বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে মার্চ মাসের এই সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করা হয়। এই হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৮ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।
ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ দশমিক ০৩ শতাংশের সমান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১৭ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।
বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে এর পরিমাণ ৭ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা।
মার্চ মাস শেষে দেশের ব্যাংক খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণই সবচেয়ে বেশি। মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকাধীন সোনালী, রূপালী, অগ্রনী ও জনতা এই চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা, যা এ ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ২৭ দশমিক শূণ্য ৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ ছিল ২৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ বা ২১ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতেও মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, যা এ ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ২৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।
ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে এ খাতের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল ২৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ বা ৭ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। যা এ ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ বা ১৩ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।
এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৮ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের চার দশমিক ৯০ শতাংশ।
ডিসেম্বরে যা ছিল ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ বা ৮৪৫ কোটি টাকা।
প্রধানত তিন কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে বলে মনে করছেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির কারণে অভ্যন্তরীণ বিল সময়মত পরিশোধ না হওয়ায় বেশ কিছু ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে।
একইসঙ্গে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে তাতেও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ”
অনেক ব্যাংক এখন ঋণ বিতরণে সতর্ক; আর এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান চলতি মূলধনের অভাবে আগের নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না বলেও মনে করেন সোনালী ব্যাংকের এই পরিচালক।
এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরনের নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকে দেশের খেলাপি ঋণ বাড়তে শুরু করে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর করা শুরু হওয়ার পরপরই খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়।
গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিলো ২১ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।