ঘাঁজা-ভাং খেয়ে কচুরিপানায় দিব্যি হেঁটে বেড়াতেন। শুধু কি তাই, অষ্টম শতকে (কেউ কেউ বলেন ষষ্ঠ শতক) রচিত বানভট্টের কাদম্বরীতে রয়েছে, রাজধানী বিদিশায় বসে শুদ্রক রাজা স্নানাহারের পর কষে গাঁজা খেতেন। কারণ তখনও ভারতে তামাক আসেনি।

গাঁজা পরিবারের নিজস্ব কিছু টার্ম রয়েছে। যেমন, গাঁজা কাটার ছুরি নাম 'রতন কাটারি'। যে পিঁড়িতে গাঁজা কাটা হয় তা 'প্রেমতক্তি' আর ধোঁয়া ছাঁকবার ভিজে ন্যাকড়ার নাম 'জামিয়ার'। আর গাঁজাতন্ত্রের শেষ আচার হচ্ছে এক টানে কল্কে ফাটানো। প্রসিদ্ধি রয়েছে, নিরাকার ব্রহ্মকে সাকার ঈশ্বর রূপে দেখতে সুবিধা হতে পারে, এই ভারসায় নাকি সাধৃ-সন্তরা গাঁজার কল্কেতে কষে দম দেন! কথায় বলে : 'এক ছিলিমে যেমন তেমন দুই ছিলিমে মজা তিন ছিলিমে উজির-নাজির জার ছিলিমে রাজা।

' আর রাজা মশাইয়ের গাঁজার নৌকা পাহাড় দিয়ে যেতে কোনো বাধা নেই। গুপ্ত ঘাতকদের ইংরেজিতে বলা হয় assassin। শব্দটির জন্ম কিন্তু হাশিশ থেকেই। ছিলিম আর কল্কে একই জিনিস। ছিলিমের মূল আরবি 'ছিলম' আর কল্কের মূল সংস্কৃত 'কলিকা'।

আর ফারসি 'নাইচা'থেকে বাংলায় এসেছে 'নলচে'। অন্যদিকে গাঁজা এসেছে সংস্কৃত 'গঞ্জিকা' শব্দ থেকে। সংস্কৃত 'গাঁজ' (ফেনা) থেকেও বাংলায় গাঁজা শব্দটি এসেছে। এ গাঁজার অর্থ ফেনিল হয়ে ওঠা, টক হয়ে যাওয়া। শেষে একটি কথা চুপে চুপে বলছি।

আফিমের মৌতাতের খবর নিতে হলে যেতে হবে বঙ্কিমের কমলাকান্তের কাছে। আর গাঁজার মৌতাতের খবর নিতে হলে ছুটে যেতে হবে কোনো ভন্ড মাজারে!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।