আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই ভয়ঙ্কর দিন



২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। বাংলা ১৪১১। ৭ ভাদ্র। দিনটি ছিল শনিবার। ভাদ্র মাস হলেও আকাশ ছিল মেঘমুক্ত।

ঢাকায় সূর্য ডুবে দিনের আলোকে তখনও গ্রাস করেনি অন্ধকার। তবে রাতের অন্ধকার নামার আগেই রাজধানীর ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। ১২টি গ্রেনেড স্তব্ধ করে দেয় গোটা নগরী। রক্তবন্যা বয়ে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ চত্বরে। চারদিকে মানুষের দেহের ছিন্নভিন্ন টুকরো।

প্রাণহীন শরীর পড়ে ছিল কালো পিচঢালা পথের ওপর। গোটা গুলিস্তান থেকে কেবলই ভেসে আসছিল আহতদের মৃত্যুযন্ত্রণা আর আহাজারি। চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞের নিদর্শন। আহতদের নেওয়ার জন্য ছিল না পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স। রিকশা-ভ্যানে-ঠেলাগাড়িতে করে তাদের নেওয়া হয় বিভিন্ন হাসপাতালে।

হামলাকারী জঙ্গিদের গ্রেফতারে পুলিশ ছিল নিষ্প্রভ। তেমনি আহতদের উদ্ধারে তাদের কোনো রকম তৎপরতা ছিল না। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর এ মর্মস্পর্শী ঘটনার রেশ মুহূর্তের মধ্যেই রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বেশকিছু যানবাহনে।

পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেধড়ক লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ছিল আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে 'ট্রাকমঞ্চ' তৈরি করা হয়। অনুষ্ঠান উপলক্ষে দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে জড়ো হতে থাকে। বেলা ২টার মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সভাস্থল।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা। ৩টার দিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুদা সধনের বাসা থেকে তার বুলেটপ্রুফ গাড়িতে অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দেন। শেখ হাসিনার আসার আগেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে হাজির হয়েছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শেষে পৌনে ৪টার দিকে বক্তব্য শুরু করেন শেখ হাসিনা। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্য শেষে প্রায় পৌনে ৫টার দিকে 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' বলার সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চের পশ্চিম পাশ থেকে ট্রাকমঞ্চ লক্ষ্য করে পরপর দুটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। একটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। উপস্থিত সবাই ভেবেছিলেন ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। মুহূর্তেই মঞ্চের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশ থেকে ৭/৮টি গ্রেনেড ছোড়া হয়। এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সমাবেশস্থল।

মানববর্ম তৈরি করে আওয়ামী লীগের নেতারা রক্ষা করেন শেখ হাসিনাকে। এক পর্যায়ে তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর পূর্ব পাশে রাখা তার বুলেটপ্রুফ গাড়িতে উঠানো হয়। গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার মুহূর্তেও সেটি লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয় ২টি গ্রেনেড। এতে গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তারপর দ্রুত তিনি সুধা সদনে পেঁৗছেন।

এদিকে গ্রেনেড হামলার ঘটনা জানাজানি হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তারা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও আশপাশ এলাকায় বেশকিছু যানবাহন ভাংচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের স্রোত আসতে থাকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দিকে। ঘটনার পরপরই হাজার হাজার স্যান্ডেল, জুতা, জামা-কাপড়, ব্যানার-ফেস্টুন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে পড়ে থাকে। গ্রেনেডের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে যায় শরীরের টুকরা।

নিহতদের অধিকাংশের শরীরের নানা অঙ্গ বিছিন্ন হয়ে যায়। বিছিন্ন হয়ে যায় মাথার খুলি। জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানের একটি পা উড়ে যায়। যিনি ঘটনার দু'মিনিক আগেও ট্রাকমঞ্চের নিচে বসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাদাম খাচ্ছিলেন। সেই দিন ঘটনাস্থলেই মারা যান ১৯ জন।

পরে আইভী রহমানসহ আরও ৫ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। ঢাকা মেডিকেলে আহতদের মেঝেতে রাখা হয়। অতীতে এত বড় সহিংস ঘটনায় একসঙ্গে এত লোক আহত হয়নি।

ফলে হাসপাতালে ডাক্তার ও কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। এদিকে জনসভা স্থলের আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও হামলায় সময় তারা ছিল নিষ্ক্রিয়। ঘটনার পরপরই নিহত ও আহতদের সরিয়ে নেওয়ার পর গোটা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কর্ডন করে রাখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই দিন গভীর রাতে ঘটনাস্থলে অবিস্ফোরিত দুটি গ্রেনেড উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বোমা ডিসপোজাল ইউনিট। আলামত হিসেবে তারা গ্রেনেড দুটি সংগ্রহের পরিবর্তে ওই রাতেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

এত বড় ঘটনা হলেও জোট সরকারের কোনো মন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি। পুলিশ তড়িঘড়ি করে মতিঝিল থানায় দুটি মামলা করে। http://www.shamokal.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।