আমরা চঞ্চল আমরা অদ্ভুত, আমরা নতুন যৌবনের দূত— সংস্কৃতি অঙ্গনের অভিনয়ে, গানে, মডেলিংয়ে আমরা পেয়েছি নতুন কিছু তরুণ মুখ। সময়টা এখন তাঁদের। তেমনি পাঁচজন—সজল, মীম, সারিকা, শখ ও হৃদয় খানকে নিয়ে এই আয়োজন।
মৌখিক পরীক্ষা কেমন হলো? ‘কয়েকটার উত্তর দিতে পেরেছি, কয়েকটার উত্তর পারি নাই। ’
কোনো রকম ভনিতা না করেই ঝটপট বললেন মীম।
কিছুক্ষণ আগে তিনি প্রথম আলোর কার্যালয়ে এসেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানে তাঁর মৌখিক পরীক্ষা ছিল।
তাঁর কথা শুনে সচল হলেন সারিকা, ‘কাজের ব্যস্ততার কারণে আসলে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন। তাই পড়াশোনায় শতভাগ সফল হওয়াও কঠিন। আমার কথাই ধরুন।
দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত পাল্টালাম। ইচ্ছা ছিল, আমি পাইলট হব। হয়তো সেই চেষ্টাটা করব। তবে এখন আছি কাজ নিয়ে।
ভালোই তো লাগছে। সকাল-বিকেল কাজ করছি। আজ এখানে তো কাল অন্যখানে। মানুষ আমাকে চেনে, অটোগ্রাফ নিতে আসছে—অন্য রকম এক মজার মধ্যে আছি আমি। ’
এমন সময় উপস্থিত হলেন সজল।
তাঁর পরনে কালো পোশাক। সারিকা জানতে চাইলেন, ‘কী ব্যাপার, আজকে কোনো শোকের দিন নাকি? কালো পোশাকে কেন?’
মীমের মনেও কৌতূহল, ‘কী ব্যাপার, দাদা?’
সজল হাসলেন। ‘আরে নাহ্। শুটিং থেকে এসেছি। শুটিংয়ের পোশাক ছিল এ রকম।
ভাবলাম, সময় নাই, তাড়াতাড়ি চলে যাই। তাই এই পোশাকে চলে আসতে হয়েছে। ’
শখ ও হূদয় খান তখনো এসে পৌঁছাননি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানা গেল, হূদয় উত্তরায় যানজটে আটকা পড়েছেন, আর শখ বাসা থেকে বেরোচ্ছেন।
সারিকা, মীম ও সজল—তিনজনের কাছে ঈদের কাজ সম্পর্কে জানতে চাই।
জানা গেল, সারিকা ও মীম এরই মধ্যে সজলের সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন। জানা গেল, ঈদের আগে
৪০টির বেশি নাটকে কাজ করেছেন সজল। এত নাটকে কীভাবে কাজ করলেন তিনি?
‘আসলে আমি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করি না। চার মাস ধরে এক পর্বের নাটকেই অভিনয় করছি। মীম, সারিকা ছাড়াও তিশা, বিন্দু, বাঁধন—এদের সঙ্গেও অনেক নাটকে কাজ করেছি।
’ বলছিলেন সজল।
সারিকা ঈদের জন্য ১০টিরও বেশি নাটকে কাজ করেছেন। সংখ্যায় সজলের চেয়ে কম হলেও সারিকা কিন্তু মনে করেন এই সংখ্যাটিই তাঁর কাছে বিশাল কিছু। ‘আসলে আমার যাত্রা শুরু মডেল হিসেবে। নাটকে আসার পর এবারই প্রথম ঈদ পাচ্ছি।
আর প্রথম ঈদেই ১০টি নাটক নিয়ে পর্দায় আসাটা তো আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। ’ বললেন সারিকা।
বাছাই করে কাজ করবেন—এমন চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত মীমও করেছেন ১০টির মতো নাটক। এর বাইরে আরও কিছু কাজ করেছেন। সেগুলো ঈদে প্রচারিত হবে কি না, তা নিশ্চিত নন তিনি।
