গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।
ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী শান্তা। বিয়ের ৪১ দিনের মাথায় যৌতুক নামক যুগ-যুগান্তরের প্রাগৈতিহাসিক ভোতা অস্ত্রের শিকার হয়ে প্রাণ দিল। ঘটনার নেপথ্য নায়ক শান্তার স্বামী, শ্বশুড়, শ্বাশুড়ি ও ননদ। সেই চির পরিচিত সভ্য সমাজের বিকৃত মুখগুলো।
সত্যি ভাবতে অবাক লাগে। এ কোন যুগে বাস করছি আমরা! দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে অধ্যয়নকারী একটি মেয়ে, হাতের মেহদীর আলপনা মুছে যেতে না যেতেই শ্বশুড় বাড়ির লোকদের নির্যাতনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। খবরে প্রকাশ শান্তার শরীরে ছিল অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন। একটি পা ছিল ভাঙা, মেরুদন্ডও বাঁকা। অর্থাৎ মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের সমস্ত চিহ্ন শরীরে ধারণ করে আলো ঝলমল এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে শান্তা।
বিয়ে-স্বামী-সংসার -----একজন নারীর রোমান্টিক ভাবনার এই সব কিছুই হার মেনেছে যৌতুক নামক সেই প্রাগৈতিহাসিক অস্ত্রের কাছে।
ধিক্ আমাদের এই শিক্ষিত সমাজকে। তার চেয়েও শত ধিক সভ্যতার বড়াই করা এই সমাজের নীতি নির্ধারণী শক্তিগুলোকে। শান্তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আজ উলংগভাবে একটি সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়েছে যে, যৌতুক, নির্যাতন, শ্বশুড়বাড়ি----সমাজের এই ভোতা অস্ত্রগুলোর সামনে কত অসহায় আজকের সমাজ-সভ্যতা, নারী উন্নয়ন তথা নারী স্বাধীনতা নামক প্রত্যয়গুলো! ইডেনের ছাত্রী শান্তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেলো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও, সমাজ তথা দেশ শাসনের মতো অবস্থানে গিয়েও আমরা নারীরা কতটা অসহায়! সভ্যতার চরম এই উৎকর্ষতার যুগে নিজেদেরকে আমরা যে অবস্থানেই নিয়ে যাই না কেন মধ্যযুগীয় সেই অপশাসনের বেড়াজাল থেকে নিজেদেরকে এখনও বের করে আনতে পারিনি আমরা। এর জন্য দায়ী শুধু এই পুরুষ শাসিত সমাজ নয়, দায়ী নারীরাও।
কাজেই আজকে নারী স্বাধীনতার কথা যতটা উচ্চারিত হয় ঠিক ততটাই উচ্চারিত হওয়া উচিত নারী নির্যাতনকারী ও নারী নির্যাতনে মদদ দানকারী নারীদের কথা। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে নারীমুক্তি ও নারী স্বাধীনতা কখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।