নীল মানব
সিরাজগঞ্জ, অগাস্ট ২০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) - সিরাজগঞ্জে আরো ১২ জন অ্যানথ্রাক্স রোগীর খোঁজ পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এনিয়ে জেলার শাহজাদপুর উপজেলার চিথুলিয়া গ্রামে আ্যনথাক্স রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৮।
গত ২৯ জুলাই অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরুর মাংস খেয়ে এবং মাংসের সংস্পর্শে এই রোগ গ্রামের এসব লোকে দেহে সংক্রমিত হয়।
শুক্রবার সকালে ঢাকার ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একদল চিকিৎসক চিথুলিয়া গ্রামে এসে রোগ নিশ্চিত করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করেছে।
প্রতিনিধি দলের প্রধান আইইডিসিআর এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. সুবোধ কুমার কুণ্ডু সাংবাদিকদের বলেন, অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গের সঙ্গে এই গ্রামের ৩৮ জন রোগীর উপসর্গের পুরোপুরি মিল খুঁজে পাওয়া গেছে।
তবুও আরও নিশ্চিত হতে রোগীদের রক্ত ও জবাইকৃত গরুর গোয়ালঘর থেকে মাটিসহ বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামীতে এই রোগ মহামারী আকার ছড়িয়ে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। কেননা ইতোমধ্যেই জন-সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চিথুলিয়া গ্রামে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত ২৬ রোগীর খোঁজ পাওয়া যায়।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি দল ডা. শরিফুল ইসলাম ও জেলা সেনেটারি পরিদর্শক রাম চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে ওই দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আ্যনথ্রাক্স সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জেলা সেনেটারি পরিদর্শক রাম চন্দ্র সাহা জানিয়েছিলেন, ২৯ জুলাই চিথুলিয়া গ্রামের আব্দুস ছালামের অ্যানথ্রাক্স সংক্রমিত ষাঁড় ও শাহ আলমের গাভী জবাই করে মাংস গ্রামবাসীর কাছে বিক্রি করা হয়।
সংক্রমিতরা সবাই ওই গরু জবাই, কাটা-ছেঁড়া, মাংস বানানো এবং খেয়ে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংক্রমিতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে গেছে এবং কারো কারো শরীরের সৃষ্ট ক্ষতস্থানে তীব্র ব্যাথা হচ্ছে বা পচন ধরতে শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার অ্যানথ্রাক্স রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার আগে মতবিনিময় সভা করা হয়।
সভায় আক্রান্ত রোগীরা ছাড়াও গ্রামবাসীরা অংশ নেয়।
চিথুলিয়া উত্তরপাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির কার্যালয়ের মিলনায়তনে সিভিল সার্জন ডা. নূরল ইসলাম তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ডা. সুবোধ কুমার কুণ্ডু, ডা, মো. শফিকুর রহমান, ডা. অপূর্ব চক্রবর্তী, ডা. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, ডা. সুমন কুমার পাল, ডা. ইকবাল হোসেন তালুকদার ও জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম প্রমূখ।
সিভিল সার্জন বলেন, মাস খানেক আগে বন্যার পানিতে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত একটি মরা গরু পানিতে ভেসে এই চিথুলিয়া গ্রামে আসে।
পরবর্তী সময় অ্যানথ্রাক্স জীবাণুযুক্ত ডুবো ঘাস ও কচুরীপানা খেয়ে আক্রান্ত হয় এই গ্রামের দুটি গরু।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকালে ডুবো ঘাস খেয়ে এ অঞ্চলের গাভীদের খুরা, গলাফোলা, বাদলা ও তড়কা (অ্যানথ্রাক্স) রোগ দেখা যায়।
তিনি বলেন, অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগ খুবই মারাত্মক।
এই রোগে আক্রান্ত হলে গরু সাধারণত বাঁচে না।
যেহেতু এই অঞ্চলটা মিল্কভিটার দুগ্ধ অঞ্চল তাই জেলা ও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিল্কভিটার ভেটেরেনারি বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বয় থাকলে এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলা করা সম্ভব বলে মনে করেন শফিকুল ইসলাম।
মিল্কভিটা কোম্পানি লিমিটেড'র নিয়ন্ত্রণাধীন বাঘাবাড়ি দুগ্ধ উৎপাদন কারখানার সমিতি ব্যবস্থাপক ডা. ইদ্রিস আলী বলেন, এ বছরের শুরুতে চিথুলিয়া উত্তরপাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির ২শ' গাভীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। যেগুলোর মেয়াদ থাকে ন্যূনতম এক বছর।
অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে গত ৯ আগস্ট আবার টিকা দেওয়া হয়েছে।
যে গাভী দুটি আ্যনথ্রাক্স হয়ে মারা গেছে সেগুলো বাইরে থেকে কেনা এবং টিকা দেওয়া হয়নি।
গ্রামবাসীরা জানান, মিল্কভিটার সমিতির বাইরেও এই গ্রামে প্রায় ৩ শতাধিক গাভী রয়েছে। এসব গাভীর টিকা বা চিকিৎসার বিষয়ে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে সময়মত সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় সরবরাহ না থাকায় সময়মত খামারিরা টিকা পায় না। তবে পরে ঠিকই সরবরাহ করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।