বাংলাদেশের মানুষকে ফিটনেস, খাদ্যাভ্যাস , শরীর চর্চা এবং সুস্থ্য জীবন যাপন সম্পর্কে সচেতন করাই আমার লক্ষ্য |আমার ব্লগ : http://fitnessbd.com
সামনে আসছে খুশির ঈদ | সবার বাসাতেই কম বেশি ভালো খাবার রান্না বান্না হয় | কারো কারো আবার অনেক অনেক দাওয়াত খাওয়া হয় | অনেকে চিন্তায় থাকেন যে এত শাহী খাবার বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাবে , অসুস্থ্য হবেন ইত্যাদি | ঈদ এর সময় অনেকে লব্মা ছুটি পান, তেমন কোনো কাজ কর্ম থাকে না | তার উপর আবার এত ভালো খাওয়া দাওয়া-- ওজন তো বাড়বেই | কিন্তু আপনি একটু যদি সচেতন হন তাহলে ওজন বাড়বে না এবং সুস্থ্য ও থাকা যাবে | ওজন বাড়ানো যেমন সোজা, ওজন কমানো কিন্তু তার চেয়ে অনেক অনেক কঠিন |এই কঠিন কাজ করার চাইতে একটু সচেতন হয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাই ঠিক নয় কি?
ঈদ এর স্বাস্থ্য টিপস: কি ভাবে খাবেন ?
সারা মাস রোজা রেখে অনেক কষ্ট করেছেন | অনেক সংযম অভ্যাস করেছেন, কম খেয়েছেন | ঈদ এ তাই অবশ্যই খাবেন | বাড়িতে মজার মজার রান্না তো হবেই | কষ্ট করে রান্না করা সেসব মজার খাবার থেকে কেন নিজেকে বঞ্চিত করবেন? কিন্তু খাবেন পরিমিত পরিমানে, ক্যালরি মেপে এবং আপনার শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী | একবারে বেশি খেলে সেটা হজম না হয়ে আপনার শরীরে চর্বি হয়ে জমা হবে | ফলে ওজন বাড়বে | তাই বারে বারে খাবেন, কম ক্যালরি যুক্ত খাবার |
কখনো ই খুব বেশি ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকবেন না | বারে বারে খেলে কম খাওয়া হবে, বেশি ক্ষুধার্ত হয়ে খেলে বেশি খাওয়া হবে |
একবারে বেশি না খেয়ে portion control করুন, একটু ক্ষুধা রেখে খান | তারপর দুই থেকে তিন ঘন্টা পরে আবার খান |
বারে বারে কিন্তু পোলাও কোর্মা খাবেন না | অথবা বেশি গুরুপাক বা শাহী খাবার খাবেন না | যেমন সকালে যদি সাধারণ নাস্তা খান, দুপুরে রিচ ফুড খেলেন অল্প , বিকালে আবার কম খেলেন, যেমন: চা,বিস্কিট, ফল ইত্যাদি | রাতে কিন্তু কম খাবেন, যেমন: ভাতের বদলে রুটি,সবজি বা সবজির সুপ ও মাছ ইত্যাদি | এভাবে খাবার গুলো ব্যালান্স করবেন |
সকালের নাস্তা, সকালে ও বিকালে দুইবেলা হালকা খাবার. দুপুরের খাবার, রাতের খাবার সব ই ঠিক মত খাবেন |
প্রতিদিন রিচ ফুড খাবেন না, ঈদ এর দিন বা তারপর দিন খেলেন, তারপরের দিন না খাওয়াই ভালো |
যদি সুস্থ্য থাকতে চান, তাহলে কোন খাবার টা খাবেন আর কোনটা খাবেন না তা আপনাকেই বেছে নিতে হবে | প্রতিদিন যেহেতু সব গ্রুপের খাবার -- শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, ফ্যাট, মিনারেল , দুধ ইত্যাদি আমাদের দরকার ,তাই খাবার টা সেভাবেই বুঝে শুনে খান |
তেলে ভাজা, বেশি তেল মশলা দিয়ে রান্না করা গুরুপাক খাবার , মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলুন , এতে বদহজম তো হবেই, রোজ রোজ খেলে ওজন বেড়ে, ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে |
