আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চা-বন্দনা



আমি চায়ের ভালো-মন্দ কিছুই বুঝি না, লাল রংটাই বুঝি। চায়ের কাপের উপর ছন্দময়ী বাষ্পীয় তরঙ্গের লীলায়িত দৃশ্য দেখে কবিকুল নাকি শিহরিত হন। আমার বেলায় তা ঘটে না। বরং চা বেশি গরম থাকলে চেঁচিয়ে বলি : 'লুৎফা, ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে যাও তো। ' হিমালয় ডিঙ্গিয়ে তিব্বতী পাসপোর্টে চা শব্দটি ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছে।

চীনে শব্দটি হচ্ছে 'তে', 'তা' ও 'চা'। আমরা চা নামেই চা-কে চিনি। ইংলিশভাষীয়া অনেকদিন 'টে' বলতো। পরে 'টী' বলতে শিখে জাতে উঠেছে। ফরাসি ও জার্মানরাও এটাকে চেনে 'টে' নামেই।

ধারণা করা হয়, শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করই প্রথম বাঙ্গালি হিসেবে চায়ের স্বাদ পেয়েছিলেন। আমি হলপ করে বলতে পারি, ওই ব্যাটা চায়ের সাথে দুধ চেখে দেখতে পারেনি। লাল চা-ই তাকে গিলতে হয়েছিল। দেখুন না, এখনও বাঙ্গালির জিভ চা নামের রক্তাক্ত তরলটি গিলতে পারে না। এর সাথে যোগ করে দুধ এবং চিনি।

প্রথম দিকে চা ছিল সাধু-সন্তদের পানীয়। পরে ভদ্রলোকরা চা-বন্দনায় মেতে ওঠে। জানা যায়, কাজের বুয়া চুরি করে চা খাবে বলে ইংলিশ গৃহিণীরা এক সময় চায়ের জন্য বিশেষ আলমারি ও তালাচাবির ব্যবস্থা করতো। আমরা চা খাচ্ছি। দেড়শো বছর আগেও এ অভ্যাসটি আমাদের ছিল না।

১৯১২ সালে কবি প্রিয়ংবদা দেবী প্রথম চা-বন্দনা লেখেন : 'শুকান চায়ের পাতা কে জানিত তায়, সবুজ ফাগুন ছিল ভরা কবিতায়। ' পরে চা-প্রেমে হাবুডুবু খান নৃপেন্দ্র কুমার বসু। চা-খোর এ কবি লিখেন : 'কৃষ্ণবর্ণা শুষ্কপর্ণা/ চিত্তহারিনী ললনা/কেমনে অধীনে প্রণয়ের ডোরে/বাঁধিয়াছ বলনা?হেম ফেলে তব প্রেমসুধা চাই/নধর কাপেতে অধর ডুবাই/বিরহেতে তোর প্রাণে মরে যাই'। মুলুকরাজ আনন্দ চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে বিখ্যাত হিন্দি উপন্যাস লিখেছিলেন। পরে এটির বাংলায় অনূদিত হয় 'দুটি পাতা একটি কুঁড়ি' শিরোনামে।

বর্তমানে সরকারিভাবে চা-বন্দনা নেই। সর্বশেষ পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে তা দেখা গিয়েছিল। প্রতিটি রেলস্টেশনে ছিল চায়ের প্রশস্তিমূলক সাইনবোর্ড। ধূমায়িত চায়ের কাপ হাতে এক মহিলা। চায়ের উপকারিতার এক ফর্দ বয়ান।

আর নিচে সুন্দর করে লিখা থাকতো : 'চা পানে নাহি মাদকতা দোষ, চা পানে করে চিত্ত পরিতোষ। '

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।