মুক্তিবাণী সেই সমযের সাহসী সাপ্তাহিক, যখন গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নাম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, তাঁর নাম প্রকাশ্যে উচ্চারণ করা ছিল দণ্ডনীয় অপরাধ, তখন এই পত্রিকাটি সাহসের বাতিঘর হয়ে ভূমিকা পালন করেছিল । আমি তখন গাইবান্ধায়, ছাত্র ইউনিয়ন করতাম, ছাত্র লীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন মিলে হলো জাতীয় ছাত্র লীগ, নতুন উদ্দীপনায় কাজ শুরু করলাম আমরা। এর পর এলো ভয়াবহ ১৫ আগষ্ট । আমাদের নামে হুলিয়া, কেউ কেউ গ্রেফতার । চলল প্রতিবাদ, আরও অনেক ঘটনা --- ।
মুক্তিবাণীতে লিখতেন আবুল ফজল, জহুর হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দিন প্রমুখ, যাঁরা নৈতিক দায় থেকে ১৫ আগস্ট পরবর্তী কালজ্ঞ-সময মোকাবিলা করার সাহস যুগিয়েছেন । সেই সময়ে মুক্তিবাণীতে আমার নিম্নে-উল্লিখিত দু’টি কবিতা ছাপা হওয়ায় সম্মানবোধ করছি , কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মুক্তিবাণীর সংশ্ল্ষ্টিজনকে, আমার আরও প্রতিবাদী কবিতা ছাপা হয়েছে – মুক্তিবাণীতে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর ওপর আরও কবিতা ছাপা হয়েছে পত্রপত্রিকায়,আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থসহ পরবর্তী কাব্যগ্রন্থে, প্রবন্ধ ও কলামও লিখেছি, অনেক সংকলনেও বঙ্গবন্ধুর ওপর আমার কবিতা স্থান পেয়েছে ।
শানিত রোদ্দুর
গোলাম কিবরিয়া পিনু
শানিত রোদ্দুরে একদিন মুখোমুখি হবো
অন্তত কিছুটা প্রহরে জমাবো কথা
সে সুযোগ আসবে বলে
আমি হত্যাকারীদের লিষ্ট তৈরি করে
পোষ্টার বানাবো
অথবা চিত্রের প্রদর্শনী।
সবাই দেখবে কেমন অবাক হয়ে
চোখ কারো জ্বল-জ্বল কোরে উঠবে ঘৃণায়
কেউবা হাতের মুঠো তুলে
শপথের কথা উচ্চারণ কোরে নেবে
আগামীর প্রত্যাশায়।
হলুদ বর্ণের শোক ফিরে পাবে শান্তি
শানিত রোদ্দুরে একদিন মুখোমুখি হবো ।
সাপ্তাহিক মুক্তিবাণী, ১ লা মে ১৯৭৭
প্রাণবান
গোলাম কিবরিয়া পিনু
সাতই মার্চের জনসভার মতন স্বাধীনতা
খুঁজে খুঁজে ফিরি
নিষ্প্রাণ শিথিলের স্পর্শ পেয়ে হায়
অন্ধগলির মধ্যে কখনো বা ঢুকে পড়ি !
এই সীমানায় এতবড় নিষ্ঠুর কলঙ্ক হত্যা দেখে
চুপচাপ থাকবে বিজনে
হুলুস্থুল বেঁধে ফেলে সততার চোখ।
যতই-বা ঢোল বাজাক একাকী ওরা
প্রলুব্ধ করুক
ঈগলপক্ষীকে, কেউটেকে, শিকারীর শূলকে
বিরুদ্ধ ছায়ায়
ক্রুরদুর্গ, বাঁধ, প্রাচীর নিমার্ণ করুক
তবুও সে বেঁচে থাকে
বেঁচে থাকে ফুলের উদ্ভিদের মত প্রাণের বাগানে
কবরের মাটি সে তো হয়ে যায় প্রাণবান ।
সাতই মার্চের জনসভার মতন স্বাধীনতা
খুঁজে খুঁজে ফিরি ---।
সাপ্তাহিক মুক্তিবাণী, ২৬ শে মার্চ ১৯৭৮
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।