দুই স্মরণীয় ঈদের কথা বলব আজ, যার প্রথমটা এসেছিল যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। রোজা রাখছিলাম শুরু থেকেই। ১০ রোজার পর থেকেই একটু অসুস্থ বোধ করা শুরু করি, কিন্তু লুকিয়ে রাখি ব্যাপারটা, জানালেই তো আমার রোজা রাখা বন্ধ করে দিবে। পেপটিক আলসারের একটু সমস্যা ছিল। রোজা রাখার কারণে সেটার ব্যথাই একটু অনুভব করছিলাম।
কোন ওষুধ খাইনি। মনে করেছিলাম এমনি ভালো হয়ে যাবে। ইফতারের পর দুধ খেয়ে নিতাম, তাতে একটু ব্যথা কমত, কিন্তু পুরোপুরি সারছিল না।
রাতে আব্বার জন্য রুটি বানাত আম্মা, আমি সেঁকে দিতাম। ব্যথা এত বেশি হত যে রুটি সেঁকার মাঝখানে পেট চেপে উপুর হয়ে থাকতাম।
কিন্তু আবার খেয়াল রাখতাম আম্মা দেখে ফেলে কি না। এই অবস্থায় আরও তিনটা রোজা রেখে ফেললাম। স্কুল বন্ধ ছিল কিন্তু কোচিং হত। কোচিং এ গিয়ে একদিন সহ্য করতে না পেরে পেট চেপে বেঞ্চের উপর মাথা রেখে বসে আছি, এক বান্ধবী বলল, কি রে তোর শরীর খারাপ নাকি? আমি বললাম, একটু, বেশি না। সেদিন বাসায় ফিরে আর সহ্য করতে পারলাম না।
পেট চেপে বিছানায় প্রায় গড়াগড়ি দেয়া শুরু করলাম।
আর তো লুকিয়ে রাখা গেল না। আম্মা বকতে বকতে জোর করে পায়েস খাইয়ে দিলেন। সেদিনই বিকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন, তখন আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারছি না। দুই বোতল এন্টাসিড লিখে দিলেন ডাক্তার।
আরও কিছু ওষুধ দিয়েছলেন, তখন তো আর চিনতাম না ওসব। যতই ওষুধ খাই না কেন, সারাদিন ব্যথায় চিৎকার করি আর বমি করি। মনে মনে নিজেকেই দুষি, শুরুতেই সাবধান হলে আর অবস্থা এত খারাপের দিকে যেত না।
১০-১২ দিন বিছানা ছেড়েই উঠতে পারিনি। এরপর ব্যথাটা একটু কমল।
তাও হাঁটতে গেলেই মনে হয় পেটের ভিতরটা ধরে কেউ টানাটানি করছে। আমার বাইরে যাওয়া একদম বন্ধ। শপিং তো আগেই বাতিল হয়েছে। বড়পা অবশ্য আমার জন্য একটা সুন্দর জামা কিনে এনেছে। জুতা কেনা হয়নি, মাপ ছাড়া কিভাবে কিনবে।
ঈদের দিন একটু হাঁটাহাঁটি করার মত অবস্থায় আসলাম, কিন্তু বাইরে যাওয়ার অনুমতি মিলল না। নতুন জামা পরে আম্মার জুতা পরলাম তুলা ঢুকিয়ে। বাসার সবাই বাইরে চলে গেছে যার যার মত। বড়পা ওর স্বভাবমত ঘুম দিয়েছে। আম্মা রান্নায় ব্যস্ত।
বান্ধবীরা কেউ আসল না এবার। আমি আর কী করব, সাজু গুজু করে একলা একলা আয়নার সামনে ক্যাটওয়াক করলাম কিছুক্ষণ। মনটা যে এত্ত খারাপ হয়ে ছিল সারাটা দিন। কত মজা করব ভেবেছিলাম এই ঈদে, এই ঈদটা ছিল আমার জন্য বিশেষ একটা ঈদ, আমার জন্মদিন ছিল এইদিন। আমিই একটা কুফা, তাই বুঝি এই ঈদটা এমন পচা কাটল।
আরেকটা ঈদ প্রায় এমন কেটেছিল। সেই ঈদে হাঁটাহাঁটিও নিষেধ ছিল। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল ঈদের দুই সপ্তাহ আগে। ফলাফল ঈদের দিনেও পায়ে প্লাস্টার লাগিয়ে বসে থাকলাম। তবে কুরবানির ঈদ ছিল, কুরবানির ঈদের খুব একটা বেড়াই না, তাই মন খারাপও খুব বেশি হয়নি।
আগের কেনা একটা নতুন জামা পরে বসেছিলাম। সারাদিন টিভি দেখেই কাটিয়ে দিলাম। মনটা হয়ত আরও খারাপ থাকত, কিন্তু আমার দুই বান্ধবী এসে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে আমার মন খারাপ হতে দেয়নি। তবে ওরা চলে যাওয়ার পর খুব বোরিং কেটেছে বাকী দিনটা।
এবার ঈদের এক সপ্তাহ আগেই চোখে সমস্যা হয়েছে।
খুব ছোট ব্যাপার, কিন্তু কেন ঈদের আগেই হবে। ব্যথায় চোখের পাতা ফেলতে পারছি না। এক সপ্তাহে সেরে যাবে তো?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।