কোনো এক মফস্বল শহরে এক মামা ছিলেন। তার ছিলো দুইজন ভাগনে আর এক ভাগনি। ভাগনি থাকেন সেই সুদুর কানাডায় স্বামী সন্তান নিয়ে খুবি সুখী সংসার তার। দেশে বেড়াতে আসেন তিন বছরে একবার। ছোট ভাইয়ের জন্য আনা গিফ্ট নিয়ে যায় শশুড় বাড়ির কোনো একজন, উনি কিছু বলতে পারেন না।
বড় ভাগনে অনেক বড় হয়েছেন ইতোমধ্যে, অনেক বড় বড় চাকরি করেছেন, অনেক টাকা বেতন পেতেন। এখন নিজেই কম্পানি দিবেন। প্রতি বছর স্ত্রী সন্তান নিয়ে বিদেশ ভ্রমনে যান। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তিনি বিয়ে করেছেন অন্য ধর্মের একজন মহিলাকে যার বাবার বাড়ির উপর তিনি নিজেই বাড়ি করেছেন। স্ত্রী কথা মতো চলেন, এমনকি ছোট ভাইকে একটি মোবাইল কিনে দিতে হলেও মহিলাকে না জানিয়ে কিছু করেন নি।
অতপরঃ ভাইকে পুরনো একটি ভাংগা মোবাইল দিয়েছেন স্ত্রীকে খুশি করার জন্য। এখন ছোট ভাগনে, ১০ বছর আগে একদম রোগাপাতলা ছিল দেখতে। বোনের আনা গিফট না পেয়ে মন খারাপ, ভাইয়ের দেওয়া পুরনো মোবাইল, জামা কাপড় নিয়ে মন খারাপ। সেই মন খারাপ ছোট ভাগনেকে সান্তনা দেয় তার ততকালীন প্রেমিকা আর আরেকজন হতে যাচ্ছে প্রেমিকা। ততকালীন প্রেমিকাকে আর ভালো লাগছে না ছোট ভাগনের, তাই নতুন কাউকে চাই।
তাকে বোঝানের চেষ্টা করে দিন রাত মোবাইলে, কথা শুনে না মেয়েটা। হুমকি দেয় আত্মহত্যা করবে। মনে মনে খুশি ছোটভাগনে, আপদ দুর হয় তাহলে। আস্তে আস্তে এগুতে থাকে নতুন প্রেমিকার দিকে। ইলেকশনে হেরে গিয়ে মন খারাপ, ভুগতে থাকে অসুখে।
আর নতুন প্রেমিকাকে বলে একটা মেয়ে তাকে খুব জ্বালাচ্ছে, সে শুধু বন্ধুর মতো দেখে, কিন্তু মেয়েটা অন্যকিছু চায়। তাকে বলে অভিশাপ থেকে বাচাতে। নতুন প্রেমিকার খুব রাগ হয় সেই মেয়েটার দিকে। এরকম বাজে মেয়ে, কোনো কারন ছাড়া কেন এরকম নিষ্পাপ ছেলেটাকে অভিশাপ দিচ্ছে। তার খুব ইচ্ছে হয়, ঐ মেয়েটাকে অনেক বকে দিতে।
ভাবে আহারে আমার বুদ্ধুটাকে কি রকম মেন্টাল প্রেসারই না দিচ্ছে। আরো দুর্বল হয়ে যায় মেয়েটা, হয়ে যায় স্বমব্যথী। উল্লেখ্য, এই দুটি মেয়েও অন্য ধর্মের।
ছোট ভাগনে ভাসছে প্রেমের ভেলায়। এর মধ্যে মামার স্ত্রী ক্যান্সার ধরা পড়ে।
পৃথিবীর ভালো মানুষগুলোকে কেন বিধাতা আগে তুলে নেন জানিনা। এই মামী অসম্ভব ভালো মানুষ, চোখ দুটোয় শুধু মায়া। হাসিটা এমন পবিত্র দেখে মন ভালো হয়ে যায়। ছোট ভাগনের নতুন প্রেমিকা মামীকে কেমোথেরাপী দেওয়ার সময় সারাদিন হাসপাতালে থাকেন, একটু পানি খেতে যাওয়ার অবস্থায়ও নেই। সন্ধ্যা বেলা পেটে ব্যাথা নিয়ে ফিরে আসে হলে।
