আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

** জ্যোতির্ময় ফটোগ্রাফি **(একজন রূপবতীর তোলা ছবি ) [দুষ্টু গল্প ]

http://shorob.com/author/bohemian/

যে ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছি। সেটি হচ্ছে এক নারীর। শরীরে কোন কাপড় নাই, এই তথ্যটাও দিয়ে রাখি। কিন্তু কাপড় না থাকলেও সব কিছুই যে দেখা যাচ্ছে তাও না! ফাজিল ফটোগ্রাফার আলো ছায়া নামক সৃজনশীলতায় অস্পষ্ট করে রেখেছেন। অনেকক্ষণ ধরেই এই একটা ছবির দিকে তাকিয়ে আছি।

মেয়েটির বুকে যেন কী আছে! কী যেন সে বলতে চায়! কিন্তু জায়গায় জায়গায় অন্ধকার এসে সবকিছুকেই 'না বলা কথা' বানিয়ে দিয়েছে! আমাকে সবটা দেখতে দিচ্ছে না বেরসিক অন্ধকার! আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম তখনই আমার গার্লফ্রেন্ড জ্যোতি এসে বলল "ছবিটা সুন্দর না?!" আমি আমতা আমতা করে বললাম "হ্যা। মাত্রই দেখা শুরু করলাম! এখনো ভালো করে দেখে উঠতে পারি নি! ক্যাপশন পড়ছিলাম!" "কোথায় ক্যাপশন? এইটার ক্যাপশনে বানান ভুল ছিল, চেইঞ্জ করতে গেছে তো! তুমি মেয়েটার ফিগার দেখে পাগল হয়ে গেছ! সেইটাই দেখছিলে না?! এত এত সুন্দর সুন্দর ছবি না দেখে তুমি শেষ পর্যন্ত একটা ন্যুড ছবির সামনে এসে দাঁড়ালে? তাও যদি বুঝতাম এই ছবির কোন স্পেশালিটি বুঝে দাঁড়াতে! এই ছবির অনেকগুলা স্পেশালিটি আছে। একটাও বুঝেছ? নারীর যে অন্তর্গত দ্বন্দ্ব... জ্যোতির জেরা/লেকচার চলছিলই, "হাই জ্যোতি!" ডাক শুনে তাকিয়ে দেখি এক চাইনিজ/জাপানিজ টাইপ মেয়ে। জীবনে কখনো চাইনিজ/জাপানিজ মেয়ে দেখে এত খুশি হই নাই! জ্যোতির হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য ওকে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম! "হাই ইন্তিরা! ও হচ্ছে ইমরান যার কথা তোমাকে বলেছিলাম! ইমরান ও হচ্ছে ইন্তিরা। এই ছবিটা ইন্তিরার তোলা! জোশ একটা ছবি! ইমরান তো ছবিটার প্রশংসা করছিলো" আমি আর ইন্তিরা হাই বিনিময় করলাম।

ইন্তিরার জন্ম থাইল্যান্ডে, বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পত্রিকার কাভার স্টোরির ফটোগ্রাফার ছিল সে। আমাদের দেশেও একটা এসাইনমেন্ট নিয়ে এসেছে সে। জ্যোতির সাথে অনলাইনে পরিচয়। জ্যোতি ইদানিং সিরিয়াসলি ফটোগ্রাফি করছে। এই এক্সিবিশনে ওরও একটা ছবি আছে।

ওর ছবিটাও নারী নিয়েই। কিন্তু গায়ে কাপড় আছে! এই কারণে আমি অতটা খেয়াল করি নাই! বাসায় যাবার পথে রিকশায় বসে জ্যোতি জিজ্ঞেস করল এক্সিবিশনের থিম সম্পর্কে আমার কি আইডিয়া! একটা সময় নিজেও কিছুটা ক্রিয়েটিভ ছিলাম। কিন্তু জ্যোতির সাথে সম্পর্কের পর সব কিছুই বন্ধ। কারণ ওর তীব্র সমালোচনা ! আমি নাকি ক্রিয়েটিভিটির কিছুই বুঝি না। তাই ও কিছু জিজ্ঞেস করলে বলি "আসলে বুঝি নাই"।

