সকাল আনুমানিক দশটা। সারারাত বৃস্টির পর রাজত্য এখন সূর্য্যদেবের দখলে। গরমে শরীর থেকে বের হওয়া পানি সূর্য্যদেবের তৃষ্ঞা মেটাতে ব্যস্ত। সবাই ছুটছে যার যার গন্তব্যের দিকে। ছোট ছেলেমেয়ে এবং আরও কারও গন্তব্য স্কুলের দিকে।
তার চেয়ে একটু যারা বড় তদের গন্তব্য কলেজ অথবা ভার্সিটি। আবার কারও গন্তব্য অফিস। যারা সরকারী চাকুরে, চিরায়ত কারনে তদের মাঝে ছোটাছুটির উত্তেজনাটা কিছুটা কম। কিন্তুু যারা বেসরকারী চাকুরে তদের ব্যস্ততাটা কিছুটা বেশী। এ রকম এক ব্যস্ত সকালে রাস্তা-ঘাট ফাঁকা থাকাটা কিছুটা অস্বাভাবিক।
কোনো একজন V.I.P বিমানবন্দরে এসে নেমেছে। তার গাড়িবহর যে রাস্তা দিয়ে যাবে সে সকল রাস্তায় যান চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ। এজন্যই রাস্তা-ঘাট এরকম ফাকা।
রাস্তা-ঘাট ফাকা থাকলেও ফুটপাতে অনেক মানুষের ভীর। সকলেই চোখেমুখে একঝাক বিবক্তি নিয়ে রাস্তার দুই পাশে দাড়িয়ে আছে আর ভাবছে এই "সাময়িক" সময়টা আর কতক্ষন দীর্ঘায়িত হবে।
অন্য সকলের মত, চোখে-মুখে, মনে এবং অন্য যত জায়গায় সম্ভব সব জায়গার বিরক্তি নিয়ে আমি দাড়িয়ে আছি খিলক্ষেত ওভারব্রিজের নিচে, রাস্তার এক পাশে। সবচাইতে বেশি বিরক্ত সম্ভবত তারাই হচ্ছে, যাদের রাস্তাটা পার হলেই হয়ে যাই। কিন্তু V.I.P এর আগমনের কারনে ওভারব্রিজের উপর দিয়েও চলাচল বন্ধ। তাই এদের অবস্থা তীরে এসে তরী ডোবার মত। শুধু সারা দুনিয়ার সকল ব্যস্ততা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশেরা ছুটাছুটি করছে ।
মানুষতো দুরের কথা কাকপক্ষীও যাতে রাস্তায় আসতে না পারে সে ব্যপারে তারা প্রতিঙ্গাবদ্ধ। একটা বেখায়ালি কুকুর রাস্তায় ঢুকতেই তারা সেই প্রতিঙ্গার প্রমান রাখল। তীব্র শব্দ করে উপর দিয়ে উড়ে গেল একটি বিমান। পাশে দাড়াক ট্রাফিক সার্জন চোখে বিরক্তি নিয়ে উপরেস দিকে তাকাল। মনে মনে হয়তবা বল্ল, এ সময় আবার এত শব্দ কেন? নিশব্দে উড়ে গেলেই হয়।
সকলের উত্তেজনা আর বিরক্তি বাড়িয়ে দিয়ে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। একজন বয়স্ক ভদ্রলোক তার যুবক ছেলের কাধে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে। মনে হয় অসুস্থ। যুবক ছেলেটি নেমে গেল রাস্তায়। আশা, যদি ট্রাফিক পুলিশকে ম্যনেজ করে একটা ট্যাক্সী ভাড়া করা যায়।
কিন্তু কিছু বলার আগেই ধমক খেয়ে আবার নিজের জাযগায় ফিরে এল। আসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকল রাস্তার দেকে।
ভীর বেরেই চলছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোদ আর বিরক্তি। নাহ, আর দেরী করা সম্ভব না।
অনেকেই হাটা শুরু করে দিয়েছে। সিদ্ধান্ত নিলাম তাদের দলে যোগ দেবার। ঠিক তখনই চোখ পড়ল ওভারব্রিজের সিঁড়ির নিচে শুয়ে থাকা ভিখেরির দিকে। শতছিন্ন শাড়ি দিয়ে লজ্জা নিবারনেস ব্যার্থ চেষ্টা। কাদামাখা শড়ীর দেখলেই বোঝা যায় গতকাল রাতের বৃষ্টিতে আশ্রটুকুও জোটেনি।
হয়তবা আহারও না। দুহাতে ভর দিয়ে চেষ্টা করল উঠে দাঁড়ানোর। পারল না। আরেকবার, আরেকবার চেষ্টা কর বাংলাদেশ। তুমিই পারবে।
আজ না হোক, কাল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।