আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৫২ ঘণ্টা পর পিন্টুর ফিরে আসা

‘পিন্টুরে পাইছিরে মা, পাইছি। ভালো আছে। কতা কয়। ’ চিত্কার করে কাঁদতে কাঁদতে ফোনে স্বজনদের জানাচ্ছিলেন আবদুল জব্বার।
ভবনধসের প্রায় ৫২ ঘণ্টা পরে আজ দুপুরে উদ্ধার করা হয় পিন্টু সাহা নামের এক শ্রমিককে।

উদ্ধারের পর তাঁকে নিয়ে আসা হয় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাঁর শরীরে কোনো আঘাত নেই। হাসপাতালে এসে অক্সিজেন আর স্যালাইন লাগানোর কিছুক্ষণ পরই কথা বলা শুরু করেন পিন্টু। এ সময় তিনি চিকিত্সকদের মুঠোফোন থেকে স্বজনদের ফোন করে নিজের অবস্থান জানাচ্ছিলেন। ফোন পাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই ছুটে আসেন পিন্টুর ভগ্নিপতি প্রভাত সাহা আর প্রতিবেশী আবদুল জব্বার।

এসেই কাঁদতে শুরু করেন তিনজনে মিলে।
‘পিন্টু আপনার কী হয়?’ জিজ্ঞাসা করতেই জব্বার বললেন, ‘ভাই’। তারপর বললেন, বগুড়ার শেরপুরে একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়ি তাঁদের। পিন্টুরা হিন্দু হলেও ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা, আপন ভাইয়ের মতোই। তাই পিন্টুকে খুঁজতে প্রভাতের সঙ্গে তিন দিন ধরে সাভার চষে বেড়াচ্ছিলেন তিনি।


জব্বার আরও বলেন, পিন্টু আর তাঁর ছেলে প্রান্ত একই সঙ্গে রানা প্লাজার সাততলায় কাজ করতেন। গত বুধবার বিকেলেই প্রান্তকে উদ্ধার করা হয়। তবে পিন্টুকে খুঁজে না পেয়ে চিন্তিত ছিলেন তাঁরা। তাই পিন্টুর খোঁজ পেয়ে জব্বার বলেন, ‘কী যে খুশি লাগতাসে আপনারে কইতে পারব না। ভাবছিলাম আর খুঁজে পামু না।

’ বলতে বলতেই আবারও কেঁদে ফেলেন জব্বার।

আধ হাত জায়গায় তিন দিন
তিন দিন পরে স্বজনদের দেখতে পেয়েই যেন অনেকখানি সুস্থ হয়ে ওঠেন পিন্টু। বলেন, ‘যেন কব্বরে আছিলাম। দিন না রাইত কিছুই বুঝতে পারতাছিলাম না। ’
ভবন ধসে পড়ার সময়কার বর্ণনা দিয়ে পিন্টু বলেন, ‘বিল্ডিংডা কাঁইপা উডলো।

কিছু একটা হইতাসে বুঝলাম। কিন্তু ভাইঙা পড়ব, বুঝি নাই। কিছু না বুইজ্জাই বাইরানের জন্য দৌড় দিলাম। বিল্ডিং কাইত হইয়া গেল। আমি গিয়া পড়লাম কাপড়ের গাদি আর তার কইরা রাহা প্যান্টের কার্টনের ওপর।

নিজ হাতে আমি ওই কার্টনডিতে প্যান্ট ভরছি। ওই কাপড়ের গাদি আর কার্টনের উপরে আইসা পড়ল ছাদ। নিচের ছাদ আর উপরের ছাদে আধা হাত ফাঁক। সেইহানেই পইড়া আছিলাম। শুকনা মানুষ বইলা ওই জায়গাতেই বাঁইচা রইছি।

কুনো নড়াচড়া করতে পারি নাই তিন দিন। একেবারে কব্বরের লাহান পইড়া আছিলাম। ’
উদ্ধার পাওয়ার বর্ণনা দিয়ে পিন্টু বলেন, ‘আইজকা সকালে কিছু পুলাপাইনের শব্দ পাইলাম। পরে আমি আওয়াজ দিলাম। হ্যাগো লগে কতা হইলো।

হ্যারা কইলো, “দাদা আপনারে না লইয়া আমরা আইজ যামু না। ” আমি খালি জিগাইলাম কয়টা বাজে। হ্যারা কইলো “শুক্কুরবার, সকাল আটটা। ” হ্যারপর ওই পোলাপাইন আর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন মিল্যা দেওয়াল কাইটা, ভাইঙা আমারে বাইর করল। ’
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক আবদুস সালাম বলেন, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আরও জীবিত মানুষ রয়েছে।

তাঁদের উদ্ধারে তত্পরতা অব্যাহত রয়েছে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।