কাবাব , গ্রিল করা খাবার , সালাদ, ফল,রুটি ইত্যাদি রাখবেন আপনার খাবারের মেনু তে |সালাদ, ফল, সবজি খেয়ে পেট ভরান |
আপনার বাড়িতে যিনি রান্না করেন, উনাকে বলুন তেলে ভাজা,বেশি তেল ও মশলা যুক্ত খাবার না রাধতে |
দাওয়াতে গেলে বেশি বেশি খাবেন না, একবার নিন, দুই বার নিবেন না| বেশি চাপা চাপি করলে ভদ্র ভাবে না বলুন এবং ভাত জাতীয় খবর কম খান | মিষ্টি খাবার না খেয়ে ফল খেতে পারেন| অল্প পরিমানে মিষ্টি খেতে পারেন | দাওয়াতে গেলে খাবার দিকে মনোযোগ না দিয়ে গল্প করা ও সবার সাথে কুশল বিনিময় করার দিকে মনোযোগ দিন | খেতে খেতে মরে যাব বা খাওয়ার জন্য দাওয়াত এ যাব এই চিন্তা যেন মনে না আসে |
খাওয়ার পরে টক দই খেলে ভালো হজম হয়, বোরহানিও হজমে সহায়ক |
পানীয় হিসাবে কমল পানীয় না খেয়ে ডাবের পানি, বোরহানি, লেবুর শরবত খান |
লেবু চর্বি দূর করার জন্য খুব ই ভালো কাজ করে | সকালে উঠে হালকা গরম পানিতে একটু লেবু চিপে খেলে সারাদিন সেটা আপনাকে চর্বি দূর করতে সাহায্য করবে |
লাগাতার দাওয়াত থাকলে যেই বেলা দাওয়াত থাকবে না সেই বেলা অন্য রকম খান: রুটি, সবজি বা সবজির সুপ,সালাদ, মাছ ইত্যাদি | এতে আপনার খাওয়া দাওয়া র সমতা বজায় থাকবে, বদহজম হবে না |
দাওয়াত এ যাবার আগে বাসা থেকে হালকা খাবার খেয়ে নিন, যেমন: ফল বা সালাদ, পানি| তাহলে আর বেশি খেতে ইচ্ছা করবে না
পর পর অনেক বাসায় বেড়াতে গেলে সব বাসায় এক চামচ করে খান বা খুব অল্প পরিমানে খান | কম ক্যালরি যুক্ত খাবার বা ফল খান |
আরেকটি ভালো উপায় হচ্ছে পানি | পানির অনেক গুন: পানি হজমে সহায়ক, যেকোনো খাবার ই বেশি পানি তে হজম হয়ে যাবে | গুরুপাক খাবার খেলে তাই অনেক অনেক পানি খাবেন, খারাপ লাগবে না | বেশি বেশি পানি আপনা ত্বকের জন্য ও ভালো | ঈদ এর তিন দিন আগে থেকে অনেক পানি খান, ঈদ এর মৌসুমে আপনেক অনেক সজীব দেখাবে | কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি বাড়িয়ে ১২/১৪ গ্লাস করুন | খাওয়ার আগে পানি খেয়ে নিন , দেখবেন আর বেশি খেতে ইচ্ছা করবে না |
রাতে কিন্তু ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ খেতে ভুলবেন না |
ঈদ এর সময় যাতে ওজন না বাড়ে বা সুস্থ্য থাকা যায়, সে জন্য আপনাকেই সচেতন হতে হবে | আপনার স্বাস্থ্য আপনার ই হাতে | নিজেকে বোঝান আপনি কি বেশি খেয়ে ওজন বাড়াবেন? নাকি কম খেয়ে স্লিম, সুস্থ্য থাকবেন |যারা ওজন বাড়াতে চান, তাদের জন্য তো ঈদ মজার সময় | কিন্তু অতিরিক্ত বেশি খেয়ে পেট এর সমস্যা করবেন না | রাসুলুল্লাহ (স) এর শিক্ষা কিন্তু পরিমিত খাওয়া | কিন্তু আমরা কি তা মেনে চলি?
আপনার আর কোনো প্রশ্ন থাকলে জানাবেন | কেমন লাগলো আমার এই লেখা তাও জানাতে ভুলবেন না |
আগামী প্রকাশনা : ঈদ এর শরীরচর্চা
Image by: karenandbrademerson Click This Link
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।