আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক মুহূর্তের গল্প

Everyone is entitled to my opinion.
একঃ দেয়াল ঘড়িটার দিকে চোখ পরতেই চমকে উঠলো রকিব। পাঁচটা দশ বাজে। পাঁচটার সময় সাথীর সাথে দেখা করার কথা । আজ ওদের দুজনের জন্যেই ভীষণ গুরুত্বপূর্ন একটা দিন;কিছুতেই মিস করা যাবে না। ওর অফিসটা দিলকুশায় হলেও একটু ভিতরের দিকে।

অফিস থেকে বের হয়ে তাড়াহুড়া করলেও অফিস ছুটির এই ভীড়ে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ মিনিট লেগে যাবে পৌছাতে। বেশি দেরী হলে সাথী খুব বিপদে পরে যাবে। হাতের কাজ সব গুছিয়ে নিয়ে যখন বের হবার তোড়জোড় করছে ঠিক তখনই ওর বস আমান সাহেব ওকে ডেকে পাঠালেন তাঁর অফিসে। দেশের অন্যতম নাম করা এক আর্কিটেক্চার ফার্মে চাকরী করে রকিব। মেধা, কঠিন পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই অফিসে বেশ ভালো একটা অবস্হান করে নিয়েছে।

আর সেকারনেই ফার্মের টপ ক্লায়েন্টেদের অনেকেরই কাজই তাকে দেখাশোনা করতে হয়। এ মুহুর্তে রকিব দেশের অন্যতম বড়লোক এবং ওর বসের ঘনিস্ঠ বন্ধু জাফর উল্লাহ সাহেবের একটি বাড়ীর ডিজাইন নিয়ে কাজ করছে। আগামী সপ্তাহেই ফাইনাল ডিজাইন জমা দেবার কথা। কিন্তু আমান সাহেব ডেকে নিয়ে বললেন জাফর সাহেব শেষ মূহুর্তে তার বাড়ীর লিভিং এবং কিচেন এরিয়ার ডিজাইনে একটু পরিবর্তন করতে চান। আগের ডিজাইনটা ঠিক তার মনঃপুত হচ্ছে না।

কিন্তু ফাইনাল ডিজাইন তার আগামী সপ্তাহের মধ্যেই চাই। এসব নিয়েই বসের সাথে রকিব আলোচনা করছিলো। এই শেষ মুহুর্তে ডিজাইনে পরিবর্তন করা যে কি ঝামেলা তাকে সেটা বোঝানোর দরকার নেই। তবে আরো কয়েকদিন সময় পেলে কাজটা আরও ভালো ভাবে শেষ করা যেত সেটা উনি বুঝলেও মানতে অপারগ। কথা বলতে বলতে অনেকটা সময় কখন পার হয়ে গেছে টেরই পায়নি রকিব।

এখন ঘড়ির দিকে তাকাতেই তাড়াতাড়ি বের হওয়ার তাগিদটা আবার অনুভব করল। কোনরকমে আমান সাহেবকে বলল, "স্যার, কোন চিন্তা করবেন না। আমি সবকিছু উনি যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবেই করে দেব। তবে আপনি যদি কিছু মনে না করেন তবে আজ আমাকে এখনই একটু বের হতে হবে। " আমান সাহেব ওর গলায় উদ্বেগ এবং অস্হিরতার আভাস টের পেয়ে আর কিছু বললেন না।

শুধু মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানালেন। রকিব বসের রুম থেকে বের হয়েই ঝেড়ে একটা দৌড় দিলো। আবার ওর রুমে এসে বাসা থেকে আগে থেকেই রেডি করে আনা ব্যাগটা নিয়েই হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে গেলো। ভাবতে লাগলো অনাগত ভবিষ্যতের কথা। সাথী ছিলো ওর ছোটবেলার বন্ধু বিপ্লবের ক্লাসমেট এবং ঘনিস্ঠ বান্ধবী।

ওরা দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। মাঝে মাঝেই ওদের ডিপার্টমেন্ট যেত বিপ্লবের সাথে দেখা করতে। সেই থেকে আস্তে আস্তে ওদের গ্রুপের সবার সাথে ওর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বছর খানেক যেতে না যেতেই রকিব আর সাথীর স্পেশাল খাতিরটা অন্য সবার চোখে আলাদা ভাবে ধরা পড়ে। পাশ করে বের হওয়ার সাথে সাথেই রকিব আমান সাহেবের ফার্মে চাকরীটা পেয়ে যায়।

