গল্পের রাজত্বে বসবাস করছি আপাতত
মৃত্যু
মৃত্যুর চারদিন আগে থেকেই মা কথা বলতে পারতেন না। আমি দেখেছি তার নির্বাক চোখের চাহনি। মৃত্যু পথযাত্রী সব রুগীদের চোখে আমি সেই চাউনি দেখতে পাই। তবু আমি রুগীদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখি। এরপরও অনেক রুগী সুস্থ হয়ে দেখা করতে আসে।
রুগীর আÍীয়স্বজনের সাথেও দেখা হয়ে যায় প্রায়ই।
কিন্তু এই কবরস্থানেও দেখা হবে এক রুগীর বাবার সঙ্গে তা ভাবিনি।
দুদিন আগে সে এসেছিলো। তার সঙ্গে ফুটফুটে একটি মেয়ে। তিন-চার বছর বয়স।
লোকটি খুব কাঁদছিলো, ডাক্তার সাহেব আমার একটিই মেয়ে। অসহায় লোকটি পারলে আমার পা জড়িয়ে ধরে। আপনি আমার মেয়েকে বাচাঁন।
আমি তাকে ধমক দিয়ে ওয়ার্ড থেকে বের করে দিয়েছিলাম। মেয়েটি কিন্তু একটাও কথা বলেনি।
আমি জানি, তার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। সে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আমার মায়ের সেই চাউনির মত।
আমি মেয়েটিকে ফেরত পাঠিয়ে ছিলাম, খামাখা হাসপাতালে রেখে কী লাভ, একটা বেডের অপচয়।
এখন এখানে তাকে দেখে বুঝতে পারি, মেয়েটি মারা গেছে।
আমি লোকটির কাছে যাই। হাত রাখি তার পিঠে। আপনার মেয়েটি মারা গেছে, তাই না?
সে নিরুত্তর।
আমার মাও মারা গেছে, তিন বছর আগে। আমার ডাক্তার হওয়ার একমাস আগেই।
সে নিরুত্তর।
আচ্ছা মানুষ মরে কেন?
এইবার সে চোখ তুলে তাকায়, নির্বাক চোখ। আমি আঁতকে উঠি। লোকটার চোখে, সেই চাহনি যা তার মেয়ের চোখে ছিলো, যা আমার মা’র চোখে ছিলো।
বুড়ো ও মৃত্যুদূত
এক হাড় জিরজিরে বুড়ো ছিলো।
বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে বুড়োর দিন চলতো।
বুড়োটা একদিন এক বাড়ির উঠোনে গিয়ে হাঁক দেয়, বাবাগো, মাগো, দুইটা ভিক্ষা দেন।
বাড়িতে তখন কেউ ছিলো না। খালি বাড়িতে মৃত্যুদূত এসে বসেছিলো। বুড়োর হাঁক শুনে মৃত্যুদূত বেরিয়ে এলো।
কে রে?
আমি হাড় জিরজিরে বুড়ো, আমারে গায়ের সব্বাই চেনে, তুমি চেনো না!
চিনিরে, তোকে ভাল করেই চিনি, প্রথমে বুঝতে পারিনি।
ও, তা তুমি কে বাপু?
আমি মৃত্যুদূত।
কে?
ঘাবড়াসনে বুড়ো, আমি মৃত্যুদূত।
ঘাবড়াবো কেন, আমি কি মরণকে ভয় পাই, তিনকুল গিয়ে চারকুলে ঠেকলো এখন আর মৃত্যুদূতকে ভয় কিসের!
তা ঠিক।
তো তুমি এখানে কী করতে এসেছো?
আমার যা কাজ!
কার জান নেবে তুমি?
এ বাড়ির বড় ছেলের।
সেই জন্য অপেক্ষা করছি।
আহা, ছেলেটা নতুন বিয়ে করেছে, ওর জান নিয়ো না এখনি।
চুপ থাক বুড়ো, যেটা বুঝিস না সেটায় নাক গলাবি না।
তুমি বরং আমার জান নাও, আমার তো আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না।
তোর জান নিয়ে কী লাভ, তুই তো এমনিতেই ঘাটের মরা।
খবরদার, ঘাটের মরা বলবি না বলে দিচ্ছি!
এই বুড়ো, এই, তুই আমাকে ভয় পাস না?!
তোকে ভয় পাওয়ার কী আছে? সবাই তো মরবে তাহলে মরণকে ভয় কিসের!
তবে জেনে রাখ বুড়ো, একদিন তুইও মরণকে ভয় পাবি, আর যেদিন ভয় পাবি সেদিনই আমি আসবো বলে রাখলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।