লিখে খাই, সবার ভাল চাই
বাস ও সেই মহিলা
শামীমুল হক
ঝুলতে আমরা সবাই পছন্দ করি। বিশেষ করে যারা লোকাল বাসের যাত্রী। রাজধানীর লোকাল বাসে চড়া যে কত বিড়ম্বনার তা ভুক্তভোগি সবারই অবগত। এর ওপর রয়েছে হেলপার, কন্ডাক্টর আর ড্রাইভারের অমানুষিক অত্যাচার। বাসের সকল যাত্রী জিম্মি এ ৩ জনের কাছে।
এ অবস্থায় সকল যাত্রীর এক হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে প্রায়ই দেখা যায়, যাত্রী-যাত্রীতে ঝগড়া। সেদিন যাত্রাবাড়ি থেকে এরকমই একটি বাসে ওঠলাম। ঠেলেঠুলে কোনরকমে গিয়ে আশ্রয় নিলাম এক জায়গায়। ঝুলছে মানুষ।
যেন বাঁদুরঝুলা। তারপরও ড্রাইভারের চিৎকার-সব ল, কন্ডাক্টরের কথা ওডা ওডা। হেল্পারের কণ্ঠ পিছে চাপা পিছে চাপা। এরমধ্যেই শুনতে পেলাম দুই যাত্রীর ঝগড়া। বয়স্ক এক যাত্রী আর এক তরুণ যাত্রীর ঝগড়া।
বয়স্ক লোকটি তরণকে বলছেন, আপনার পাটা সরান না? তরুণের বক্তব্য, কোথায় সরাব, জায়গাতো নেই। এই নিয়েই তুমুল ঝগড়া। তরণটি বলছে, চাচা ক্ষেপে যাচ্ছেন কেন? আমিতো বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পা দু’টোকে এত করে বললাম বাবা পা, তোরা আমার সঙ্গে যাসনে। কিন্তু ওরা যে নাছোড়বান্দা। ছাড়বেই না।
নিরুপায় হয়ে আনতেই হলো। এতেই ক্ষেপে গেলেন বয়স্ক লোকটি। এখনকার ছেলে পুলোরা বেয়াদব। গুরুজনকে মান্য করতে জানে না। ইত্যাদি, ইত্যাদি।
কিছুক্ষণ থেমে বয়স্ক লোকটি আবার বলা শুরু করলেন, হবেই না কেন? আব্বা যেদিন থেকে পাপ্পা কিংবা ডেড হয়েছে সেদিন থেকে শ্রদ্ধা দেশ থেকে ওঠে গেছে। আমরা ছোটকালে পড়েছি আ ব-ব আকার আব্বা। আর এখন আব্বা হয়ে গেছে পাপ্পা ডেড। কোথায় গেছে পৃথিবী। বাসের কথা বলতে গিয়ে মনে পড়েছে সেই গল্পটি-
এক মহিলা ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাবেন।
মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহগামী বাসে উঠলেন। বাস ছাড়ার পরপরই তিনি কন্ডাক্টরকে বললেন, ভালুকা গেলে বাবা আমাকে বলিও। বাস চলছে। আবারও ওই মহিলা জিজ্ঞেস করলেন, বাবা ভালুকা এসেছে। না আসেনি।
মহিলা ক্ষুব্ধ। কিছুক্ষণ পর আবারও ভালুকা এসেছে? এবার সকল যাত্রী তাকে ধরলেন? বললেন, ভালুকা এলে আপনাকে বলা হবে। এ ব্যাপারে কন্ডাক্টরকে বলে দেয়া হয়। নিশ্চিত মনে মহিলা বসে আছেন। বাস চলছে তো চলছেই।
ভালুকা আর আসে না। হঠাৎ করে মহিলা আবারও বললেন, ভালুকা এসেছে বাবা? এবার সবার দৃষ্টি পড়েছে। ভালুকা তো অনেক আগেই ফেলে আসা হয়েছে। সকল যাত্রী ধরলেন কন্ডাক্টারকে। কেন মহিলাকে ভালুকায় নামিয়ে দেয়া হলো না? কেউ কেউ মারতেও গেলেন।
শেষ মেষ সকলে সিদ্ধান্ত নিলেন, বাসটি ঘুরিয়ে আবার ভালুকায় যাবে। তাই করা হলো। ভালুকা এসে মহিলাকে বলা হলো ভালুকা এসেছে। মহিলা করলেন কি-তার পুটলা থেকে ওষুধ বের করে মুখে দিলেন। সবাই হতবাক।
কি ব্যাপার নামবেন না। নামবো কে বলেছে? আমিতো ময়মনসিংহ যাবো। তাহলে ভালুকার কথা বললেন কেন? মহিলা বললেন, ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ওষুধ দিয়েছে। বলেছে কোথায় যাবো।
ময়মনসিংহের কথা বলতেই বললেন, এখন একটা টেবলেট খান। একঘণ্টা পর আবার খাবেন। একঘণ্টায় বাসটি ভালুকায় গিয়ে পৌঁছাবে। ভালুকায় গেলে ওষুধটি খেয়ে নিতে ভুলবেন না যেন। কথা শুনে গাড়ির সকল যাত্রী তো হতবাক ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।