সাথীও একটি ব্যাংকে চাকরী শুরু করে। সাথীর বাসা থেকে অনেকবার সাথীর বিয়ে দেয়ার উড্যোগ নেয়া হয়েছিলো। ব্যাংকের চাকরী এবং ক্যারিয়ারের কথা বলে সাথী এতদিন পর্যন্ত তা ঠেকিয়ে রেখেছিলো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা আর সম্ভব হবে না। সাথী কাল ফোন করে জানিয়েছে ওর বাবা-মা নাকি খুব ভালো একটা পাত্রের সন্ধান পেয়েছে।

ওরা আজ সাথীকে দেখতে আসবে। পছন্দ হয়ে গেলে আংটি পরিয়ে যাবে, বাসার সবাই সিরিয়াস এ ব্যাপারে। রকিবকে অনেকদিন বলেছে বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে কিন্তু ও একটু গুছিয়ে নেবার কথা বলে এতদিন দেরী করেছে। তবে এখন মনে হয় আর সেটা সম্ভব না। তাই ওরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ ওরা কোর্ট ম্যারেজ করবে।

পরেরটা পরে দেখা যাবে। এ্যালিকো ইন্স্যুরেন্সের উল্টো দিকেই নাকি বিপ্লবের পরিচিত এক কাজীর অফিস আছে। ওটা সাথীর ব্যাংক থেকেও অনেক কাছে। তাই সাথীর ওখানেই অপেক্ষা করার কথা। সাক্ষী হিসাবে বিপ্লব আর ওদের আরেক বন্ধু শরীফের আসার কথা।

বিপ্লবটা আবার যা অলস কখন আসবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। সব কিছুতেই ওর গড়িমসী করা চাই। এসব ভাবতে ভাবতেই রকিব লিফ্টের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। প্রয়োজনের সময়েই মনে হয় লিফ্টগুলা আসতে সবচেয়ে বেশী সময় নেয়। ওর অফিসটাও এত উপরে যে সিড়ি দিয়ে নামার কথা মনেও আনলো না।

অফিসের দরজা দিয়ে বের হতে হতে ভাবছিলো সাথীর একটা মোবাইল থাকলে ভালো হত। সাথীর রক্ষণশীল বাবা-মা আবার মেয়ের মোবাইল ফোন থাকাটাকে ভালো চোখে দেখতে নারাজ বলে সাথীর আজও কোন মোবাইল ফোন নেয়া হয়নি। একথা ভাবতেই ওর মনে পড়ল আমান সাহেবের অফিসে ঢোকার সময় ও ওর নিজের ফোনটা বন্ধ করে রেখেছিলো। ফোনটা পকেট থেকে বের করে পাওয়ার অন করে দৌড়ানো অবস্হায় চেক করে দেখল কোন মিসকল আছে নাকি। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে দুবার কল করা হয়েছিলো।

মনে হচ্ছে সাথীরই কল; হয়ত রাস্তার পাশের কোন দোকান থেকে করেছে। একথা ভাবতেই দৌড়ের গতিটা আরও বেড়ে গেলো। দৌড়াতে দৌড়াতেই বিপ্লবের নাম্বারটা ডায়াল করার চেষ্টা করল। হঠাৎ উল্টো দিক থেকে আসা এক পথচারীর সাথে ধাক্কা লেগে ফোনটা হাত থেকে ছিটকে মাঝ রাস্তায় গিয়ে পরলো। আওযাজ শুনেই বুঝলো ওটার দফারফা শেষ।

কোনমতে কুড়িয়ে নিয়ে আবার দৌড় শুরু করলো। দিলকুশা রোড দিয়েএসে টয়েনবী রোডে পৌছাতেই ডানে মোড় নিয়ে মধুমিতা সিনেমার দিকে দৌড়াতে লাগলো। মধুমিতার কাছে এসে দেখার চেস্টা করল দূর থেকে এ্যলিকোর ঐদিকটায় সাথীকে দেখা যায় কিনা। কিন্তু অফিস ছুটি শেষে বাড়ী ফেরতা মানুষ আর সিনেমা দেখতে আসা মানুষের ভীড়ে ঠিকমত কিছুই দেখা যাচ্ছে না। দু-একবার লাফ দিয়ে দেখার চেস্টাও করল কিন্তু সফল হলো না।

