আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেপথ্যে চাঁদাবাজি, হলের দখলদারি?



রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। গত শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িত অভিযোগে গতকাল রোববার দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার, পূর্বশত্রুতার জের, হলের দখলদারি ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আওয়াল কবির ও সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছে। শনিবারের সংঘর্ষ ছিল সেই বিরোধেরই বহিঃপ্রকাশ।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল জানানো হয়, কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বসম্মতিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। গত শনিবার ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আওয়াল কবির ও সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সভাপতি পক্ষের একজন সমর্থক গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি উভয় পক্ষের চারজন সমর্থক গুরুতর আহত হন। পাল্টাপাল্টি মামলা: মতিহার থানা সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় সংস্কৃত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলামসহ ১০ জনকে আসামি করে মতিহার থানায় মামলা করেন। মেহেদী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আওয়াল কবিরের সমর্থক বলে পরিচিত।

অপরদিকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আজিজুল হক সভাপতি আওয়াল কবিরসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করে একই থানায় পাল্টা মামলা করেন। আজিজুল সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। মতিহার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফ হোসেন বলেন, মেহেদী হাসানের করা মামলায় সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পাল্টা মামলায় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শরীফ ও আওয়াল কবিরের পক্ষের মামলার বাদী মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালছে।

এদিকে আদালত সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে মাজেদুল ইসলামকে রাজশাহী মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নেপথ্যে হলের দখলদারি ও চাঁদাবাজি: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রশিবিরের সশস্ত্র হামলায় ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেন নিহত হওয়ার পর ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হলগুলোতে অবস্থান নিয়ে চাঁদাবাজি ও দখলদারি শুরু করেন। কেউ চাঁদা দিতে অপারগতা জানালে তাঁকে দেখে নেওয়াসহ ছাত্রশিবিরের কর্মী বা ক্যাডার বলে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীরাই এই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

জিয়াউর রহমান হলের এক আবাসিক ছাত্র অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁর কাছ থেকে সম্প্রতি ২০০ টাকা চাঁদা নিয়েছেন। বিষয়টি হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগের নেতাদের জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শহীদ শামসুজ্জোহা হলের এক আবাসিক ছাত্রের অভিযোগ, ছাত্রশিবির ‘ইয়ানতের’ দোহাই দিয়ে কৌশলে চাঁদা আদায় করত। আর ছাত্রলীগ প্রকাশ্যেই চাঁদাবাজি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহ মখদুম (এসএম) হলের এক আবাসিক ছাত্র জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের আগে তিনি বাড়ি যান।

সংঘর্ষের কয়েক দিন পর হলে ফিরে দেখেন তাঁর কম্পিউটারসহ বেশ কিছু জিনিস খোয়া যায়। পরে তিনি জানতে পারেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁর কক্ষের তালা ভেঙে কম্পিউটারসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছেন। তিনি বিষয়টি হলের প্রাধ্যক্ষকে জানান। কিন্তু প্রাধ্যক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। এসএম হল সূত্র জানায়, ৮ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ৬৮ জন শিক্ষার্থী হলের সিট বাতিল করে চলে গেছেন।

Êএর আগে যোগাযোগ করা হলে প্রাধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র রায় জানান, দু-একজন করে শিক্ষার্থী হলের সিট বাতিল করে চলে যাচ্ছেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগেও অনেকে হলের সিট বাতিল করে চলে গেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সভাপতি ও সম্পাদকের সমর্থকের নামে দুটি পক্ষ ক্যাম্পাসে এসব চাঁদাবাজি ও দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে। দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ১৮ মার্চ ও ১ জুন বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন পুলিশ কনস্টেবলসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩২ জন আহত হন।

অভিযোগ অস্বীকার: কমিটির কার্যক্রম বাতিল প্রসঙ্গে আওয়াল কবির জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে রোববার বিকেল পর্যন্ত সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছ থেকে লিখিত কোনো কিছু হাতে পাননি। চাঁদাবাজি ও দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাঁর জানামতে, ছাত্রলীগের কেউ এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সভাপতি মলয় ভৌমিক বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাছ থেকে ছাত্রলীগের চাঁদা আদায়ের ঘটনা দুঃখজনক।

এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন পেয়ে মৌলবাদী সংগঠন ছাত্রশিবিরই শেষ পর্যন্ত লাভবান হবে। প্রক্টর চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কুদরাত-ই-খুদা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।