অস্থির তেল ও চিনির বাজার। পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তেল ও চিনি। প্রতি কেজি তেল সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৫ থেকে ৬ টাকা বেশি নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। চিনির বাজারেও একই অবস্থা।
অথচ রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যাতে অযৌক্তিকভাবে না বাড়ে এ জন্য সরকার ও এফবিসিসিআই তদারকি টিমও গঠন করেছে।
ইতিমধ্যে এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যারা পণ্যের দাম বাড়াবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে। এফবিসিসিআই’র সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, বাজার মনিটরিং চলছে। বেশি দাম নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাতিরপুল কাঁচাবাজারের বাজার করতে আসা হ্যাপি বলেন, কোনোটিরই দাম কমেনি। ব্যবসায়ীরা রমজান মাস নিয়ে বাণিজ্য করছেন।
গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৫ টাকায়। সুপার পাম বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি। অথচ খুচরা বাজারে সরকারিভবে প্রতিকেজি সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ৮০ টাকা। একই সঙ্গে পাম সুপার ৭৬ ও পমওয়েল ৭৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। প্রতিকেজি সয়াবিনের মিল রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬, পাম সুপার ৭২ ও পামওয়েল ৬৯ টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ৮৩ টাকা থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তীর ও ফ্রেশ ব্রান্ডের ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৪১৫ টাকা ও রূপচাঁদা ব্রান্ডের ৪২৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে প্রতিলিটারের দাম পড়ছে ৮২ থেকে ৮৫ টাকায়। সরকার ও এফবিসিসিআই তৎপর থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না চিনির দাম। চিনির বাজারে চলছে বিশৃঙ্খল অবস্থা।
দাম নেয়া হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছেমতো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিকেজি চিনির দাম মিল গেটে ৪৩ টাকা ও খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ৪৭ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও তা মানা হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা চিনি বিক্রি করছেন সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে। কেজিতে বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে ৫ থেকে ৬ টাকা। গতকাল খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে।
খুচরা বাজারে যেমন অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে তেমনি পাইকারি বাজারে। মগবাজারে ব্যবসায়ী মেহেদী জানান, তারা চিনি বিক্রি করছেন ৫২ টাকা দরে। একই দোকানে প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজিতে। হাতিরপুলেও একই অবস্থা। মৌলভীবাজারে চিনির পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম ছিল ৪৫ টাকা।
অর্থাৎ, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২ টাকা বেশি। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়ার পরও চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ সম্পর্কে মৌলভীবাজারে চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম বলেন, ব্যবসায়ীরা চিনির জন্য ডিও কেনার দু’মাস পর চিনি পায়। চিনির জন্য তাদের টাকা দু’মাসের বেশি সময় পড়ে থাকে। এ জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যে তাদের চিনি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, যে পরিমাণ চিনির চাহিদা রয়েছে মিল মালিকরা তা দিতে পারছে না।
চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উৎপাদন আগে বাড়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, চিনির উৎপাদন কম হওয়ায় ডিও কেনার পর তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। মৌলভিবাজারে চিনি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলছেন অন্য কথা। তিনি বলেন, চিনির দাম নির্ধারণ করে দিলেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি বাড়াতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর তদারকি না করলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দামে চিনি বিক্রি করে থাকে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমাদের চিনি যতটুকু উৎপাদন হয় তা ঠিকমতো বাজারে আসে না। চিনি ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা বেশি দামে আশায় মজুদ করে থাকে। এসব মজুতদারদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কোন দিনই চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না বলে তিনি মনে করেন। ইগলু সুগার মিলের জেনারেল ম্যানেজার আকবর আলী মানবজমিনকে বলেন, সরকার চিনির দাম ৪৩ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
এতে আমাদের ক্ষতি হলেও মেনে নিয়েছি। তবে খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে কত দামে চিনি বিক্র হচ্ছে তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। খুচরা বাজরে চিনি দাম যাই হোক সরকার নির্ধারিত মূল্যেই তাদের চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।