আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুই যেখানে থাক, ভাল থাক

চলতে এখনও করিনি শুরু, খাঁচার ভেতর কেবল উড়ুউড়ু!!

মনির হোসেন, আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমরা একসাথে তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত পড়েছি। তারপর ওর বাবা বদলি হয়ে পাবনা চলে যায়। পাবনা চলে যাবার পর মাঝে মাঝে মনিরকে আমি চিঠি দিতাম তবে নাম লিখতাম না। ওকে চিঠিতে বলতাম যদি চিনিস তবে আমার চিঠির উত্তর দিস।

মনির উত্তর দিত। কিন্তু আমার ঠিকানায় না অন্য ঠিকানায় । মনির যাকে ভাবত যে সে তার বন্ধু, তাকেই দিত। আমি কিন্তু কিছু মনেকরি নি। মনির মাঝে মাঝে রংপুর আসত।

সবার সাথে ঘুরত, সবাইকে খাওয়াত। আমি খবর পেলে ওর সাথে দেখা করতে যেতাম। তবে কখনই আমি খবরটা আগে পেতাম না। মনির খুব আড্ডাবাজ ছিল। তাই কোনদিনও ওর বন্ধুর অভাব হয়নি।

তার উপর দুই ভাই সিঙ্গাপুরে থাকে টাকাও ছিল ভালই। টাকার চেয়ে সবচেয়ে বেশি ছিল তা হল ওর বন্ধুদের প্রতি টান আর একটা সুন্দর মন। একদিনের একগল্প বলি মনির পাবনা থেকে রংপুর এসেছে। তখন আমরা কলেজে পড়ি। সারাদিন ঘুরে ফিরে বাসায় ফিরছি তখন অনেক রাত।

মনিরের মামার বাসা আমি যেখানে থাকি তার অনেক কাছে তাই অন্য বন্ধুদের বিদায় দিয়ে আমরা দুইজন একই রিক্সায় উঠলাম। বাসার সামনে নেমে যখন রিক্সা ভাড়া দিব তখন মনির দেখল ওর কাছে খুচরা নাই। আমি রিক্সা ভাড়া দিয়েদিলাম। কিন্তু মনির আমাকে কিছুতেই ভাড়া দিতে দিবে না। তখন আমার কঠিন সময় যাচ্ছিল ও তা জানত।

পরে পকেট থেকে ১০০ টাকার নোট বের করে দিয়ে আমাকে বলল রেখেদে কাজে লাগবে। মনির তোর কি মনে পড়ে? আমি সেই দিন টাকাটা নিই নি। তোকে বলেছিলাম যদি কখনও এমন হয় যে টাকার জন্য আমি পরীক্ষার ফি দিতে পারছি না, বা রেজিস্ট্রেশন করতে পারছি না তখন তোর কাছ থেকে টাকা নেব। তুই বলেছিলি সেইদিন অবশ্যই যেন চাই। এখন আমি রুয়েটে পড়ি।

তোর কি মনে আছে? রুয়েটের ভর্তির দিন। রাজশাহীতে আমার কোন আত্মীয় নেই বলে আমি তোদের বাসা পাবনায় উঠেছিলাম। শুধু তুই ছিলি। আমার ভর্তির দিন ০৯.০১.২০০৭ আওয়ামী লীগ ডাকা অবরোধে সারা দেশ বন্ধ। আমি তো ভেবেছিলাম রাজশাহী আসব না।

ভর্তি কি আর অবরোধের দিন হয়। কিন্তু তুই কোন রিস্ক নিতে চাইলি না। আমরা পাবনা থেকে ঈশ্বরদী-লালপুর-চারঘাট-বাঘা হয়ে ‘’নসিমনে’’করে রাজশাহী পৌছাই। সময় লাগল সাড়ে পাঁচ ঘন্টা। কেউ কি কখনও বন্ধুর জন্য এতটা করে? সেই দিন আমি ঠিকই ভর্তি হয়েছিলাম।

তুই না নিয়ে এলে আমার প্রকৌশলী হবার ইচ্ছাটা সারা জীবন অধরাই থাকত মনে হয়। সারা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। হঠাৎ ঘোষনা তত্বাবোধায়ক সরকারের সময়। তোর কি মনে পড়ে সেই দিনও আমি তোদের বাড়িতেই ছিলাম। যদিও তুই তখন রংপুরে কিন্তু আমার থাকার কোনই সমস্যা হয় নি।

তুই অনেক করেছিস আমার জন্য। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারলাম না। গত বছর তুই যখন বিয়ে করলি। খবরটা কিন্তু আমি অনেক পরে পয়েছি। আমার সব বন্ধুরা ছিল তোর বিয়েতে।

কিন্তু আমি থাকতে পারি নাই। বউ নিয়ে যখন বাড়িতে উঠতে পারছিস না, তখন সবাই তোর পাশে ছিল কিন্তু আমি ছিলাম না। গত ঈদে যখন নতুন বউকে একটা শাড়ি দিতে পারছিলি না তখন আমাদের সব বন্ধুরাই চাঁদা তুলে টাকা দিয়েছিল শুধু আমিই পারি নি। আমি পারিনি তোকে একদিন কফি হাইজে খাওয়াতে, যদিও তুই অনেক খাইয়েছিস। তুই যখন একটু আগে ফোন করে বললি তুই চলে যাচ্ছিস আজ রাতে, তখন কথা গুলো আমার বারবার মনে পড়ছিল।

তুই বললি আমি তো কিছুদিন পর ইন্জিনিয়ার হচ্ছি। ঠিকই তো আর মাত্র কয়েকটা মাস। তার পর আমি ইন্জিনিয়ার কিন্তু তুই তো আর থাকবি না। অনেক বাকি পড়ে গেলরে। শু্ধুই বাকি।

তোকে আর হয়তো খাওয়ানো হল না কখনই। তোর বউকেও দেয়া হল না কিছু। তোর ফোন পাবার পর থেকেই কেন যেন মনে হচ্ছে হয়তো তোর সাথে আর দেখা হবে না। হলেও আর সেই ভাবে আড্ডা দেয়া হবে না। হবে না কোন সুন্দরীর দিকে চেয়ে থাকা।

তুই সিঙ্গাপুরে থাকবি হয়ত পাঁচ বছর পর আসবি। তখন আমি থাকব না। অফিসের কাজে বাইরে থাকব তোর সাথে দেখা হবে না। আমাকে এত পর ফোন করলি কেন? তুই কি পারতি না আগে ফোন করতে। সব সময় কি এমন করবি?? যেখানেই থাক, ভাল থাক, সুখে থাক।

পুনশ্চঃ আমার এই বন্ধুটি আজ রাতে সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছে একটু আগে ফোন করেছিল বরাবরের মতই সম্ভবত সবার পর আমি খবরটি পেলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।