আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন্দু-রেমাক্রীর পথে ভয়ংকর পাথুরে সৌন্দ্যর্যের মাঝে



রেমাক্রী যাওয়ার আগে বান্দরবান ঘুরে যান বান্দরবানের অপার সৌন্দর্য, পাহাড় মেঘের আলিঙ্গন পার হয়ে আমরা থানচি থেকে আমাদের যাত্রার পরের পর্ব শুরু করলাম । সামনে আমাদের জন্য ঠিক কি অপেক্ষা করছে তার বিন্দুমাত্র কোন ধারনা নেই । থানচি বাজারের পাশেই বিডিআর ক্যাম্প । রিপোর্টিং এর জন্য যেতে হলো সেখানে । তাদের ভাষ্য মতে এই সময়টা তে লোকজন খুব একটা আসেনা আর নিরাপদ ও না ।

কারন বর্ষায় সাঙ্গুর পানি আর পাহাড়ি ঢল মিলে নাকি ভয়ংকর অবস্থা হয় । জুলাই এর ৬ তারিখেই নাকি একজন মারা গেছে । টেলিটক ছাড়া কোন ফোনের নেটওয়ার্ক নাই বিধায় বাইরের দুনিয়ায় সাথে সব যোগাযোগ একরকম বন্ধ । বিপদ-আপদের তো আর বালাই নেই তাই সবার নাম, ঠিকানা, জরুরী ফোন নাম্বার সব কিছু টুকে রাখলেন বিডিআরের জওয়ানরা । সাবধান করে দিলেন আসন্ন পাথুরে ভয়ংকর সাঙ্গু সম্পর্কে ।

নৌকায় উঠার আগে বাজার থেকে কিছু শুকনা খাবার (বিস্কুট, চিপ্স), পানি, ম্যাচ লাইটার, পলিথিনের ব্যাগ, সাবান এই সব হাবিজাবি নিয়ে আমরা নৌকায় চেপে বসলাম । নৌকা যাত্রা শুরু করলো একপাশে জনপদ আর এক পাশে পাহাড় মেঘের আলিঙ্গন পার হয়ে শান্ত সাঙ্গু বেয়ে । পাহাড় চূড়া আর মেঘের লুকোচুরি শুরু খেলা এরাই আমাদের সংগী । বিধাতা তুমি ফিরে যাও একটু দাঁড়াও যমদূত চিঠি এসেছে প্রিয়ার কাছ থেকে অদ্ভুত এক দাবী নিয়ে আকাশ মাটি যেথায় মেশে…থাকবে সেথা সে বসে দেখা হবে প্রথম বার…আমার সঙ্গে প্রিয়ার । ।

আস্তে আস্তে পাহাড়ি সাঙ্গু একটু একটু করে পাথুরে আর ভয়ংকর হতে লাগলো । হাজার হাজার পাথরের সারি । মাঝখান দিয়ে কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে সাঙ্গু । দুইপাশে খাড়া উচু পাহাড় সৃষ্টির আদিকাল থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে । মেঘবালিকার ভালোবাসার আলিঙ্গন পাহাড়ের চূড়া গুলোকে মাঝে মাঝে অদৃশ্য করে দিচ্ছে ।

দুই-এক ফোঁটা বৃষ্টির ধারা আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে । মেঘ, বৃষ্টি , পাহাড়, নদী এ যেন এক অপরুপ মিলনমেলা । ভাষার গাঁথুনি দিয়ে সবগুলোকে তুলে ধরা আমার পক্ষে অসম্ভব । আস্তে আস্তে পাথর আর বাঁকের পরিমান বাড়তে থাকে। প্রথম দিকের বাঁকগুলো এত ভয়ংকর ছিলোনা আর ঢালের পরিমান কম ছিলো তাই স্রোতের তীব্রতা ছিলো কম ।

বড় একটা বাঁক আসার পরে আমাদের মাঝি বাঁকের আগে নৌকা ভিড়িয়ে সবাইকে নেমে হেঁটে বাঁক পার হয়ে যেতে বলল । আমরা সবাই একটু মনক্ষুন্ন নৌকা থেকে নামতে বলায় । কিন্তু একটু পরেই আমাদের সে ভুল ভেঙ্গে গেল । কেন সে নৌকা থেকে নেমে যেতে বলেছে তা আমাদের কাছে এখন পরিস্কার । নৌকার ভর হাল্কা করে ঢাল ও স্রোতের উলটা দিকে সে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বাঁক পার করল ।

এরপর থেকে ঘটনা হল উলটা । কোন একটা বাঁক এগিয়ে আসে আর আমরা নিজেরাই বলি – ও মাঝে আমাদের নামিয়ে দাও এভাবে স্রোতের উলটা দিকে চলতে চলতে আমরা এক সময় সবাই মিলে গান শুরু করি । তীর হারা ঢেউয়ের সাগর থেকে শুরু করে জেমস, উইনিং, মাইলস সব শেষ হবার পথে কিন্তু আমাদের যাত্রা শেষ হয়না । হঠাৎ সৈকত শুরু করলো রবীন্দ্র সংগীত – "মেঘের পরে মেঘ জমেছে আঁধার করে আসে আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে . . .। ।

" চলবে . . .

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।