‘আসলে আমার কাজগুলো বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও বিটিভির জন্য করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নাটক আছে, যেগুলোতে কাজ করার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। যেমন, লঞ্চবালা-১ নাটকে কাজ করতে আমরা সদরঘাট থেকে লঞ্চে বরিশালে চলে গেলাম। পুরোটা রাস্তা শুটিং করলাম। আর এর যে কী সুখস্মৃতি, উফ্, বলে শেষ করা যাবে না!’ বলছিলেন মীম।
সারিকা তাঁর নাটকে অভিনয়ের স্মৃতি বলতে গিয়ে হেসেই খুন। সজল নিজে থেকে বিষয়টি বলতে শুরু করলেন, ‘নাটকের নাম তৈলাক্ত বাঁশ। ছোটবেলায় আমরা যেমন পাটিগণিতের অঙ্ক করতাম, একটি তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে বানর ওঠে, তেমনি এ নাটকে আমাকে একটি তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠতে হয়েছিল। লুঙ্গিটা কাছা মেরে আমি যখন ওই দৃশ্যে অভিনয় করতে গেলাম, তখন এরা কী যে হাসাহাসি শুরু করল! এভাবে কি আর অভিনয়ের এক্সপ্রেশন থাকে। তার পরও ওই অবস্থায় কোনোভাবে কাজটা শেষ করেছি।
’
সজলের আলাপচারিতার মধ্যেই শখ চলে এলেন। কথা প্রসঙ্গে শখ বললেন, ‘কেন জানি না, সজল ভাইয়ার সঙ্গে এবারের ঈদে আমার কোনো কাজই করা হয়নি। ’
সজল বললেন, ‘আগামী ঈদে হয়তো করা হবে। ’
এবারের ঈদে শখ অভিনয় করেছেন সাতটি নাটকে। এর মধ্যে ব্রেকাআপ নাটক নিয়ে তো বেশ হুলস্থুল কাণ্ড ঘটে গেছে।
খবরের কাগজে সংবাদ এসেছে, শখের ব্রেকাপ। এ নিয়ে অনেকেই শখকে ফোন করেছেন, জানতে চেয়েছেন কার সঙ্গে কখন কীভাবে হলো ইত্যাদি। ‘আমি অবশ্য বিরক্ত হই না। ভালোই লাগে, যখন দেখি, আমার কাজ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ’ বলছিলেন শখ।
হূদয় মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন, তিনি পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মধ্যেই চলে আসবেন।
সবার কাছে জানতে চাওয়া হলো, ‘সবাই তো তরুণ। তো, আপনারা কি তরুণদের গান শোনেন?’
উত্তর মিলল, তাঁরা তরুণদের গান শোনেন। আর এ তালিকায় যে দুজন পছন্দের শীর্ষে আছেন, তাঁদের মধ্যে অবশ্যই হূদয় একজন। কেউ জানালেন, হূদয়ের ‘নিবু নিবু’ গানটি শুনে তাঁর ফ্যান হয়েছেন।
আবার কেউ বলেছেন, ‘চাই না মেয়ে’ গানটা অসাধারণ।
এরই মধ্যে হূদয়ের আগমন। সারিকার মুঠোফোনটা বেজেই চলেছে। তাঁর জন্য নাকি সবাই বসে আছে। তাই তাড়াতাড়ি তাঁদের ছবিটা তুলতে হবে।
শুরু হলো ছবি তোলার পালা। এ সময় জানা গেল, হূদয়ের কাছে নাকি একটি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছে। তাই প্রশ্ন ছিল, ‘হূদয়, তুমি নাকি অভিনয় করতে যাচ্ছ? নায়িকা হিসেবে এখান থেকে কাউকে বেছে নেবে নাকি?’
