আমি প্রকৃতির চির অনাসৃষ্টি
সাম্প্রতিক সময়ে এনজিও গুলো বেশ আলোচনার স্থান দখল করে নিয়েছে। সরকারি মহল থেকে বলা হচ্ছে তাদের স্বচ্ছতা-অস্বচ্ছতা এবং জঙ্গী অর্থায়ন এর কথাগুলো। জঙ্গী অর্থায়ন বিষয়টি সমস্যাজনক তাই এটি আমার আলোচনার বিষয় নয় কিন্তু যখন স্বচ্ছতার কথা আসে তখন খুব বেশি জানতে ইচ্ছা করে আসলে যে সকল এনজিও ক্ষুদ্র ঋন প্রদান করছে যেটি কিনা জামানত ছাড়া সেখানে তাদের প্রকৃত সুদের হার কত?আর কেনই বা অতি স্বল্প সময়ে এত গুলো এনজিওর উথথান হল?এখানে কি কোন ধরনের শোষন কাজ করছে না? ‘দরিদ্র’ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়ন-এ শুধুই কি ক্ষুদ্র ঋন একমাত্র ব্যাবস্থা?
আমার বাস্তব জীবনে আমি দেখেছি, এমন অনেক মানুষ আছে যারা ক্ষুদ্র ঋন নিচ্ছে তখন তারা এটা থেকে আর বের হতে পারছে না। একটা থেকে ঋন নিয়ে অন্যটা পরিশোধ করছে আর যেখানে তারা নারীর ক্ষমতায়ন এর কথা বলছে সেখানে আদৌ কি ক্ষমতায়ন হচ্ছে বরং টাকা কিন্তু পুরুষের কাছেই চলে যাচ্ছে। অবাক করার মত বিষয় হল অনেক এনজিও ঋন দেয়ার পুর্বে ঋনগ্রহীতাদের তোতাপাখির মত শেখান যে,টিন বেচে ঋন পরিশোধের কথা।
আমার প্রস্তাবনা হল দরিদ্র শোষনের বিপক্ষে। আমি আসলে এমন কিছুর পক্ষে যেখানে ‘দরিদ্র’ সেবায় নামমাত্র লাভে কিংবা বিনা লাভে এই মহৎ কর্মটির সাধন হবে।
কিছুদিন আগে নীলফামারীতে আমার যাবার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেখানে লক্ষীচাপ ইউনিয়ন এ আমি নতুন একটি ধারনার সাথে পরিচিত হলাম। আমি দেখলাম সেখানকার ‘দরিদ্র জনগন’ ঋন গ্রহনে এনজিওর ধারে কাছেও যায় না।
বরং তারা গুরুত্মারোপ করছে গবেষনার প্রতি। যেটাকে আমরা গন গবেষনা বলতে পারি। এখানে গবেষনার মাধ্যমে তাদের নিজের সমস্যা তারা নিজেরাই চিহ্নিত করছেন এবং এর সমাধানের রাস্তাও তারা বের করছেন। গন গবেষনার একটা সুবিধা হল এখানে অনেকের অনেক মত উঠে আসে এবং সকলের সম্মতিক্রমে ভালটিকে গ্রহন করা হয়। এখানে উজ্জীবক বা এনিমেটর হিসেবে একজন থাকেন।
এনিমেটর তাদের মধ্য থেকে কিংবা বাইরে থেকেও হতে পারে। লক্ষীচাপ ইউনিয়ন এ গনগবেষনার মাধ্যমে তারা উদ্ভাবন করেছেন্ ধান ব্যাংক। এই ব্যাংকে তারা ধান এবং টাকা সঞ্চয় করেন। পরবর্তিতে মংগা মোকাবিলায় কিংবা অন্য প্রয়োজনে তারা এখান হতে নামমাত্র সুদে ঋন গ্রহন করতে পারেন। তাদের ভাষায় ঋনের সুদের টাকা তাদের মধ্যেই থাকছে।
তারা যা কিছুই করে না কেন, সবই হয় এই গবেষনার মাধ্যমে। এই ধান ব্যাংক পরিচালনার জন্য রয়েছে নির্বাহী কমিটি যা তাদের মধ্যেই নির্বাচিত হন। তাদের সাথে কথা বলে আমি জেনেছি যে আসলে টাকা পয়সা কিছু না বুদ্ধিই হল আসল। এই গবেষনার মাধ্যমে তারা যৌতুক,বাল্যবিবাহ,শালিস করা এবং অংশগ্রহন সহ অনেক সামাজিক ব্যাধি হতে সচেতন হতে পেরেছেন বলে তারা মনে করেন। তাদের গবেষনার একটি চমৎকার আবিষ্কার দেখলাম কিছু প্রি-প্রাইমারী স্কুল যেটি তাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়।
এখানে শিক্ষক হন তাদের গ্রামের বসে থাকা কেউ যে কিনা পড়াশুনা জানে। তার বেতন তারাই প্রদান করছেন। বাচ্চাদের পড়াশুনার জন্য কোন বই পুস্তকের ব্যবহার না করে এখানে বর্ণের ইমেজ নির্মানের প্রতি গুরুত্ম দেয়া হয়। এটাকে তারা পরাশুনা না বলে বলছেন আনন্দের মাধ্যমে এক ধরনের শিক্ষা যেখানে শিশুটি সকল কিছুই করতে পারে। বাচ্চাদের টিফিন প্রদান করেন প্রতি মা মাসে একদিন করে।
এক্ষেত্রে পুষ্টির কথা বিবেচিনা করে খিচুরিই বেশি দেয়া হয়।
শুধু এই নয় বরং সেখানকার মানুষজন গবেষনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান খোজে এবং তারা সফল ও হয়। এই সকল মানুষের এই যে গবেষনায় অংশগ্রহন,সমস্যা চিহ্নিতকরন,সমাধানে পৌছানো তা কিন্তু এমনি এমনি আসেনি আমার জানামতে এর পেছনে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে দুটি এনজিও রি ই ব এবং ইউ এস এস। তারা এখানে এনিমেটর তৈরি থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধরনের কাজে সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।
লেখার পরিসমাপ্তিতে আমার মূল প্রস্তাবনা হল,বিষয়টি যদি হয় ‘দারিদ্র’ নিরসনের তবে তা নিয়ে কখনোই ব্যবসা নয়।
বরং তাদের কষ্ট বোঝা এবং তা লাঘবে যথাসম্ভব নি;স্বার্থ বা অল্প স্বার্থে সহায়তা করাই মানবিক কাজের আওতায় পরে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।