সাথী কি এসেছে? বিপ্লব, শরীফ ওদের কি খবর? এগুলা ভাবতে ভাবতেই অন্যমনস্ক রকিব কোনদিকে না তাকিয়েই ওপারে যাওয়ার জন্য মাঝখানের আইল্যান্ড লক্ষ্য করে দৌড় দিতেই রাস্তায় পরে থাকা একটা ভাঙা ইটের টুকরোয় পা বেধে ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো। ঠিক তখনই কানের কাছে সুতীব্র শব্দে একটা যাত্রীবাহি বাসের ব্রেক করার শব্দে সম্বিত ফিরে পেলো ও। চোখ তুলে তাকাতেই ওর দিকে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসা বাসের ড্রাইভারের আতংকিত চোখজোড়ার উপর পরলো রকিবের। ওর অবস্হা হলো অন্ধকারের বুক বিদীর্ন করে প্রচন্ড গতিতে ছুটে আসা গাড়ীর হেড লাইটের আলোয় হতভম্ব হরিণের মত। দুইঃ শোবার ঘরের সাথে লাগানো বারান্দায় চেয়ারে বসে আছে সাথী।

সূর্য্যটা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই অস্তে চলে যাবে, দূরে দিগন্তের আকাশটা লাল আভা ধারণ করতে শুরু করেছে। বাইরের রাস্তায় পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এখনও ছুটোছুটি করে খেলছে, সেই আওয়াজ ভেসে আসছে কানে। সামনের কফি টেবিলে পরে থাকা চা অনেক আগেই ঠান্ডা হয়ে গেছে। কিন্তু কোন কিছুতেই খেয়াল নেই ওর। আপনমনে ভাবছে বারো বছর আগের আজকের দিনটার কথা।

এই দিনটা সাথীর জন্য অনেকগুলো কারণে বেশ গুরুত্ত্বপূর্ন একটা দিন। সেদিনের সব ঘটনা গুলো ওর আজও পরিষ্কার মনে পরে। এ্যালিকোর উল্টোপাশের রাস্তায় পাঁচটার বেশ আগে থেকেই ও অপেক্ষা করছিলো রকিবের জন্য। অনেক্ষন হয়ে গেছে কিন্তু রকিবের কোন দেখা নেই। পাশেই এক দোকান থেকে এরই মধ্যে দু'দুবার কল করেছে রকিবের মোবাইল ফোনে।

ফোনটা মনে হয় বন্ধ ছিলো, রকিব ফোন ধরেনি। আশেপাশের লোকজন এবং পথচারীদের কৌতুহলী দৃষ্টি এরই মধ্যে ওকে বিব্রত করা শুরু করেছে। ফটকা টাইপের দুএকজন এরই মধ্যে কয়েকটা বাজে মন্তব্যও করেছে। সাথী সেগুলো শুনেও না শোনার ভান করেছে। টের পাচ্ছে আস্তে আস্তে ওর বিরক্তিটা রাগে পরিণত হচ্ছে।

এমন একটা দিনেও রকিব সময়মত আসতে পারলো না! বিপ্লব আর শরীফের আক্কেলটাই বা কেমন! সবগুলো ছেলেগুলো একরকম। রাগটা এখন পুরো পুরুষ জাতিটার উপর গিয়ে পরলো। আর কতক্ষন অপেক্ষা করবে। আরেকবার ফোন করে দেখবে নাকি? ঠিক তখনই বিপ্লবের হেড়ে গলার ডাক শুনে মাথা ঘুরিয়ে দেখে একটা রিক্সা থেকে ফাজিল দুটো নামছে। কিরে এতো দেরী করলি যে? সাথীর গলায় উষ্মাটা পরিষ্কার বোঝা গেলো।

কি করব বল? রাস্তায় যে জ্যাম। হেলিকপ্টার ছা্ড়া কোথাও সময়মত যাওয়ার উপায় আছে? বিপ্লবের ফাজলামী মার্কা কথা শুনে রাগটা হঠাৎ করে আর বেড়ে গেলো। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "রকিবের সাথে কথা হয়েছে?" মাথা নাড়িয়ে না বোধক একটা উত্তর দিলো দুজনেই। রকিব আসলে কিভাবে কি করবে সে নিয়ে আলাপে ব্যস্ত হয়ে পরলো তিনজনে। হঠাৎ একটা যাত্রীবাহী বাসের ভয়ানক জোরে ব্রেক করায় টায়ারের সাথে কংক্রীটের রাস্তার সংঘর্ষের গগনবিদারী একটা শব্দে তিনজনই এক সাথে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল কি হয়েছে দেখার জন্যে।

রাস্তার লোকজনের চিৎকার আর ছুটোছুটিতে বুঝতে পারলো মধুমিতার সামনে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। তিনজনই কোন কথা না বলে বোঝার চেষ্টা করল আসল ঘটনাটা। আরও অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পরও রকিব আসছে না দেখে ওরা চিন্তায় পরে গেল। শরীফ এর মধ্যেই আরও কয়েকবার রকিবের মোবাইলে ফোন দিলো কিন্তু অপরপ্রান্তে রকিবকে পাওয়া গেলো না। কোন উত্তর নেই, ফোনটা রকিব ধরছে না।

