লাগামহীন ব্লগ, সাবধান!!!!
রিফাতের আজ খুব আনন্দ হচ্ছে। কারন আজ সে তা বাবার সাথে শপিং যাচ্ছে। বাবাকে সে কাছেই পায়না। সা্রাদিন ব্যাবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর মা ঘুরে বেড়ায় শপিং মলে।
তার সকালটা কাটে স্কুলে, ঢাকার নামকরা এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে স্টান্ডার্ড ওয়ানে পড়ে সে। দুপুরে কম্পিটার গেমসে মাতে আর সন্ধায় টিউটরের কাছে পড়ে। মা বাবার সাথে ঘুরার সময় কোথায়? ঈদ উপলক্ষে বাবা মা তাকে নিয়ে এসেছে বিশাল একটা শপিং মলে। নাহ সে বিশাল শপিং মল দেখে অবাক হয় না। কারন তার বাসাটাই বিশাল।
তার বেড়ে উঠাও বিশালতার ভেতরেই। রিফাতের বাবা তাকে কত টাকার জামা কিনে দেয় বা কোন ফাস্টফুডে বার্গার খাওয়ালো তা আমার পক্ষে লেখা সম্ভব হলোনা। আমার সুযোগ হয়নি এই বিশালতা উপভোগ করার। তবে আন্দাজ করি আসেন। তার বাবা তাকে কিনে দিয়েছে এমন কিছু যার দাম কোন পরিবারের সারা মাসের আয়ের সমান।
কারোবা কয়েক মাসের আয়ের সমান। এমনকি কারো সারা বছরের আয়ের সমান। আর রিফাতের মায়ের শাড়ির দাম নাইবা গুনলাম। বিপুল পরিমান শপিং করে তার ফিরে গেলেন তাদের বিশান দামি খাঁচার ভেতর। রিফাতের গল্প এখানেই শেষ।
পরের গল্প বাদশাকে নিয়ে। নামেই বাদশা, তার বাবা অতি দরিদ্র এক জেলে। ইলিশের মৌসুমে ইলিশ মাছ ধরাই তার কাজ। আজকে বাদশার মনেও আনন্দ হচ্ছে। না তার বাবা আজ তাকে শপিং এ নিয়ে যাচ্ছে না।
তার মা আজ সকালে গরম ভাত রান্না করেছে তাই তার আনন্দ হচ্ছে। রোজ রোজ পান্তা ভাত খাওয়া তার জন্য খুবই কষ্টের কিন্তু এর বেশি কিছু করা তার মায়ের পক্ষে সম্ভব না,কঠিন বাস্তবতার মধ্যে বেড়ে উঠা পাঁচ কি ছয় বছরের(গরিবের বয়সের হিসাব নাই তাই লিখতে পারলামনা) এই শিশুটি এর মধ্যেই বুঝে গেছে। তাই সে আবদার করেনা গরম ভাতের। গরম ভাত খাইয়ে তার মা তাকে গত বছরের ঈদে কেনা জামাটা পরিয়ে দেয়। মাথা তেল দিয়ে চুল আচঁড়ে দেয়।
সে তার বাবার হাত ধরে টুকটুক করে হেটে চলে যায়। মা পেছনে অশ্রু ফেলেন, বেশিনা মাত্র কয়েক ফোঁটা। তার আরও সন্তান আছে। তাদের মুখের খাবার যোগাড় হবেনা কাঁদলে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে বাদশাকে তার বাবা?
উত্তর বন্ধক রাখতে! মহাজনের কাছে ছেলেকে বন্ধক রাখলে টাকা ধার পাওয়া যায়।
সেই টাকা ইলিশ মাছ ধরার জন্য নৌকায় লাগানো হয়। আর ছেলেটিকে মহাজন কাজে লাগায় অন্যান্য নৌকায় ফুটফারমায়েশ খাটানোর জন্য। টাকা শোধ দেয়া না পর্যন্ত ছেলেটি নৌকায় নৌকায় কাজ করে।
উপরের দুটি চিত্র কতোই না ভিন্ন! একটি আকাশ আরেকটি দুনিয়ার মাটি। মাটি বললেও ভুল হবে।
পচেঁ যাওয়া প্যাঁচপ্যাঁচে কাদা। এ দূরত্ব কি কোনদিন কমবে? অনেকেই বলবেন হ্যাঁ হ্যাঁ কমবে। হেন করতে হবে তেন করতে হবে। ইংলিশ থিওরি বাংলা থিওরি হংকং থিওরি। কেউ বলবেন এ দল ক্ষমতায় থাকলে হবে আরেকজন বলবেন ও দল থাকলে হবে।
কেউ দেশে থেকে দেশের উন্নতির জন্য গলা ফাটাবেন আর কেউ বিদেশে থেকে। দেশে থাকা মানব দরদি অবকাশ কাটাতে আর দাঁতের পোকার চিকিতসা করাতে বিদেশে যা্বেন। আর বিদেশের দরদি ছুটি কাটাতে এসে বলবেন ‘হাউ ডিসগাস্টিং’। চলুক এই ভাঁড়ের নৃত্য। আসুন আমরা উপভোগ করি।
দে তালি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।