ভাল আছি
চাঁদের পালকি চড়ে সবার ঘরে ঘরে আসল খুশির ঈদ
বলো ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক ঈদ ।
ঈদ শৈশবে, কৈশরে ,যৌবনে নাকি বার্ধক্যে বেশি আনন্দের এই বিতর্কে যাবার আগে ঈদের দিনের কিছু রোমাঞ্চকর স্মৃতি বর্নণা করে নিই।
ছোটোবেলায় সাধারনত নানির বাড়িতেই ঈদ করতাম। একবার এক ঈদের দিনে বান্ধবি লিজা, লিসা আর শিমুল এর সাথে বেড়াতে গিয়েছিলাম শিমুলের ফুপুর বাসায়। হঠাৎ যাবার সিদ্ধান্ত নেয়ায় বাসায় কাউকে জানানো হয়নি।
আর কিছুক্ষন পড়েই তো ফিরে আসব তখন এসে বললেই হবে এই ভেবে রাজি হয়ে গেলাম। লিজা লিসার বড় ভাই রিক্সা করে দিল। আমরা রওনা দিলাম কলেজপাড়ায় শিমুলের ফুপুর বাসার উদ্যেশ্যে। আমার নানীর বাড়ি ঠাকুরগাঁও নরেশ চৌহান সড়কে। সেখান থেকে কলেজপাড়া বেশ খানিকটা দুরেই।
টাঙ্গন নদীর ব্রীজ পাড় হয়ে যেতে হয়। বাসা খুঁজে পেতে তেমন একটা সমস্যা হলনা। শিমুলের ফুপুর বাসায় হাল্কা কিছু নাস্তা করার পরই শুরু হল সমস্যা। ফুপু বললেন দুপুরে খেয়ে বিকেলে যেতে। শিমুল সাথে সাথেই রাজি।
লিজা লিসার ও খুব একটা আপত্তি ছিলনা। বড়ভাই তো জানেই ওরা এখানে এসেছে। কিন্তু সমস্যা হল আমার, আমি তো বাসায় বলে যাইনি। কিন্তু আমার কথা কেউ পাত্তা দিচ্ছেনা। আমাদের পাঠানো হল ফার্ম হাউস দেখতে।
অনেক বড় এলাকা জুড়ে ফার্ম। আম বাগানের মাঝ দিয়ে রাস্তা। কিছুই আমার ভালো লাগছেনা বাসায় যাবার চিন্তায়। ফার্ম থেকে ফিরে দেখি তখনও রান্না শেষ হয়নি। ওরা সবাই খুব আগ্রহের সাথে নখে নেইল পলিশ লাগাতে শুরু করে দিল।
ঈদের দিনে এক মুহুর্তের আনন্দও যেন মিস না হয়। আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে, বাসায় গেলে আম্মু অনেক বকা দিবে। দুপুরের খাবার শেষে সবাই যখন শুয়ে গান শোনার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন আমার প্রায় কান্না পায় পায় অবস্থা। অনেকটা রাগারাগিই করে ফেললাম। ফুপু সব বুঝতে পেরে রিক্সা ডেকে আমাদের আসার ব্যবস্থা করে দিলেন।
চৌরাস্তা দিয়ে যখন আসছি শুনি মাইকে বলছে " একটি ছোট্ট মেয়ে হারিয়ে গিয়েছে........। আমার প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাবার জোগার। মাইকের রিক্সার পিছনের রিক্সায় দেখি বাবা। আমাকে দেখেই বাবা রিক্সা থামিয়ে নিজের রিক্সায় উঠিয়ে নিলেন। কোনো বকা দিলেননা।
বাসায় ফিরে দেখি আম্মু ও নানী কাঁদছে। সবাই আমাকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন। কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। অনেক রাতে যখন ঘুম থেকে উঠলাম তখন মনে হল রাতের খাবার লিজা লিসাদের বাসায় খাবার কথা ছিল,খাওয়া হয়নি। এই অপরাধে ওরা জীবনে আর কখনোই আমার সাথে কথা বলেনি।
একবার রোকেয়া হলে ঈদ করেছিলাম। নতুন নতুন চাকরিতে জয়েন করে ছুটি ম্যানেজ করতে পারিনি। অবশেষে কি আর করা,রোকেয়া হলের নিউ বিল্ডিংয়ে ঈদ উদ্যাপন- আমি, বহ্নি আর কল্যাণী ( নারগিসের পোষা বানর ) । সারাদিন অফিস করে বিকেলে হলে ফিরে দেখি সিঁড়ির সামনে বহ্ণি লম্বা শিকল দিয়ে বানর বেঁধে রেখেছে। শিকল লম্বা থাকায় অনেকদুর পর্যন্ত তার দখলে, আমি তো কিছুতেই রুমে যেতে পারছিনা।
অনেকক্ষন অপেক্ষা করে বহ্ণিকে ফোন করলাম। ও এসে আমাকে উদ্ধার করল এবং জানাল আমি কখন ফিরলাম এটা টের পাওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা। শিমুর বাসা থেকে খাবার পাঠিয়েছে, আমি ফিরলে একসাথে খাবে বলে কল্যাণীকে পাহারা রেখেছিল। প্রায় দুই হাজার ছাত্রীর আবাসস্থল এই হলে আমরা হাতে গোনা দশ বারোজন মেয়ে। টিভি রুম ফাঁকা।
ডাইনিং বন্ধ। রুমগুলো সব অন্ধকার মনে হত যেন প্রেতপূরীর বাসিন্দা আমরা কজনা।
ঈদে শিশু আর বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি উপহার পায়। আমার মেয়েদের ঈদের জামা এখনও গুনে দেখার সময় পাইনি। নানীর শাড়ি কিনতে যেয়ে ভাবলাম কি রংয়ের কিনবো একটু জিজ্ঞাসা করি।
এখন দেখি উনার উপযোগি যেসব রং আছে তার প্রায় সব রংয়ের শাড়ি অলরেডি গিফ্ট পেয়ে গিয়েছেন। অবশেষে নীল পাড়ের সাদা একটা শাড়ি ভালো লাগলো, তাই কিনে ফেললাম। মাঝে মাঝে মনে হয় আবার যদি ছোটো হয়ে যেতে পারতাম!!! ম্যাচিং করে জামা- জুতো -ক্লিপ, ঈদের সেলামি। খুব মিস করি । ঈদের জামা হতে হবে সবার চেয়ে সুন্দর।
জামা লুকিয়ে রাখতাম সযত্নে যেন কেউ দেখে না ফেলে। তখন মনে হত কেউ দেখে ফেললেই পুরোনো হয়ে যাবে,তখন সব আনন্দ মাটি হয়ে যাবে ।
ছোটোবেলার ঈদে ভালোলাগার আর একটা কারন হচ্ছে চোখের জলে ভাসিয়ে পেয়াজ কাটতে হয়না, হাত পুড়িয়ে ঈদের রান্না করতে হয়না, কাঁচের বাটি ভেঙে খাবার সার্ভ করতে হয়না, সারাদিন কাজ করতে করতে ঈদের সবচেয়ে আকর্ষনীয় পোষাকটা আলমারিতেই থেকে গেল বলে রাতে ঘুমাতে যাবার সময় দুঃখ করতে হয়না।
যা হোক যৌবনে দাঁড়িয়ে মনে হয় শৈশবের ঈদেই যত আনন্দ। হয়ত একদিন বার্ধক্যের দোরগোঁড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হবে এই ঈদ গুলোও মন্দ ছিলনা।
তখন আবার এসময়ের ঈদের মধুর অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখব আশা করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।