৩. কঃ সেদিন দেরি করে বাসায় ফেরার জন্য সাথীকে মার কাছে অনেক বকাঝকা শুনতে হয়েছিলো। তাড়াতারি রেডি হয়ে নিতে বলে মা রান্না ঘরে ঢুকে গেলেন মেহমানদের জন্য খাবার ব্যবস্হা করতে। এর পরের সবকছুই অতি দ্রুত ঘটেছিলো। পাত্রপক্ষ দেখতে এসে সাথীকে খুবই পছন্দ করে ফেলল। তারা শুধু আংটি নয় একেবারে আকদ করে ফেলতে চাইলেন।

সেইসব করতে করতেই অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। এরই মধ্যে বাতাসে ভেসে আসা শব্দে একবার মনে হয়েছিলো ভাইয়া টেলিফোনে বিপ্লবের সাথে কথা বলছিলেন। কিন্তু ভাইয়াকে আর পরে জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি। পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে হঠাৎ মনে পড়ায় ভাইয়াকে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করল সাথী। "ও, হ্যা", ভাইয়া বললেন।

"বিপ্লব ফোন করেছিলো। বলল তোদের কোন এক বন্ধু নাকি কাল বিকালে মধুমিতার সামনে এক্সিডেন্ট করেছে। স্পট ডেড। তোর এমন দিনে তোকে আর খবরটা দিতে চাইনি। তাই তখন কিছু বলিনি।

" কথাটা শোনার সাথে সাথেই সাথীর মনে হলো পৃথিবীটা যেন দুলছে, চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলো। মুহূর্তের জন্য কিছুই দেখতে পারেনি, শুনতেও পারেনি। মনে হলো দূরে অনেক দূরে কারা যেন কথা বলছে কিন্তু ও কিছুই বুঝতে পারছে না। একটু পরে পরে কিছুটা ধাতস্হ হয়ে কাউকে বুঝতে না দিয়ে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে খাবার টেবিল থেকে উঠে বাবা-মার রুমে গিয়ে বিপ্লবকে ফোন দিলো ও। বিপ্লব যা বলল সেটা শুনে ওর হার্টনিট বন্হ হয়ে যাবে বলে মনে হলো।

বুকের মধ্যে অসহ্য একটা ব্যথায় ওর দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। দুচোখ বেয়ে ঝরঝর করে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত বের হয়ে এলো কান্নার পানি। কালকের সেই বাসটার নিচে চাপা পরে রকিব মারা গেছে। রকিবের ছোটভাই ফোন করে বিপ্লবকে জানিয়েছে। এক মুহূর্তের ঘটনায় এতটা কাছে এসেও রকিব চিরদিনের মত দূরে চলে গেলো তার কাছ থেকে।

একটা চাপা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ওর বুকটা চিরে বের হয়ে আসলো। আজ ওর বিবাহ বার্ষিকী আর রকিবের মৃত্যুবার্ষিকী। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর স্বামী বাসায় ফিরবে। এসেই ওকে নিয়ে আবার বের হবে আজকের এই বিশেষ দিনটা বিশেষভাবে উদযাপন করার জন্য। ৩.খঃ সেদিন দেরি করে বাসায় ফেরার জন্য সাথীকে মার কাছে অনেক বকাঝকা শুনতে হয়েছিলো।

তাড়াতারি রেডি হয়ে নিতে বলে মা রান্না ঘরে ঢুকে গেলেন মেহমানদের জন্য খাবার ব্যবস্হা করতে। এর পরের সবকছুই অতি দ্রুত ঘটেছিলো। পাত্রপক্ষ দেখতে এসে সাথীকে খুবই পছন্দ করে ফেলল। তারা শুধু আংটি নয় একেবারে আকদ করে ফেলতে চাইলেন। সেইসব করতে করতেই অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো।

এরই মধ্যে বাতাসে ভেসে আসা শব্দে একবার মনে হয়েছিলো ভাইয়া টেলিফোনে বিপ্লবের সাথে কথা বলছিলেন। কিন্তু ভাইয়াকে আর পরে জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি। পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে হঠাৎ মনে পড়ায় ভাইয়াকে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করল সাথী। "ও, হ্যা", ভাইয়া বললেন। "বিপ্লব ফোন করেছিলো।

