বাঙ্গাল মানুষ
আমাদের এলাকার এলাকার আফজালের ইতালি প্রীতি ঈর্ষণীয়। এই যে বিশ্বকাপ চলছে এখন তার বাড়ীর কোনায় কোনায় একাধিক ইতালীয় ফ্ল্যাগ প্রমাণ করছে ইতালি প্রীতি কতটা প্রবল। তবে আফজাল ফুটবলের কারণে ইতালি পছন্দ করে না। ইতালি পছন্দ করে বলেই ইতালির ফুটবল পছন্দ করে।
ইতালি তার পছন্দের কারণ হচ্ছে, অকারণ।
কোনো নির্দিষ্ট কারণ নাই। এমনি এমনি পছন্দ। তার ইতালি যেতে ইচ্ছে করে। সেখানে রোমান সভ্যতার সাথে পরিচিত হতে ইচ্ছে করে। ইতালিয়ান ফুড খেতে ইচ্ছে করে।
রোম, পিসা, ভ্যানিস এইসব শহরগুলো ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করে। বিশেষ করে পিসা। সেখানকার হেলানো টাওয়ার দেখার ইচ্ছা তার বহুদিনের। আরো কত কী! তার এইসব ইতালিয়ান আদিখ্যেতায় সবাই বিরক্ত।
বিরক্ত না হওয়ার কোনো কারণ নাই।
বিদেশ যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই আফজালের। না আছে টাকা। না আছে ভিসা পাবার কোনো সম্ভাবনা।
এসব ভেবে খোদ আফজালেরও মন যথেষ্ট খারাপ।
তবে লক্ষণীয় ব্যাপার গত কয়েকদিন আগে সে বেশ খুশি খুশি মন নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরছে।
তার আনন্দের কারণ শুনে যে কারো আনন্দ ম্লান হবার জোগাড়। আনন্দে সে বেশ ছোটাছুটি করছে এদিক সেদিক। হাপাতে হাপাতে নানান জায়গায় যায়। আর অনেক কিছূ বলার চেষ্টা করেও বলতে পারে না। বলার সময়টুকু তার নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তেই শেষ হয়।
অপেক্ষা করতে না পেরে অনেকই চলে যায়। যাদের সময় থাকে তারা শোনে।
আফজাল খুশিতে দশখানা। আটখানা সাথে দুখানা ফ্রি। তার এই খুশির কারণ দেশ ইতালিতে পরিণত হচ্ছে।
এমন কি ইতালির চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নাকি। তার মতে ঢাকা এখন পিসা শহর হয়ে যাচ্ছে। যত্রতত্র হেলানো টাওয়ারের সৃষ্টি হচ্ছে।
আফজাল আনন্দে থাকলেও অনেকেই নেই। বলতে গেলে কেউ-ই নেই এমন আনন্দে।
আতঙ্কে ঢাকা পড়ে আছে ঢাকাবাসী।
২.
গাছের প্রাণ আছে এটা অতি প্রাচীন কথা হলেও আজ এই দিনে মনে হচ্ছে বিল্ডিঙেরও কি প্রাণ আছে? বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক হলেও ভাবনার। কারণ ঢাকার বিল্ডিংগুলো এখন যে আচরণ করছে তা অবিকল মানুষের মতো। মানুষের মধ্যেই এমন ঘটনা লক্ষণীয়। মানুষের মধ্যে একজনের কোনো দুর্ঘটনার খবর পেলে অন্য কারোরও দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
আঘাত সহ্য করতে না পেরে। বিশেষ করে হার্টের নানা প্রদাহ দেখা দেয়।
এমন সিমিলারিটি দেখে ভয়ানক খটকায় আছি বিল্ডিঙেরও হৃদরোগ আছে কিনা? তার মানে হৃদয় আছে কিনা? তার মানে কি প্রাণ আছে কিনা?
আজ এই দিনে জগদীশ চন্দ্র বসুর কথা খুবই মনে পড়ছে।
৩.
আমাদের উপরে ওঠার প্রবণতা বহু পুরান। কিন্তু উপরে উঠতে কেউ মুসা ইব্রাহীম হতে চায় না।
তার মতো কষ্ট করতে চায় না। গোঁজামিল দিয়ে উপরে উঠতে ব্যাস্ত। দোতলা ফাউণ্ডেশনের উপর দাঁড় করানো হয় ছয়তলা বিল্ডিং এবং হাস্যকরভাবে এর উপরেই টানানো হয় উচ্চতা জয়ের পতাকা। ক’দিন পরেই যা হেলে পড়ে এবং সংবাদের উচ্চতা বাড়ায়।
তাই আমাদের হেলে পড়া সচেতনতা এবং জ্ঞানের উচ্চতা জরুরী ভিত্তিতে সোজা করা প্রয়োজন।
কারণ, এটা যতদিন হেলে থাকবে ততদিন এরকম বিল্ডিং না শুধু আমাদের জীবনযাপনও হেলে থাকবে। হেলে পড়বে আমাদের নির্মাণাধীন ভবিষ্যতর পিলারসমূহ। আর বেরিয়ে আসতে হবে বাণিজ্যিক চিন্তা ভাবনা থেকে। যেখানে একটি পোক্ত বাড়ীর চেয়ে পোক্ত টাকার অঙ্কই মুখ্য থাকে। আসলে আমরা সবকিছুতেই কম বেশি বাণিজ্যিক হয়ে যাচ্ছি।
যাই হোক লেখাটা শেষ করা প্রয়োজন। আরও বাড়ালে সেটাও হেলে পড়ার আশঙ্কা আছে। তার আগে একটা বাণিজ্যিক চিন্তার গল্প বলে নিই, শততম জন্মবার্ষিকীতে এক লোককে জিজ্ঞেস করা হলো, তার এই দীর্ঘ জীবনের গোপন রহস্য কী?
লোকটি বললেন, এখনই ঠিক বলা যাচ্ছে না। একটা ভিটামিন কোম্পানি, একটা আয়ুর্বেদ কোম্পানি আর একটা ফ্রুট জুস কোম্পানির সঙ্গে দরদাম চলছে। ফাইনাল হয়ে গেলে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবো।
সূত্রঃ বাংলা মাটি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।