এক বন্ধুকে সেদিন রুদ্র’র কবিতা সম্পর্কে বলছিলাম, সে আমাকে প্রশ্ন করলো ‘রুদ্র কে?’ প্রশ্নটা শুনে খুবই অবাক এবং লজ্জ্বিত হলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই আবার সে, কি একটা ভেবে বললো ‘ওওওওও...তসলিমা’র হাজব্যান্ড রুদ্র?’ এবার খুব বিরক্ত হলাম। রুদ্র প্রসঙ্গ এলেই অধিকাংশ মানুষ তার এই পরিচয়টি তুলে ধরে, অথচ রুদ্র যে একটি আলাদা সত্তা এবং তার লেখায় যে তিনি অনন্য তা অনেকেরই অজানা। অবাক হই যখন দেখি এমন অনেক মানুষ আছে যারা রুদ্র’র কবিতা সম্পর্কে জানে না কিংবা রুদ্র’র কবিতা পড়ে থাকলেও সে সব কবিতা যে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র তা তাদের জানা নেই। এই ঘটনা খুব পীড়া দিচ্ছে ইদানিং, তাই ইচ্ছে আছে রুদ্র’র রচনাবলী থেকে একটা করে কবিতা শেয়ার করবো সবার জন্য।
আজ থাকছে রুদ্র’র অনেক জনপ্রিয় একটি কবিতা ‘অভিমানের খেয়া’...
‘অভিমানের খেয়া’
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
এতোদিন কিছু একা থেকে শুধু খেলেছি একাই,
পরাজিত প্রেম তনুর তিমিরে হেনেছে আঘাত
পারিজাতহীন কঠিন পাথরে।
প্রাপ্য পাইনি করাল দুপুরে,
নির্মম ক্লেদে মাথা রেখে রাত কেটেছে প্রহর বেলা__
এই খেলা আর কতোকাল আর কতোটা জীবন!
কিছুটাতো চাই__হোক ভুল, হোক মিথ্যে প্রবোধ,
আভিলাষী মন চন্দ্রে না-পাক জোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই,
কিছুটাতো চাই, কিছুটাতো চাই।
আরো কিছুদিন, আরো কিছুদিন__আর কতোদিন?
ভাষাহীন তরু বিশ্বাসী ছায়া কতোটা বিলাবে?
কতো আর এই রক্ত-তিলকে তপ্ত প্রনাম!
জীবনের কাছে জন্ম কি তবে প্রতারনাময়?
এতো ক্ষয়, এতো ভুল জ’মে ওঠে বুকের বুননে,
এই আঁখি জানে, পাখিরাও জানে কতোটা ক্ষরন
কতোটা দ্বিধায় সন্ত্রাসে ফুল ফোটে না শাখায়।
তুমি জানো না__আমি তো জানি,
কতোটা গ্লানিতে এতো কথা নিয়ে এতো গান, এতো হাসি নিয়ে বুকে
নিশ্চুপ হয়ে থাকি
বেদনার পায়ে চুমু খেয়ে বলি এইতো জীবন,
এইতো মাধুরী, এইতো অধর ছুঁয়েছে সুখের সুতনু সুনীল রাত!
তুমি জানো নাই__আমি তো জানি।
মাটি খুঁড়ে কারা শস্য তুলেছে,
মাংশের ঘরে আগুন পুষেছে,
যারা কোনোদিন আকাশ চায়নি নীলিমা চেয়েছে শুধু,
করতলে তারা ধ’রে আছে আজ বিশ্বাসী হাতিয়ার।
পরাজয় এসে কন্ঠ ছুঁয়েছে লেলিহান শিখা,
চিতার চাবুক মর্মে হেনেছো মোহন ঘাতক।
তবুতো পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে মুখর হৃদয়,
পুষ্পের প্রতি প্রসারিত এই তীব্র শোভন বাহু।
বৈশাখি মেঘ ঢেকেছে আকাশ,
পালকের পাখি নীড়ে ফিরে যায়
ভাষাহীন এই নির্বাক চোখ আর কতোদিন?
নীল অভিমান পুড়ে একা আর কতোটা জীবন?
কতোটা জীবন!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।