ও তখন বলে গেলো এই এক্সিবিশনের থিম কী এবং কেন। ফেমিনিস্ট, সেক্সিস্ট, আউটকাস্ট আরও কি কি সব শব্দ যেন বলল, বুঝছিলাম না এইগুলা কি গালি নাকি! আর গালি হলেও আমাকে নাকি অন্য কাউকে দিচ্ছিলো! তবে ও যখন ওর বিশাল জ্ঞান গর্ভ লেকচার দিচ্ছিলো তখন একটা বিষয় মাথায় ঘুরছিলো, ইন্তিরার সাথে জ্যোতি আমাকে নিয়ে কী কথা বলছিলো? রিকশা যখন ওর বাসার কাছে থামল তখনও ওর লেকচার শেষ হয় নাই,"কিছুই তো বুঝো নাই! এতক্ষণ কী বললাম! কাল এই বিষয়টা বুঝিয়ে দেব টেনশান করো না! তোমার মোটা মাথায় সব ঢোকানোর দায়িত্ব আমার! কাল তোমার বাসায় আসছি। " আমি বললাম "না না কী যে বলো না! আমি সব বুঝতে পেরেছি। " "বাজে কথা বলো না তো লক্ষী! তোমার এই সব বোঝার ব্রেইন এখনো হয় নাই! সমস্যা নাই আমি কাল সব বুঝিয়ে দেব!" জ্যোতি যখন এই কথা বলছিলো আমি রিকশাওয়ালার হাসির শব্দ শুনতে পেলাম! রাগে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। রিকশাওয়ালা ভাড়া নেবার সময় বলল "ভাই চিন্তা কইরেন না! আপায় কাল সব বুঝায়া দিব!" পরের দিন জ্যোতি বাসায় আসল।

আসার সাথে সাথেই বললাম "জো প্লিজ, কালকের এক্সিবিশনের থিম নিয়ে কোন কথা না!" ও বলল "জান্টুস একবার বোঝো নি বলেই মন খারাপ করে বসে থাকতে হবে!! আমি বললাম তো আজ সব বুঝিয়ে দিব! এই থিমটা বোঝা তোমার জন্য দরকার। কারণ তোমাকে আমি মডেল হিসেবে সিলেক্ট করে ফেলেছি। " "মডেল হিসেবে মানে কিসের মডেল?" "আমার নেক্সট ফটোগ্রাফি কম্পিটিশনে তোমার ছবি সাবমিট করব। কত্ত ভালো হবে না বলো তো জান্টুস?" আমি বললাম"ও আচ্ছা! ব্যাপার না। তুলবা।

