আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাখি-মানুষে সখ্য



প্রফুল্লবাবু হাঁক দিয়ে বিড়ির প্যাকেটটা চাইলেই হল। উড়তে উড়তে প্যাকেট নিয়ে প্রফুল্লবাবুর সামনে হাজির হয়ে যায় ভক্ত। মুখ ফুটে বললে ওসুধের শিশিও সামনে হাজির করে দেবে ভক্ত। একরত্তি প্রাণি। তাঁর প্রতি এমন টান দেখে প্রফুল্লবাবুরও চোখের দু’কোণ সিক্ত হয়ে ওঠে।

সারাদিন কাজে কর্মে যেখানেই যান, ভক্ত তাঁর সঙ্গী। লোকে ভক্তকে দেখে অবাক হয়। আরও অবাক হয়, হুকুম করা মাত্র তা তামিল দেওয়ার উৎসাহ দেখে। টিয়াপাখির সঙ্গে বারশার লস্করপাড়ার প্রফুল্ল দাসের এমন ভাব-ভালবাসার কথা লোকের মুখে ঘুরছে। বছর খানেক আগে বাড়ির পুকুর পাড়ে ভক্তকে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন প্রফুল্লবাবু।

ভাল করে উড়তেও শেখেনি। কাক ঠোকরাচ্ছে দেখে ঘরে এনে তুলেছিলেন। বাগান থেকে লঙ্কা, পেয়ারা খাওয়াতেন। সেই থেকে ভক্তের সঙ্গে প্রফুল্লবাবুর ভাব। এক বছরে ভক্তের উপরে এমন টান তৈরি হয়েছে যে সকালে ভক্তের মুখে দুটো দানা দিতে না-পারলে নিজে কিছু মুখে দেন না প্রফুল্লবাবু।

ভক্ত সংসারে এসে প্রফুল্লবাবুকে ঘরমুখি করে তুলেছে। এখন সারাদিন তাঁর ধ্যানজ্ঞান পাখি। প্রফুল্লবাবু বলেন, “মেয়ে দুটোর বিয়ের পরে ওকে নিয়েই দিন কাটে। ” পাখি পোষা কোনও একটা নতুন বিষয় নয়। কিন্তু টিয়াপাখিটিকে যে ভাবে দিনরাত প্রফুল্লবাবু আগলে রাখেন সেটা এলাকার বনকর্মীদেরও অবাক করেছে।

-শামুকতলা ............................................................ চোয়ালে সেলাই করে বাঁচানোর চেষ্টা সাপকে এ এক অন্য লড়াইয়ের কাহিনী! করাতকলে কাঠের গুঁড়ির নীচে দু’দিন ধরে চাপা পড়ে মৃত্যুমুখে চলে যাওয়া একটি প্রাণীকে বাঁচিয়ে তোলার এই লড়াইয়ে সামিল শিলিগুড়ির একদল পশুপ্রেমী। জখম প্রাণীটির চোয়ালের ছিঁড়ে যাওয়া অংশে ৫টি সেলাই করিয়ে টানা ১৫দিন ধরে চিকিৎসা চালিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখছেন তাঁরা। টানা অ্যান্টিবায়োটিক ও মলম দিয়ে ঘা কিছুটা সেরেছে। এখনও সে নিজে খেতে পারছে না। নল দিয়ে তাকে ডিমের কুসুম খাওয়ানো হচ্ছে।

দেওয়া হচ্ছে ‘ইলেকট্রালে’র ড্রপ। কিছুটা সুস্থ হয়ে সে দু-দফায় ১৪টি ডিমও দিয়েছে। এখন সেটিকে সুস্থ করে জঙ্গলে ফেরাতে চান হিলকার্ট রোডের ব্যবসায়ী শ্যামা চৌধুরী(বাঁকাদা নামে ডাকলেই যে প্রৌঢ বেশি খুশি হন) ও তাঁর সহযোগীরা। সাপের শুশ্রূষায় ‘বাঁকাদা’ সে মানে একটি ৪বছর বয়সী স্ত্রী দাঁড়াশ সাপ। ওজন প্রায় দেড় কেজি।

দৈর্ঘ্য সাড়ে ৫ফুটের সামান্য বেশি। শিলিগুড়ির মহানন্দাপাড়া লাগোয়া সরকারি করাতকলেই ছিল তার বিচরণ। গত ১৭ই জুলাই বিকেলে সেখানে কাঠের নীচে চাপা পড়ে যায় সে। সামনে গেলে বিপদ হতে পারে এই ভেবে কেউই সেদিকে যাননি। ১৯শে জুলাই বেলা ১২টায় সেই খবর পান ‘অ্যানিম্যাল লিঙ্ক ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র কর্মকর্তা বাঁকাবাবু ও তাঁর সহযোগীরা।

কাঠের গুঁড়ি সরিয়ে মৃতপ্রায় সাপটিকে তুলে শিলিগুড়ির পশু হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। চিকিৎসক রহুল আমিন পরীক্ষা করে জানান, চোয়াল থেকে যে অংশটা থেঁতলে গিয়েছে তা সেলাই করাতে হবে। তাতে বেঁচে যাওয়ার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরেই সেলাই করানো হয়। ঘটনাচক্রে বন দফতরের একটি সমীক্ষার কাজে সাপ বিশেষজ্ঞ দীপক মিত্র শিলিগুড়ির সুকনায় রয়েছেন।

ওই দিনই সাপটিকে তাঁর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি সেটিকে সুস্থ করতে টানা পরিচর্যা করার পরামর্শ দেন। কিছুটা সুস্থ হতেই সাপটি বাক্সের মধ্যেই ১১টি ডিম পাড়ে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে একটি হাঁড়িতে মাটি ভরে তার উপর ডিমগুলি রেখে হাঁড়িটি জঙ্গলে রেখে আসা হয়। দু’দিনের মাথায় সেটি আরও দু’টি ডিম দেয়।

আপাতত ডিম দু’টি বাক্সে আছে। প্রথমে মাথা নাড়াতে না পারলেও এখন অল্পস্বল্প মাথা নাড়াচ্ছে। মাথা ও মুখ স্বাভাবিক ভাবে নাড়াতে পারলেই কিন্তু দাঁড়াশটিকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। বাঁকাবাবু বলেন, “ও আগের চেয়ে অনেক সুস্থ। মেয়ে সাপের গা থেকে যে কটু গন্ধ বার হয় তা দু’দিন থেকে পাওয়া যাচ্ছে।

এটা স্বাভাবিকতা ফেরার লক্ষণ। মাথা ও মুখ স্বাভাবিক হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে ছোট ব্যাঙ খাওয়ানোর চেষ্টা হবে। যদি দেখা যায় পারছে না তা হলে আরও একটু চিকিৎসা চালানো হবে। ” খাবার শিকার করার ক্ষমতা ফিরে না পেলে কী হবে, তাও ঠিক করে ফেলেছেন পশুপ্রেমী সংস্থার সদস্যরা। ওঁরা বললেন, “একটি বড় মাপের কাচের অ্যাকোয়ারিয়াম বানিয়ে তাতেই ‘চঞ্চলা’কে রেখে দেওয়া হবে।

নিজেরাই খাইয়ে দেব। ” হ্যাঁ, কিছুটা চঞ্চল হয়ে পড়ার পর থেকে ‘পরিবেশ-বান্ধব’ হিসেবে পরিচিত নির্বিষ সাপটিকে ওই নামেই ডাকছেন বাঁকাবাবুরা। । -কিশোর সাহা, শিলিগুড়ি তথ্যসূত্রঃআনন্দবাজার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।