আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

।। শ্যাওলা বনে আমি ।।

মানুষের জীবন খুবই বিবর্ণ থাকে মাঝে মাঝে। আসলে একে বিবর্ণ বলাটা বোধ হয় ঠিক না। এটাও একটা রং। হয়তো নিকষ কালো কিংবা ধূসর !
০১। স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে রোকেয়ার সুখের সংসার।

তার স্বামী আবুল ভ্যান চালায়। যে টাকা রোজগার করে তাতে তাদের সংসার ভালো ভাবেই চলে যায়। নিজেদের অল্প কিছু জমিও আছে। তা বর্গা দিয়ে কিছু বাড়তি টাকা আয় হয়। রোকেয়া সেই টাকা রেখে দেয় সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য।

এভাবেই দিন চলতে থাকে। প্রতিদিনের মতো আজও আবুল ভ্যান নিয়ে গঞ্জে যায়। সন্ধ্যা হয়ে আসে তবুও আবুল ফিরে আসে না। কপালে চিন্তার রেখা পরে যায় রোকেয়ার। রাতের দিকে হঠাৎ একদিন খবর আসে কে বা কারা আবুলকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে।

এ কথা শুনে রোকেয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। রোকেয়ার স্বামী মারা গেলো বছর গত হতে পারে নি। এর মধ্যে তার বাড়ির লোকেরাই জমিজমা নিয়ে দুই নম্বরি শুরু করে দিয়েছে। রোকেয়া অসহায় হয়ে পড়ে কিন্তু সে উঠে দাড়ায় এভাবে ভেঙ্গে পড়লে হবে না। তার সন্তানদের পুরো দায়িত্ব এখন তার হাতে।

তাদেরকে মানুষ তার একারই করতে হবে। রোকেয়া থানায় যায় মামলা করতে। কিন্তু পুলিশরা নানা রকম টালবাহানা করে মামলা করার ক্ষেত্রে। রোকেয়া বুঝতে পারে এখানে কিছু হবে না। সে নিরাশ হয়ে ফিরে আসে।

সে আরও বুঝতে পারে কে বা কারা তার স্বামীকে হত্যা করেছে। কিন্তু তার মতো একজন অসহায় নারীর প্রতিবাদ করার জায়গা কোথায়? ০২। মন খারাপ হলেই আমার একা একা রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস আছে। এটা অবশ্য আমার হিমু হবার প্রয়াস না। রাতের শহরে একা রাস্তায় হাঁটার মাঝে যে কি মজা তা যে না হেঁটেছে সে বুঝবে না।

নিজেকে আঁতেল মানতে নারাজ, কিন্তু তবুও আমার মাঝে কিছু আতলামি লক্ষ করা যায় প্রায়শই। আজও মনে হয় আমার মন খারাপ। মনে হয় বলার কারণ আমি কনফিউজড। কখন যে মন ভালো থাকে আর কখন খারাপ তা বুঝে উঠতে সময় লাগে। একা একা হাঁটছি আর নিয়ন বাতিগুলো পর্যবেক্ষণ করছিঃ।

নিয়ন বাতি দেখেই কবিতা লেখার পিনিক চরে গেলো মাথায়। চট করে মোবাইল টা বের করে লিক্তে শুরু করলাম - নিয়নের আলো লাগে না যে ভালো, তুমি ছাড়া ধূসর বিবর্ণ আজকের এ রাত ! ধ্যাত ! আর কিছু আসছে না মাথায়। মোবাইল পকেটে রেখে আবার হাঁটা শুরু করলাম। মাথার জ্যাম ছাড়াতে হলে এক কাপ চা আর একটা ধুম্রশলাকা চাই। এদের খোঁজে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম আমেরিকান এমব্যাসির সামনে।

রাত পৌনে বারোটা। কিন্তু এখনও চায়ের দোকান খোলা। ঢাকা শহর আসলেই নিশাচর একটা শহর। এক দোকানের সামনে দাড়িয়ে ছায়ের অর্ডার দিলাম, আর একটা ধুম্রশলাকা নিয়ে জ্বালিয়ে ফুঁকতে শুরু করলাম। হঠাৎ কানে এলো কান্নার শব্দ।

এদিক সেদিক তাকিয়ে হঠাৎ চোখ গেলো দোকানের পেছনটাতে। ওখানে দেখতে পেলাম দুটো বাচ্চা বসে বসে কাঁদছে। তাদের কাছে গিয়ে দেখি তাদের পায়ে শেকল পড়ানো ! আমার কৌতূহল চলে আসে। আমি দোকানদার মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? এদেরকে এভাবে এখানে বেঁধে রাখা হয়েছে কেন? তিনি উত্তর দিলেন – ঃ ভাই এরা আমার মাইয়া-পোলা। ঃ এখানে এভাবে বেঁধে রেখেছেন কেন? ঃ কি করুম ভাই? খুইল্লা দিলে তো দৌড়াদৌড়ি করবে, রাস্তায় যাইবে।

বান্দরের জাত এইগুলা। রাস্তায় দেহেন না কতো গাড়িঘোড়া ! গাড়ির তলে চাপা পরলে তো সব শেষ আমার ! ঃ বাসায় রেখে আসতে পারেন না তাহলে? ঃ বাসায় কার ধারে রাইখা আসুম ভাই? কেউ নাই তো। ঃ সারাদিন এভাবে বেঁধে রাখেন? ঃ হ ভাই। সকাল থিকা রাইত পর্যন্ত। কি আর করুম কন? ঃ আপনার স্বামী কি করে? ঃ আমার স্বামী নাই।

ঃকি হয়েছিল আপনার স্বামীর? ঃঘরের মাইনসেই মাইরা ফালাইছে ! ঃমামলা করেন নাই? ঃভাই অসহায় মাইনসের লাইগা কেউ না। আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল তাকে বা তার বাচ্চাদের সান্তনা দেবার জন্য আমার কাছে যথেষ্ট শব্দের মজুদ নেই। সকালের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নতুন দিনের শুরু হলেও পুরনো নিয়মের আবর্তন ঠিকই বহাল থাকবে। কয়েকটা চকলেট কিনে বাচ্চা দুটোর হাতে দিয়ে নিজে আর একটি ধুম্র শলাকা জ্বালিয়ে আবার হাঁটা দিলাম উল্টো পথে ! আর মনে মনে ভাবলাম ভালো থাকার সংজ্ঞাটা আপেক্ষিক।

সাইট লিংক
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।