কিন্তু আমার থিম বুঝতে হবে কেন? আমি দাঁড়াব, তুমি তুলবা, শেষ!" "ইয়ে জান্টুস...ছবিটার থিম বুঝলে তুমি ঠিকভাবে সাহায্য করবা। কারণ আসলে ছবিটা হবে ন্যুড!" "হোয়াট?! তুমি আমার ন্যাংটো ছবি তুলবা?" "আহা জান্টুস তুমি এভাবে বলছো কেন? আমি তো ফিউচারে তোমার সব দেখবই তাই না?!! এখন দেখলে ক্ষতি কি?!" "এখন দেখলে ক্ষতি কি মানে? তুমি তো খালি দেখতে চাইতেছ না! তুমি ছবিও তুলতে চাও! তাও আবার আমাকে ন্যাংটো করে! মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি! ছি ছি! এই ছিলো তোমার মনে!" "আহ হা জান্টুস! তোমার সব কিছু তো বোঝা যাবে না! অন্যরা যখন দেখবে সেই ছবি তো সেই রকম ভাবেই তোলা হবে। যেন কিছুটা রহস্যময়তা থাকে! চিন্তা করে দেখ তো! তোমার মধ্যে কোন রহস্যময়তা আছে নাকি? তোমার চেহারা দেখলেই বোঝা যায় তুমি একজন বোকা কিসিমের মানুষ! কোন রহস্য নাই, কোন মিষ্ট্রি নাই! প্লেইন এন্ড সিম্পল মানুষ!এখন যদি তোমার ন্যুড ছবির কল্যাণে তোমার মধ্যে কিছু রহস্যময়তা ঢুকে যায় ক্ষতি কি?! আর আমার জন্যই তো! আমার জন্য তুমি ন্যুড হতে পারবা না?! এইটা একটা কথা হলো?!" সে তার জ্যোতির্ময় চেহারায় ব্ল্যাকমেইলিং ভাব ফুটিয়ে তুলল! এই রকম অদ্ভুদ সুন্দর চেহারাকে কি করে "না" করি? আমি বললাম "আচ্ছা যাও। কিন্তু কিছু যেন না বোঝা যায়! আর তোলার সময় শুধু তুমি থাকবা আর কেউ না। " জ্যোতি বলল "ইয়ে জান্টুস" আবারও ইয়ে? আরও কি কি কাহিনী আছে?!! "জান্টুস, আমার প্রাণ্টুস! সাথে তো একজন লাইটম্যানও থাকবে।

পুরো প্রফেশনাল হতে হবে না!" "হোয়াট? আমি আরেকটা লোকের সামনে ন্যুড হব? নো নেভার! একবার খাতনার সময় হয়েছিলাম, তখনই পণ করেছিলাম,নেক্সট টাইম নেভার! আর কোন পুরুষের সামনে আর ন্যাংটো হবো না! একবার হয়েই যেই ধরাটা খেয়েছি! " "ছি ছি জান্টুস! বি এ প্রফেশনাল! তুমি আরেকজন লোক ভাবছো কেন? ভাব সে কাজ করতে আসবে। তুমিও একটা কাজ করছো! সবকিছুকে প্রফেশনাল পয়েণ্ট অব ভিউ থেকে দেখো। হলিউড মুভিতে দেখো না!!" আমি বললাম "আমি তো হলিউডি না! আমার লজ্জা শরম আছে!" "ইশ আমার জান্টুসটা কত লজ্জা পায়রে!" অনেক ক্ষণ বোঝানোর পর সে আমাকে রাজি করাতে পারল (জ্যোতি আমাকে কখনোই কোন কিছুতে রাজি করাতে ব্যর্থ হয় নাই!) এই বলে "লাইটম্যান তোমার জিনিসপত্র দেখবে না! ঐ সময় সব ঢেকে ঢুকে রাখা হবে! আর টেনশানের কিছু নাই, লাইটম্যান গেও না! আর তোমার ফিগারও তত এট্রাকটিভ কিছু না!!" আমি তো রাজি হয়ে বিপদে পড়ে গেলাম। এখন কি হবে? ঐ ছবি যদি আমার বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের হাতে পড়ে তাইলে কি হবে? আর ছাপা হলে হবে আন্তর্জাতিক পত্রিকায়। ইন্টারনেট এ সার্চ দিলেই তো পাওয়া যাবে।

তবে জ্যোতি বলেছে চেহারাও নাকি বোঝা যাবে না। একদমই অন্যরকম লাগবে। আমার ভালোই টেনশান হচ্ছিলো। তবু তুলতে গেলাম। আমি তো ভেবেছিলাম জ্যোতির বাসায় হবে, ও বললো একটা স্টুডিওতে তোলা লাগবে! আমি বললাম "কী! আমি সবার সামনে ন্যাংটো হবো?!" "আহা!এভাবে ভাবছ কেনো? তুমি তো প্রফেশনাল!" নিজের গার্লফ্রেন্ডের জন্য সব খুলতে রাজি হইলাম, এতে প্রফেশনালিজমের কি হইলো বুঝলাম না! স্টুডিওতে গিয়ে দেখি ইন্তিরা সেখানে! আমি জ্যোতিকে বললাম ও এখানে কেন? ও বললো ইন্তিরার ব্যক্তিগত মেকাপম্যান নাকি মেকআপ করবে! ইন্তিরা অবশ্য থাকবে না ফটোশ্যূটের সময়।

