জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
০১.
আমার গৃহশিক্ষক ছিলেন উনি। ভীষণ শ্রদ্ধা করতাম ভদ্রলোককে। যে বয়সে মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, সেই বয়সে তিনি আমাকে নৈতিকতা শেখাতেন। শেখাতেন, কিভাবে মানব থেকে মহামানব হয়ে যায় একজন মানুষ। বলতেন, কম খাবে, কম ঘুমাবে, কিন্তু পড়াশোনা করবে সবচেয়ে বেশি।
যত বেশি জানবে, ততই জীবন হবে সার্থক। আমরা একবার মাত্র জন্ম নেই। সারা জীবন পড়ে গেলেও তো এই পৃথিবীর সামান্য জানতে পারব।
আমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আমার কাছে তাকেই মহামানব মনে হত।
স্বপ্নবান কিশোরের কাছে সদ্য তরুণ গৃহশিক্ষকের মহান বাণী এই রকম অমৃত বাণীই মনে হয়।
তার বাড়িতে যেতে চাইলে তিনি সংকোচ বোধ করতেন। কিন্তু একদিন তার বাড়িতে গিয়েছিলাম তাকে না জানিয়েই। খুব গবীর পরিবারে তার জন্ম। অনেকগুলো ভাই-বোন।
মা নেই। বাবা বুড়ো হয়ে গেছেন বলে কোন কাজ কর্ম করতে পারেন না। ভাইবোনেরা যে যা পারে করে পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছে।
তারপর দীর্ঘদিন উনার সাথে দেখা নেই। আমি পড়াশোনার পাট চুকিয়ে চাকুরি করছি।
একদিন আমার ছোট ভাইয়ের কাছে উনার বৃত্তান্ত শুনলাম। উনার নাকি বিশাল আলিশান অবস্থা। কী ভাবে ? উনি এখন সাব রেজিস্ট্রার।
আমার কৈশরকালের সেই মহাপুরুষের বাড়িতে একদিন গিয়েছিলাম কৌতুহলবশত। সত্যি তার আলিশান অবস্থা।
কথায় কথায় তিনি আমার কাছে প্রস্তাব দিলেন, আমাকে একটা চাকুরি তিনি দিতে পারেন, কিন্তু কিছু খরচপাতি মানে ঘুষ দিতে হবে। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
আমার সেই মহামানব যে নিতান্তই একজন কাদামাটির মানুষ সেটা জেনে আমার পূর্বের বিশ্বাস ভেঙ্গে খান খান হয়ে গিয়েছিল। আসলে কেউ মহামানব না। এই দেশে সবাই সুযোগের অভাবে চরিত্রবান।
০২.
বাংলাদেশে জমি কেনা বেচা করতে গিয়ে ঘুষ দেন নি, এমন মানুষ একজনও নাই। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের চেয়ার-টেবিল, ইট-কাঠ, পিয়ন চাপরাসি থেকে শুরু করে বড় কর্তা সবাই ঘুষখোর। একজন সাব রেজিস্ট্রারের শরীরে যত মাংস আছে, তার চেয়ে বেশি ঘুষের গন্ধ আছে।
অনেকে বলতে পারেন, এইভাবে সবাইকে ঘুষখোর বলা কি ঠিক হল ? দু' চারজন হয়তো সুযোগের অভাবে চরিত্রবান থাকতে পারেন। কিন্তু সেটা নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা এবং ব্যতিক্রম।
ব্যতিক্রম তো আর উদাহরণ হতে পারে না।
সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মতো ঘুষের মন্দিরে যারা সৎলোক আছেন, তাদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। এই রকম ঘুষের মন্দিরে থেকে যেহেতু তারা সৎ থাকতে পেরেছেন, তারা প্রকৃতই সৎ লোক। কিন্তু সঙ্গদোষে লোহা ভাসে বলে আপনারাও আজ বদনামের ভাগীদার।
এবার একটা সংবাদ শেয়ার করা যাক।
আজ নারায়ণগঞ্জের একটি স্থানীয় পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সাব রেজিস্ট্রার সাহেব কিভাবে তার অফিসখানাকে ঘুষের মন্দির বানিয়েছেন, সেটা এই সংবাদটি পড়লেই পরিষ্কার বোঝা যাবে এবং এতক্ষণ গৌরচন্দ্রিকার মাহাত্ম্যও প্রকাশ পাবে।
সকলের মতামতের জন্য সংবাদটি পেশ করা হল --------
রূপগঞ্জ ঘুষ না দেয়ায় সাব-রেজিষ্টারের কক্ষে
চেয়ারম্যান-রেজিষ্টার মিলে পিটিয়েছে দলিল গ্রহীতাকে
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি :
দলিল করা বাবদ ঘুষ না দেয়ার কারনে রূপগঞ্জ সাব-রেজিষ্টারের খাস কামরায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও রেজিষ্টার মিলে পিটিয়েছে এক নিরিহ দলিল গ্রহিতাকে। আটক করা হয়েছে তার দলিল খানা। উল্টো চাঁদাবাজির মামলায় ফাসিয়ে দেয়া হয়েছে ঐ ব্যক্তিকে।
মঙ্গলবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, উপজেলার নগরপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মামুন মিয়া মঙ্গলবার দুপুরে তারই আপন চাচাতো ভাই-বোনদের কাছ থেকে এক টুকরো জমি ক্রয় করছিলেন্ উল্লেখিত জমির দলিলখানা রূপগঞ্জ সাব-রেজিষ্টার আব্দুল রাজ্জাকের সামনে সাবমিট করা হলে অংশীদারের জমি বলে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। সে সময় তার খাস কামরায় বসে থাকা কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন গ্রহিতা মামুন মিয়াকে ২০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে স্বাক্ষর করানোর প্রস্তাব দিলে মামুন চেয়ারম্যানকে দালালি না করার জন্য অনুরোধ জানান। এতে চেয়ারম্যান ও রেজিষ্টার উভয়েই ক্ষিপ্ত হয়ে মামুন মিয়াকে এলোপাথারী চড়,ঘুসি ও লাথি মারতে থাকেন। পরে চেয়ারম্যান পুলিশ এনে মামুনকে ধরিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে উক্ত চেয়ারম্যান বাদী হয়ে নিরিহ দলিল গ্রহীতা মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা ও দায়ের করেছেন।
উল্লেখ্য রূপগঞ্জ সাব-রেজিষ্টি অফিসে শোনা যায় সাব-রেজিষ্টার ৭০ লাখ বিনিময়ে এখানে বদলি হয়ে এসেছেন। সাব-রেজিষ্টারের টাকসাল হিসেবে পরিচিত তার ব্যক্তিগত কর্মচারি বাদশার মাধ্যেমে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার উৎকোচ গ্রহন করছেন। রূপগঞ্জ সাব-রেজিষ্টি অফিস ঘুষের মন্দির হিসেবেই মানুষের কাছে অধিক পরিচিত।
কী দেশে থাকি আমরা যে ঘুষ না দেয়ার অপরাধে (?) মারধর ও মিথ্যা মামলা খেতে হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।