আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন কন্যার মা



পিতামাতাহীন রমেলাকে চোখের জলে স্বামীর সংসার ছেড়ে ভাই ভাবীর সংসারে এসে আশ্রয় নিতে হয়েছে। তার সাথে রয়েছে তিনটি অবুঝ শিশু কন্যা। বড় মেয়ের বয়স পাঁচ বছর, মেঝোটার তিন বছর আর ছোটটার মাত্র ৪ মাস। রমেলার দোষ, সে বারবার কন্যা সšানের জš§ দিচ্ছে। স্বামী ও তার পরিবারের সবাই যেখানে মনে প্রাণে পুত্র সšান চাইছে সেখানে সবার ইচ্ছাকে উপো করে বারবার কন্যা সšান জš§ দেয়াটা রমেলার ধৃষ্টতাই বটে।

পুত্র সšান জš§দানে অম অযোগ্য বউ দিয়ে আর কাজ কী? অতএব ওকে তাড়াও। শাশুড়ী, ননদের আড়াই ইঞ্চি লম্বা জিহ¦া আর যোগ্য স্বামীর সাড়ে তিন হাত লম্বা শক্ত লাঠির অকথ্য জ্বালা-যšণা, অত্যাচারে জর্জরিত রমেলা চরম অবজ্ঞা অবহেলায় দুর্বল শরীর নিয়ে অভাগা তিনটে কন্যা সšানসহ যখন ভাইয়ের সংসারে এসে উপস্থিত হলো তখন ওই পরিবারের ওপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বিবাহিতা কন্যা বা বোন স্বামীর বাড়ি থেকে দই মিষ্টি পান সুপুরি নিয়ে আকর্ণ হাসির রেখা টেনে যখন ছেলে পুলে নিয়ে বাপ ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে তখন আনন্দে গর্বে বুকটা ফুলে উঠে। আনন্দ উৎসবে কেটে যায় সময়। তার সুখ শাšির কথা ইনিয়ে বিনিয়ে বলে পরম তৃপ্তি লাভ করে সবাই।

কিন্তু স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে যে কন্যা বা বোন বাপ ভাইয়ের সংসারে এসে হাজির হয় - সমাজ সংসারে তারচেয়ে ভারী বোজা আর হয় না। রমেলার ভাগের পৈত্রিক স¤পত্তি ভোগ করছে যে ভাই সেই ভাই ভাবীর সাথে মাস দেড়েক থেকেই রমেলা বুঝতে পারছে সে উত্তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলš উননে পড়েছে। তার জমি আছে কিন্তু তাতে কোন অধিকার নেই। খেয়ে না খেয়ে, অন্যায়-অত্যাচারে, ভাই ভাবীর খোটা, গীবৎ, পাড়া পড়শীর ফিসফিসানী আর নানা কুসংস্কারের তান্ডবে দিশেহারা রমেলা বহুবার স্বামীর সংসারে ফিরে যাওয়ার আকুতি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু পুত্র সšান জš§দানের নিশ্চয়তা না থাকায় তার স্বামীর সংসারে যাওয়াটাও অনিশ্চিত হয়ে গেল।

সুযোগ্য স্বামী ও শাশুড়ী পরিস্কার জানিয়ে দেয়- আমাদের বাড়িতে তোকে, এমনকি তোর তিন কন্যাকেও আর গ্রহণ করা হবে না। ভাগ্যবিড়ম্বিতা রমেলা শুধু নারীই নয়; সে মাও বটে। পিতা যেভাবে সšানকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারে মা তেমনটি পারে না। নিজের জীবন যায় কিন্তু সšান ছাড়ে না কোন মা। রমেলাও ছাড়েনি।

রমেলার স্বামী নেই, সংসার নেই, পায়ের নিচে মাটি নেই। চারদিকে অন্ধকার! উপায়হীন রমেলা এতে ভেঙ্গে না পড়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করতে থাকে। এনজিওর এক মাঠকর্মীর সাথে আলাপ করে রমেলা সদস্য হয়ে যায়। সে এনজিও হতে মাত্র ৩ হাজার টাকা ঋণ তুলে নতূন জীবনে প্রবেশ করে। প্রতিবেশী নরীর সহযোগিতায় সে বাজার থেকে পান, সুপারি, তেল, শঁটকি ও চকোলেট কিনে এনে এগুলো এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করতে থাকে।

অল্প পুজির এই ব্যবসায় যে আয় হয় তাতে তিন কন্যা নিয়ে সে ভালই চলতে পারে। রমেলা ক্রমেই আতœপ্রত্যয়ী, অভিজ্ঞ ও সাহসী হয়ে ওঠে। অবলা নারীর সাথে বিপুলা পৃথিবীর কঠিন বা¯বতার দরত্ব যতই কমতে থাকে ততই সফল হতে থাকে সে। এলাকার লোকজন বিশেষ করে গৃহিনীদের সাথে তার ব্যবসায়িক সখ্যতা গড়ে ওঠে। অর্বাচীন গৃহবধ রমেলা এখন পাকা ফেরি ব্যবসায়ী।

নিজের আয়ের টাকায় সে বাপের ভিটায় ছোট একটা দো-চালা ঘর করে আলাদা থাকতে শুরু করে। সে প্রথম দফার ঋণ পরিশোধ করে ২য় দফায় দ্বিগুণ ঋণ তুলে দ্বিগুণ উৎসাহে এগিয়ে চলতে থাকে। দুই বছরের মাথায় রমেলা পেল গৃহ ঋণ আর পল্লীফোন। নিজের ঘরটাকেই সে আয় উপার্জনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে। রমেলাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

তিন কন্যার দুর্ভাগা মা রমেলা জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে এই পুরুষতাšিক সমাজে আতœনির্ভরশীল নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। রমেলা এখন পরনির্ভরশীল নয়; আতœপ্রত্যয়ী স্বনির্ভর নারী। এখন তার স্বামী আদরের তিন কন্যা ও ভাগ্যবতী বধকে সংসারে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করছে। রমেলা ােভে, অভিমানে স্বামীর ঘরে আর যাবে না বলে ওদের জানিয়ে দেয়। কিন্তু আপন ঘরের লœী পরের ঘরে থাকবে কেন? তারা রমেলাকে সস¤মানে বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য এলাকার ময়মুরুব্বী ধরেছে।

মুরুব্বীরা পষ্ট বলে দিয়েছে, রমেলা এখন স্বামীর ঘরে যাবে কি যাবে না এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।