শখ, সারিকা ও মীম—তিনজনেরই দৃষ্টি হূদয়ের দিকে। আর তাতে হূদয় একটু নার্ভাস। তিনি বললেন, ‘আমার জন্য অনেক কঠিন কাজ।
আচ্ছা, ভেবে জানাব। ’
ছবি তোলার পালা শেষ হতেই জানা গেল, পরিচালক অনন্য মামুন হূদয়কে নিয়ে একটি প্রেমের ছবি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন। হূদয় আধা সাড়া দিয়েছেন। সঙ্গে এটাও জানালেন, ওই ছবির জন্য তাঁর বিপরীতে নায়িকা হিসেবে পরিচালকের প্রথম পছন্দ সারিকা।
হূদয় বললেন, ‘সারিকা তো আমার পরিচিত।
নায়িকা হলে ভালোই হবে। তবে আমি বলেছি, যদি সবকিছু ভালোভাবে নির্মাণ করা যায়, তবেই কাজটা আমি করব। ’
হূদয় যখন ছোটবেলায় চাচার (চিত্রগ্রাহক রিঙ্কন) সঙ্গে শুটিং দেখতে আসতেন, তখন দেখতেন সজল বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করছেন। সেই থেকে সজলকে চেনেন তিনি। মীম তো তাঁর প্রথম গান ‘চাই না মেয়ে’তে অভিনয় করেছেন।
সেই সূত্রে পরিচয়। শখকে চেনেন আরও আগে থেকে। একসঙ্গে মঞ্চে কাজও করেছেন। এ জন্য মিডিয়াতে কাজ করতে তাঁর খুব একটা সমস্যা যে হবে না, সেটিও বললেন তিনি।
ঈদে হূদয়ের নতুন অ্যালবাম আসছে না।
তবে ঈদুল আজহার জন্য কাজ করছেন তিনি। বললেন, ‘আমার একক অ্যালবাম বের করা হবে। আমি এখন সেটির কাজ করছি। আসলে আমি চাই নিজের একক অ্যালবামের পাশাপাশি অন্যদের নিয়েও কাজ করতে। এর আগে যেমন হূদয় মিক্স টুতে অন্য শিল্পীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গানে সুর সংযোজন করেছি, তেমনি আগামী দিনে আইয়ুব বাচ্চু, তপন চৌধুরী, সুবীর নন্দী—তাঁদের নিয়ে কাজ করব।
’
এ কাজগুলো করার পেছনে হূদয়ের একটা উদ্দেশ্যও আছে। হূদয় চান বাংলা গানকে প্রতিটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। এ জন্য তিনি নীরবে-নিভৃতে কাজ করে চলেছেন।
পাঁচজনের কাছেই প্রশ্ন ছিল, ‘আপনারা তো সবাই তরুণ। এখন চারদিকে তরুণেরাই ভালো করছেন।
বিনোদনের অঙ্গনে তরুণেরা কি সফল হচ্ছেন?’
সারিকা একবাক্যে বলে দিলেন, ‘বিনোদন অঙ্গনের যতগুলো মাধ্যম আছে, সেখানে তো তরুণেরাই এখন সফল। আমার তো মনে হয়, দর্শকও তরুণদের আগমনটা স্বাগত জানাচ্ছে। ’
প্রশ্ন করি, ‘আপনাদের পূর্বসূরিরা যেভাবে কাজটা শুরু করেছিলেন এবং এই অঙ্গনকে একটা জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন, আপনারা কি সেদিক থেকে এগিয়ে, নাকি পিছিয়ে?’
শখ বললেন, ‘আসলে আমরা যে সময়টা এখন পার করছি, তা হচ্ছে তীব্র প্রতিযোগিতার। আগে এতটা প্রতিযোগিতা হতো না। তার পরও কিন্তু আমরা অনেক বেশি কাজ করছি এবং ভালো কাজ উপহার দিচ্ছি।
’ অন্যরাও শখের সঙ্গে একমত বলে জানালেন।
জানতে চাইলাম, ‘আপনারা কেউ অভিনয়শিল্পী, কেউ মডেল, কেউ সংগীতশিল্পী। তার পরও আপনারা অনেক মাধ্যমেই কাজ করছেন। কিন্তু আপনাদের আসল পরিচয় কোনটা?’ হূদয় বাদে সবার উত্তর—তাঁরা অভিনয়শিল্পী। হূদয় বললেন, তিনি একজন সংগীতপ্রেমী মানুষ।
বিকেল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে। সোডিয়াম বাতির আলো জ্বলে উঠেছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। পাঁচ তারকা ছুটলেন যাঁর যাঁর গন্তব্যে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।