তবে ভয় নাই। ও যখন মেকাপ করবে তখন শুধু শার্ট খুলতে হবে! জ্যোতি আমার শার্ট খুলতে সাহায্য করল! পৃথিবীতে যত জামা আর কাপড় অর্ধেক তার খুলিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর!! এইটা কি কেউ বলছিলো? যাই হোক সেই দিন ভয়াবহ ফটোশ্যুট করা হলো । আমি আমার সর্বোচ্চ প্রফেশনালিজম রক্ষা করলাম! জ্যোতির ব্যাপক ঝাড়িও খেতে হয়েছিলো! "সামান্য জন্মদিনের পোষাকে পোজ সেটাও দিতে পারো না!" (সেই বিষয়ে আমরা গভীরে না যাই! ) মাস খানেক পরে জ্যোতি একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে এল। "জান্টুস আমি ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছি! তোমাকে কত্ত সুন্দর দেখাচ্ছে বলো তো! একদম হট! পুরাই আগুন্টুস!" আমার ছবি কাভারে গেছে! কাভারে একজন প্রায় নগ্ন লোক। তাকিয়ে দেখলাম! নিজেকে দেখে নিজেই চমকে গেলাম! মুখটা আমার নাকি অন্য কারো সন্দেহ হচ্ছিলো।

একদমই অন্য রকম! বলে না দিলে কেউ বুঝবে না এটা আমি! নাভীর নিচে ব্যাপক রহস্য! আলো ছায়ার খেলা! কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না! তার উপর কাভার স্টোরির লেখা। সো আমি বেঁচে গেলাম। কেউ আর পঁচাতে পারবে না! কিন্তু লেখাটায় চোখ আটকে গেলো। ছোট করে লেখা ছিলো Asian Gay! "হোয়াট! গে!" "জান্টুস!আগে ভালো করে শোন! ইন্তিরা আর আমি মিলে সাবমিট করেছিলাম। মেইল বিউটি বিভাগে।

ওরা তোমারটা নিজেরাই গে পার্টে সিলেক্ট করেছে! আমরা কি করতে পারি! শর্ত ছিলো প্রতিযোগিতায় টিকলে ওরা ওদের যে কোন ম্যাগাজিনে কাভার স্টোরি করতে পারবে। গে দিয়েছে তাতে কি?! তোমাকে দেখতে হয়তো কিছুটা গে লাগেই! তাই বলে তুমি তো আর গে না! আমি জানি তুমি গে না,তবে ওরা তো জানে না! ওরা দেখে ভেবেছে, তাই দিয়ে দিয়েছে!" "হোয়াট! আমাকে দেখতে গে লাগে?!" "কিছুটা তো লাগেই! এইটাই তো তোমার রহস্যময়তা! এইখানেই তো তোমার স্বার্থকতা! তবে তোমাকে দেখতে ভালো লাগছে না বলো?! একদম আগুন্টুস?!" আমি কপট রাগ করে বললাম "হ্যা!" আগুন্টুস! নামটা পছন্দ হইছে! উৎসর্গ : তানভীর ভাইয়াকে। জ্যোতির ফেইসবুক পেইজ আনসিরিয়াস কথামালার জ্যোতির ৪র্থ পর্ব অবশেষে আসল! সবাইকে অগ্রিম ঈদ মুবারক। ১ম পর্ব জ্যোতির্ময় কথোপকথন (৩৮৫০+ পেইজভিউ! ) অন্যান্য গল্প সমুহ **আলো ও অন্ধকারের গল্প** ** স্বপ্নে তুমি **(১৮+, হাসির রোমাণ্টিক গল্প) তোমাকে, অনিন্দিতা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।