http://nishomerbanglablog.blogspot.com/
উজ্জলের সাথে আমার পরিচয় ক্লাস ১ এ।
কিন্ডারগার্ডেন থেকে কেজিতে পড়ে , সেন্ট্রাল স্কুলে ভর্তি হলাম। তখন , সেন্ট্রাল ( মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়) স্কুলের ক্লাস ১-৩ পর্যন্ত ক্লাস হতো প্রাইমারী যে বিল্ডিংটা আছে, ( বর্তমানে ললীতকলা একাডেমী) ওইখানে। তো , প্রথম প্রথম স্কুলে আমি খুব্বি ভয়ে ভয়ে থাকতাম। কিন্ডারগার্ডেনের সেই আদর , মধুর কথা-বার্তা এখানে নাই।
দিলখুশ আপার জালী বেতের বাড়ি আজো মনে পরলে পিত্তি গলে যায়। পরে, স্কুল পাশ করার পরে শুঞ্ছিলাম , দিলখুশ ম্যাডাম নাকি আমাদের ফ্রেন্ডের আপন খালা :@ । মোদ্দা কথা, সরকারী স্কুলে প্রথম প্রথম আমার দিন-কাল সুখকর ছিলোনা।
তো , ক্লাস ১-৩ পর্যন্ত উজ্জ্বল আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড ছিলো। খুব গল্পবাজ ছিলো।
বেশীরভাগ সময়ই গল্পটা হইতো উজ্জলের বাবা'র কি আছে না আছে, এইসব নিয়ে। ওদের যে নিজেদের ৩টা বাড়ি আর সেই বাড়ির ভিতরে গেলে যে আমার মাথা চক্কর দিয়ে ফীট হয়ে যাবো , এই ব্যাপারে উজ্জ্বল খুব্বি সতর্ক ছিলো ! তাই কখনোই ওর বাসায় যাইনি।
আমার ১টা হিস্টোরী বলি। , ক্লাস ১-১০ পর্যন্ত জীবনে আমার শুধু ১দিন বাসা থেকে টিফিন মিস গেসিলো। আর আমার টিফিন ছিলো নুডলস , পোলাও ( এখন দেয়না) , পাস্তা।
তখন সেই পর্যায়ের স্বাস্থ্য ছিলো বিধায়, খাবার চাহিদাও ছিলো ব্যাপক ! তো , উজ্জ্বল বরাবরের মতোই ওর বাড়ির গল্প করতো আর আমার টিফিন গপাগপ সাবার করতো। এই ৩ বছরে আমি মনে হয় আমার টিফিন চেখেও দেখতে পারিনাই।
১দিন আমাকে উজ্জ্বল বলে , " দোস্ত, আমার প্রচন্ড পাতলা পায়খানা। আজকে আম্মা টাকা দেয়নাই। তুই টিফিন আঞ্ছিস না? আমারে দিস তো !" ।
আমি খুব অবাক হইসিলাম, কারন পাতলা পায়খানার জন্য লাগবে স্যালাইন ! পোলাও খাইলে তো আরো ইয়ে হয়ে যাবে ! কিন্তু, ওর ব্যাকুল আবেদন আমি ফালাইতে পারিনি।
আমার বড়খালার বাসা গোড়ান। ক্লাস ৪ এর প্রথম সাময়ীক পরীক্ষার পর, খালার বাসায় বেরাইতে গিয়েছিলাম। তখন রাস্তায় উজ্জলের সাথে দেখা। ওকে দেখলাম, আমাকে দেখে রাস্তায় দৌরাইতেসে !! খুব অবাক হলাম !!! খালা আমাকে বল্লো " তুমি ওই ছেলেটাকে চেনো ?" ।
বললাম " আমার সাথে পড়ে, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড" ( ফ্রেন্ডই তো ১তা, বেস্ট আ হয়ে উপায় আসে ওই বয়সে?)
এরপর খলা যা বললো, শুধু অবাক হলাম শুনে ! উজ্জলের বাবা ১ জন সিএনজি চালক। সিএনজি গ্যারেজেই ওদের বাসা। আমি খালাকে বলতেও পারলাম না উজ্জ্বল আমাকে কি বলেছে ওর সম্পর্কে ! আমি কোনোদিন ওর বাবা , ওর বাসা সম্পর্কে কিচ্ছুই জিজ্ঞাসা করিনি। কিন্তু, ৭-৯ বছরের বয়সের ১টা বাচ্চার এরকম মিত্থ্যা কথার কারণ কি?
আদৌ কি সেগুলো মিত্থ্যা? নাকি এগুলোকেই বলে ফ্যান্টাসি ? নিজেকে সবার মাঝে থেকে হারিয়ে যেতে না দেবার জন্যই তো এই মিত্থ্যে ! খুব ছোটো বয়সেই উজ্জ্বল বুঝতে পেরেছিলো সমাজের সংকীর্ণতাকে , সমাজের গড়ে উঠা নিষ্ঠুর ,নিকৃষ্ট বর্বরতাকে।
উজ্জ্বল এখন ছাত্রলীগের একজন সদস্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।