মামীর অপারেশন হলে রাত জেগে তার পাশে থাকে। মামীর সাথে তার তৈরী হয় একটা সুন্দর সম্পর্ক। কিন্তু মামী বাচতে পারলেন না। অনেক কষ্ট পেয়ে মারা যান মফস্বল শহরের একটি হাসপাতালে, ফোনে মামীর মৃত্যু যন্ত্রনা শুনে কষ্ট পায় মেয়েটি। হলের সেই বিরাট রেনট্রি গাছের নিচে বসে একা একা সারারাত ধরে কাদে।
মামা মাঝে মাঝে ফোন করে মেয়েটি, ছোট ভাগনে বন্ধু ভেবে। সরল মনে শেয়ার করেন অনেক কথা। তার ভাগনে কত ভালো, কত ক্রিয়েটিভ। এভারে দিন চলে যায়। চলে যেতে থাকে বছর।
পড়াশোনা শেষ করে ভাগনে চাকুরী করে, মেয়েটিও। মেয়েটিকে তার পরিবার থেকে বিয়ে করার জন্য প্রেশার দেওয়া হয়। ভাগনে কাদে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে আর বলে " আমরা কোনোদিন অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না, তাহলে তাদের লাইফ নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের এভাবেই থাকতে হবে"। ভাগনের চোখের জলের কাছে নত হয় মেয়েটি, আর ভাবে "আহারে আমার বুদ্ধু আমাকে কত ভালোবাসে"।
নিজেকে সে ভাবতে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। চলতে থাকে ঝগড়াঝাটি, কান্নাকাটি, ভালোবাসাবাসি। আরো সময় কেটে যায়।
মেয়েটি চেষ্টা করছে একটা স্কলারশীপের। তার ধারনা, দুরে গেলে ভাগনে বুঝতে পারবে তার অভাব, সেও পাখির মতো ডানা মেলে চলে যাবে তার কাছে।
(হায়রে বেক্কল!!)। অবশেষে সেই দিন আসে। মেয়েটা একটা স্কলারশীপ পায়। ভাগনে কঠিন ভালোবাসা শুরু করে মেয়েটিকে, আদরে আদরে ভরিয়ে দেয় তাকে। তাকে নিয়ে ঘুরতে যা্য় সমুদ্রে, আরো কত জায়গায়।
মেয়েটি ভাবে " আহারে আমার বুদ্ধু আমাকে এতো ভালোবাসে"। এয়ারপোর্টে ভাগনে কাদে, আর বলে "দেখো, আমিও একদিন"। মেয়েটা বুঝেনা, ঝাপসা চোখে তাকিয়ে থাকে আর বলে "আমাকে তুমি একা ছেড়ে দিলে, বুদ্ধু?"। কোনো বোধ কাজ করেনা তার, পা চলে না। ভাগনে তাকে এস এম এস করে "আমি তোমাকে ভালোবাসি শুধু এটা ভেবে যাও, আর অনেক ব্যস্ত থেকো কিন্তু"।
শরীরটাকে টেনে নিয়ে উড়াল দেয় সে নতুন দেশে। ভাগনে কাদে, অনেক কাদে। পিসির সামনে বসে থাকে সারারাত, শুধু দেখে কোথায় গেল বিমানটা। কখন ল্যান্ড করলো। পাঠায় অনেক গুলো মেসেজ।
মেয়েটির ফাকা ফাকা লাগে, মনে হয় সব ফেলে এসেছে দেশে। বাবা মা ভাই বোনের জন্য অতটা খারাপ লাগে না, যতটা লাগে মামার ছোট ভাগনের জন্য। ভাগনেও উতলা। কোথাও বার হয়না, ছুটির দিনে ইয়াহু, স্কাইপি তে চলে ভিডিও চ্যাট। সকাল সন্ধ্যা সারা বেলা কথা হয় দুজনের।
মেয়েটার থাকে মন খারাপ, মাঝে মাঝে খারাপ ব্যবহার করে বসে ভাগনের সাথে। মাস চলে যায়।
