সেই ছেলেটি - ৩
শুধু বন্ধু বা সহপাঠীদের কাছে নয় শিক্ষকদের কাছে ও খুব বেশী প্রিয় হয়ে উঠল ছেলেটি। তার তৈরী করা নোট ছিল বন্ধুদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বস্তু। জুনিয়র ব্যাচগুলিতে ক্লাস লেকচার হিসাবে তার নোট ব্যবহার করত শিক্ষকেরা। দেখতে দেখতে ছেলেটি ক্যাম্পাসের জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে উঠে।
বন্ধুদের মাঝে এত জনপ্রিয় মানুষটির কিন্তু দম ফেলার সময় ও ছিলনা।
সপ্তাহে তিনদিন দেড়টা পর্যন্ত ক্লাস, দুই দিন পাঁচটা পর্যন্ত আর দুই দিন ছুটি। যে তিনদিন বিকালে ক্লাস থাকত না সে তিনদিন এবং ছুটির দিনগুলিতে সবচেয়ে বেশী ব্যস্ততা ছিল তার। কোচিং সেন্টারে ক্লাস, টিউশনি এসব নিয়েই কেটে যেত দিনগুলি, হলে ফিরত রাত ১১ টা নাগাদ। ফিরেই বন্ধুদের সাথে চলবে তার আড্ডা এবং রাত একটায় আড্ডা শেষে সে বসবে নিজের পড়াশুনায়। ভোর চারটা নাগাদ পড়ত সে।
বন্ধুরা অবাক হয়ে যেত তার এই দৈনন্দিন জীবন যাপন দেখে, সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি শেষে সবাই যখন ঘুমাতে ব্যস্ত ছেলেটি তখন ভোর চারটা পর্যন্ত জেগে থাকছে
সকালে উঠেই আবার ক্লাস, লাইব্রেরী এই ভাবেই ছেলেটি কাটিয়ে দেয় দিন। কিন্তু ছুটির দিনগুলি তার অন্য রকম। সকাল ৯ টা থেকে দুই ঘন্টা করে প্রতিদিন ৪ টা ক্লাস নিত কোচিং এ। এরপর সন্ধ্যাবেলায় বন্ধুদের নিয়ে হৈ হুল্লোড়, রাতে দলবেঁধে কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া এইসব আর কি।
এই ব্যস্ত ছেলেটির জীবনে হঠাৎ এক পরিবর্তন এলো, তখন ও তৃতীয় বর্ষে।
ভর্তি কোচিং এ জনপ্রিয় ছেলেটির অনেক ছাত্র-ছাত্রীই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করত জুনিয়র হিসাবে, তাই জুনিয়রদের মধ্যে ছিল তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এমনিতে তার কাছে কোচিং করে চান্স পেয়েছে জুনিয়ররা তার উপর ক্যাম্পাসে এসে তার নোটই রেফারেন্স, কাজেই সবার নয়নের মনি হয়ে উঠে ছেলেটি। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। সব দলেরই টার্গেট ছেলেটি, সবাই তাকে নিজেদের দল থেকে ভিপি হিসাবে মনোনয়োন দিতে চায়। কিন্তু ছেলেটি কোন দলেরই কর্মী বা সমর্থক কোনটিই ছিল না।
সব দলকে সে ফিরিয়ে দিলো। কিন্তু সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরা কোন ভাবেই তাকে ছাড় দিতে রাজী নয়। ভিপি হিসাবে তাকেই চাই তাদের।
ছেলেটি কোনভাবেই তাদেরকে কনভিন্স করতে পারলো না, শেষে তার বন্ধুরা বসে সিদ্ধান্ত নিলো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে সে নির্বাচন করবে, কিন্তু সেখানেও ছেলেটির আপত্তি, অবশেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী নয় স্বতন্ত্র প্যানেল নামে একটি প্যানেল তৈরী করে তারা নির্বাচনে নামলো, এবং ইতিহাস গড়লো তারা। সব কটি পদেই স্বতন্ত্র প্যানেল বিজয়ী হলো নির্বাচনে।
আর প্যানেলের প্রতিটি সদস্যই ছিল প্রচন্ড মেধাবী, আর ছাত্র কল্যানে নিবেদিত কিন্তু কারোরই কোন রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।