বলল তোদের কোন এক বন্ধু নাকি কাল বিকালে মধুমিতার সামনে এক্সিডেন্ট করেছে। মারাত্মক রকম আহত হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। ডাক্তাররা বলেছে এযাত্রা বেঁচে যাবে। তোর এমন দিনে তোকে আর খবরটা দিতে চাইনি।

তাই তখন কিছু বলিনি। " কথাটা শোনার সাথে সাথেই সাথীর মনে হলো পৃথিবীটা যেন দুলছে, চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলো। মুহূর্তের জন্য কিছুই দেখতে পারেনি, শুনতেও পারেনি। মনে হলো দূরে অনেক দূরে কারা যেন কথা বলছে কিন্তু ও কিছুই বুঝতে পারছে না। একটু পরে পরে কিছুটা ধাতস্হ হয়ে কাউকে বুঝতে না দিয়ে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে খাবার টেবিল থেকে উঠে বাবা-মার রুমে গিয়ে বিপ্লবকে ফোন দিলো ও।

বিপ্লব যা বলল সেটা শুনে ওর হার্টনিট বন্হ হয়ে যাবে বলে মনে হলো। বুকের মধ্যে অসহ্য একটা ব্যথায় ওর দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। দুচোখ বেয়ে ঝরঝর করে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত বের হয়ে এলো কান্নার পানি। কালকের সেই বাসটার ধাক্কায় রকিব ছিটকে গিয়ে পরেছিলো বেশ অনেকটা দূরে। সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারায় ও।

শরীরের অনেকগুলো হাড় ভেঙ্গে গেছে। রকিবের ছোটভাই ফোন করে বিপ্লবকে জানিয়েছে। এক মুহূর্তের ঘটনায় এতটা কাছে এসেও রকিব চিরদিনের মত পর হয়ে গেলো ওর কাছ থেকে। একটা চাপা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বুকটা চিরে বের হয়ে আসলো। আজ ওর বিবাহ বার্ষিকী।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সাথীর স্বামী বাসায় ফিরবে। এসেই ওকে নিয়ে আবার বের হবে আজকের এই বিশেষ দিনটা বিশেষভাবে উদযাপন করার জন্য। ভাবতে চেস্টা করল রকিব আজ এই মুহূর্তে কি করছে। ভাবছে কি সেই দিনটার কথা, ওদের কথা? ৩. গঃ সেদিন আর বাসায় ফেরা হয়নি সাথীর। রকিবের আশা ছেড়ে দিয়ে যখন বাসায় ফেরার কথা ভাবছে তখনই রকিব এসে হাজির।

ওকে দেখেই সাথীর রাগে গা জ্বলতে লাগলো। কিন্তু তারপর যা শুনলো তাতে রকিবকে ক্ষমা করে দিলো ও। অল্পের জন্যে জানে বেঁচে গেছে রকিব। বাসটা যখন তীব্র বেগে ওর দিকে ছুটে আসছিলো তখন ও ভয়ে একদম জমে গিয়েছিলো। হাত পা নাড়ার শক্তিও ওর ছিলো না।

তবে বাসটা শেষ মুহূর্তে ঠিক ওর গায়ের কয়েক ইঞ্চি দুরে থাকতেই থেমে যায়। বাতাসের ধাক্কায় রাস্তায় উল্টে পরে গিয়েছিলো। মৃত্যুর এত কাছ থেকে ফিরে এসেছে শুনে ওকে আর কিছু বলল না। চারজনে মিলে কাজি অফিসের দিকে যেতে যেতে শুনল ওর বসের কাহিনী। সব ভালো যার শেষ ভালো।

সাথী আর রকিব সব ফর্মালিটি শেষে সাথীর বাসায় ফোন করে ওর ভাইয়াকে জানিয়ে দিয়েছে যে ওরা বিয়ে করেছে। এবং আজ সে বাসায় ফিরবে না। পাত্র পক্ষদের যেন ওরা না করে দেয় আসার জন্যে। কথাটা শোনার সাথে সাথেই সাথীর মা অজ্ঞান হয়ে পরে গিয়েছিলেন। অনেকদিন পর্যন্ত এ বিয়ে মেনে নেননি।

শেষে ওদের প্রথম সন্তানের জন্মের পর মা, বাবা, ভাইয়া সবাই ওকে হাসপাতালে দেখতে এসেছিলেন। আজ ওর আর রকিবের বিবাহ বার্ষিকী। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই রকিব বাসায় ফিরবে। এসেই ওকে নিয়ে আবার বের হবে আজকের এই বিশেষ দিনটা বিশেষভাবে উদযাপন করার জন্য। ------------------------------------------------------------------ সমাপ্ত
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।