এর মধ্যে ভাগনির শশুর ছোট ভাগনে কে নাতির জন্মদিনের নিমন্ত্রন করে। এমনিতে ভাগনে মেয়েটিকে না বলে কোথাও যায় না, কিছু করেনা। কিন্তু এটা বলেনি।
সেখানে ভাগনের দেখা হয় তার বোনের ননদের সাথে, সদ্য আমেরিকা ফেরত ১০বছরের ছোট মেয়েটি। এই ছোট মেয়েটি জন্মদিনের ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে। একটা বাচ্চার জন্মদিনে ছবি আছে ১৫টি, তার মধ্যে ভাগনের ছবি ৮টি, বিভিন্ন এংগেলে। মেয়েটি দেখে জানতে চায় ভাগনের কাছে। ভাগনে তো কিছুই বোঝেনা, তার তো দোষ নাই।
একটা ইচরে পাকা মেয়ে তার মতো চুলপাকা লোকের ছবি তুল্লে সে কি করবে। একদম হক কথা। মেয়েটি রেগে গিয়ে বলে
"এখুনি বলো ছবি ডিলিট করতে"। ভাগনে বলে "বাবারে একটা মেয়ে আমার ছবি তুল্লো তা নিয়ে এই অবস্থা, আর কিছু করলে তো উপায় নাই"। বাধ্য ছেলের মতও ভাগনে বাচ্চা মেয়েটিকে ইমেইল করে, সি সি করে মেয়েটিকে "প্লিজ রিমুভ মাই ফটোস ফ্রম বার্থডে এলবাম, আই হ্যাভ সাম পারসোনাল প্রবলেম"।
বাচ্চা মেয়েটিও কথা শুনে।
দিন চলে যায়। আবারো ভাগনে দুই নৌকায় ভাসতে থাকে। এর মধ্যে মেয়েটিকে একদিন বলে "তুমি আমার ম্যাচ না"। মেয়েটি বুঝে না কি হলো।
৯ বছর পরে এখন কেন মনে হচ্ছে ম্যাচ না। ভাগনে বোঝায় অনেক বোঝায় মেয়েটিকে। পাজি মেয়েটা বুঝে না, কেন ভালোবাসা এত ঠুনকো হয়ে যাবে। ভাগনে বলে
"ভেবেছিলাম দুরে গিয়ে তুমি চেন্জ হবে"। মেয়েটার দোষ কেন সে দুরে এসেও চেন্জ হলোনা।
ভাগনে বলে, এই নরক থেকে সে মুক্তি চায়। মেয়েটি তাকে সবসময় কন্ট্রোল করতে চেয়েছে, তাকে ডমিনেট করতে চেয়েছে, তার কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে। সে এখন সুখ চায়, ফিরতে চায় সাদা মাটা জীবনে। মেয়েটি কাদে, অনেক কাদে। পাগলের মতো করে।
একসময় ভাগনে জানায়, তাকে বিয়ে করতে হবে সেই কচি মেয়েটাকে। তার তীর বের হয়ে গেছে, ফেরার কোনো উপায় নাই। বোন আসছে কানাডা থেকে, বাচার কোনো উপা্য় নাই। মেয়েটি কাদে, খালি কাদে। তার যে কিছু করার নাই।
ইয়াহু মেসেন্জার থেমে থাকে না, সেখানে নক করে "হামবা আআআআআ" বলতে ভাগনে ভুলে না। প্রতি রাতে ফোন করাও থেমে থাকে না। মেয়েটি বুঝে না। ঘুমায় না আর কাদে, শুধু কাদে।
মামার হাম হয়েছে, খবর পেয়ে মেয়েটি ভাবে ফোন করি মামাকে কেমন আছেন তিনি।
মামা জানান খুশী খুশী গলায়, ভাগনের বিয়ে ঠিক হয়েছে আগষ্ট মাসের ৫ তারিখ। আরো জানান তার ভাগনের গুনের কথা। সিনেমার হিরোদের চেয়েও দেখতে সুন্দর হয়েছে সে, নিজের যোগ্যতায় চাকরিতে পেয়েছে বিরাট প্রমোশন। মেয়েটি শুনে আর তার বুক হু হু করে উঠে।
চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।