ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অ্যারোবিক বা শুকনাপদ্ধতি নামে বোরো ধান চাষের সম্পূর্ণ নতুন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এতে বোরো ধানে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সেচের পানি সাশ্রয় হবে, ধানের ফলনও হবে বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানাচ্ছেন
তাওহিদুল ইসলাম
বোরো ধান চাষে প্রচুর পানির দরকার। তাই বোরো মৌসুমে বিদ্যুৎ ঘাটতিও পেঁৗছায় চরমে। বেড়ে যায় জ্বালানির চাহিদা।
নিচে নেমে যায় পানির স্তর। দেবে যায় ভূমি। মাটিতে বাড়ে লবণাক্ততা, লোহা ও আর্সেনিক। এসব সমস্যা কাটাতে ম্যাজিক পাইপ পদ্ধতিতে বোরো চাষের ২০-৩০ শতাংশ পানি সাশ্রয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেনি গবেষণা।
২০০৬ সাল থেকে 'বোরো ধানে শুকনো পদ্ধতির উন্নয়ন' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গবেষণা শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। তিনি ও তাঁর গবেষণা দল আবিষ্কার করেছেন বিশেষ অ্যারোবিক পদ্ধতির চাষ। এতে অর্ধেক সেচেই ফলবে ফসল।
ড. মশিউর রহমান জানান, অ্যারোবিক বা শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষের জন্য শুকনা জমিতে প্রাইমিং (নির্দিষ্ট সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখা) করা ধানের বীজ নির্দিষ্ট দূরত্বে বপন করতে হয়। পরে প্রয়োজন মতো সেচ দেওয়া হয়।
এ পদ্ধতিতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বপন করা যেতে পারে। নতুন পদ্ধতির জন্য ব্রি ধান ২৯ সবচেয়ে ভালো। তবে বিনা ধান ৬, ব্রিধান ৪৭ ও ব্রি ধান ২৮ জাতের চাষ করা যেতে পারে। ধানের বীজ প্রথমে ২৪-৩০ ঘণ্টা পানিতে ভেজানো হয় এবং পরে ২৪-৩০ ঘণ্টা সময়ে ধানবীজের মুখ ফাটা অবস্থা তৈরি করা হয়। আমন ধান কাটার পরে প্রয়োজন মতো চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করতে হবে।
জমিতে রস না থাকলে সেচ দিয়ে পরে জো অবস্থা তথা উপযুক্ত করে নিতে হবে। হাতে অথবা যন্ত্রের সাহায্যে ২৫ সে.মি. দূরে দূরে লাইন এবং প্রতি লাইনে ১৫ সে.মি. দূরে দূরে ৩-৫ সে.মি. গভীর গর্তে ও প্রতি গর্তে ৪-৬টি বীজ বপন করা হয়। জমির উর্বরতা ও ধানের জাতভেদে সারের মাত্রা নির্ধারিত হবে। গোবর, কম্পোস্ট, টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও দস্তা সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া চার কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
যন্ত্র বা নিড়ানির মাধ্যমে আগাছা দমন করা যাবে। অ্যারোবিক পদ্ধতিতে আগাছার আক্রমণ রোধ করতে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে দুই বা তিনবারের বেশি নিড়ানি দরকার হয়। নিড়ানি খরচ বেশি হলেও পানি ও চারা রোপণের খরচ কম লাগে বলে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। বপনের পরে হালকা সেচ দিতে হবে। এরপর ৬০-৭০ দিন পর থেকে প্রয়োজন মতো ৭-১০টি সেচ দিতে হবে।
ড. মশিউর আরো জানান, অ্যারোবিক পদ্ধতিতে বপন থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত খুব অল্প পরিমাণ সেচ লাগে। থোড় আসার সময় থেকে বীজ পুষ্ট হওয়ার সময় পর্যন্ত জমিতে সামান্য পানি রাখা ভালো। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এ পদ্ধতিতে পোকা-মাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণও কম হয়। রোগের আক্রমণ হলে আইপিএম অথবা আইসিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে তা দমন করতে হবে। প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অ্যারোবিক পদ্ধতিতে বীজ থেকে চারা হতে ১৫-২০ দিন কম সময় লাগে।
তবে চারা রোপণের দিন থেকে ফসল কর্তনে অ্যারোবিক পদ্ধতিতে ১০-১৫ দিন বেশি সময় লাগে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) ও ডেনমার্কের সংস্থা ডানিডার অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের অন্য গবেষকরা হলেন পিএইচডি শিক্ষার্থী এখলাস উদ্দিন ও মেহেদী মাসুদসহ ১৭ জন এমএস শিক্ষার্থী। গবেষণা শুরুর পর এ বছরই প্রথম প্রকল্পের অধীনে দিনাজপুর, রাজশাহী, নেত্রকোনা ও টাঙ্গাইলে পরীক্ষামূলকভাবে মাঠ পর্যায়ে শুকনো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করা হয় ইতিমধ্যেই তিন জেলার উৎপাদিত বোরো ধান সাফল্যের সঙ্গে কাটা সম্পন্ন হয়েছে।
দিনাজপুরের সদর উপজেলার কৃষক নুরুল আমিন ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক গোলাম খায়ের 'সন্ধানী'কে জানান, তাঁরা নতুন উদ্ভাবিত শুকনো পদ্ধতিতে খুবই লাভবান হয়েছেন। এ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ খরচ খুবই কম।
তা ছাড়া বীজতলা করার ঝামেলা না থাকায় শ্রমিক খরচও কমেছে। একরপ্রতি পাঁচ মণ ধান বেশি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন নুরুল আমিন। আবার একরপ্রতি বেঁচে গেছে কমপক্ষে চার হাজার টাকা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, 'এলাকার প্রায় সব কৃষক নতুন শুকনো চাষাবাদ পদ্ধতির সুফল পেয়েছেন। কয়েকজন এরই মধ্যে এ পদ্ধতিতে রোপা আমন চাষের উদ্যোগ নিয়েছে।
'
গবেষণা সহকারী মেহেদী মাসুদ বলেন, আমাদের এ গবেষণা দিনাজপুরে প্রায় ৭০ ভাগ সেচ খরচ কমাতে সফল হয়েছে। সারা দেশে এ পদ্ধতির সম্প্রসারণ করলে বছরে দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব।
View this link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।