মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন....
কিছুদিন আগের কথা, দরকারী কাজে ঢাকার বাহিরে যাচ্ছিলাম, পথে একটি দৈনিক পত্রিকা কিনলেও পড়ার সুযোগ হয়নি। মাওয়া থেকে ফেরীতে উঠে পেপারটি খুলে বসলাম। নদীর মৃদু বাতাসে বসে বসে পেপার পড়তে ও চায়ে চুমুক দিতে ভালোই লাগছিল। হঠাৎ একটি লেখা পড়ে মনটি অন্যরকম হয়ে গেল। লেখাটি শেয়ার করলাম।
‘কেন এই নিষ্ঠুরতা’
গত ১৩ জুলাই ‘অরণ্যে রোদন’ কলামে সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক আমাদের প্রশ্ন করেছেন, কেন আমরা এত নিষ্ঠুর হয়ে গেলাম, কেন এত ধ্বংসপ্রবণ হয়ে গেলাম? ঠিক এ রকম কথাই আমাদের অনেক প্রবীণ শিক্ষককেও বলতে শুনি, আমাদের নাকি পড়াশোনার চেয়েও অন্য কিছুতে বেশি আগ্রহ। আমাদের অগ্রজেরা আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। সত্যিই কি তাঁরা জানেন না, আমাদের এই মানসিকতার পেছনের কারণ কী?
প্রিয় অগ্রজ, আপনাদের জন্য তাহলে একটা খুব সাধারণ তরুণের গল্প বলি। তরুণটি এসএসসি ও এইচএসসিতে খুব ভালো ফল করেছিল। তারপর—চোখে-মুখে অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে শহরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো।
সেখানে সে ভর্তি হয়েছিল সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায়। নিজের মেধায়, কলম হাতে নিয়ে; বিশ্বাস করুন, তার হাতে তখন কোনো চাপাতি ছিল না। ভর্তি হওয়ার পরই সে প্রথম যে সমস্যায় পড়ল, তা হলো—থাকার সমস্যা। তার দরিদ্র বৃদ্ধ বাবা-মা। তাদের তো এত ক্ষমতা নেই যে ঢাকায় বাড়ি ভাড়া দিয়ে ছেলেকে রাখবে।
অবশ্য ছেলেটির বিশ্ববিদালয়ে বেশ কয়েকটি হল আছে। সেই হলে থাকতে হলে তাকে কী করতে হবে জানেন? কোনো একটি দলের হয়ে মিছিল করতে হবে। অগত্যা ছেলেটি মিছিলে যোগ দিল। তার সামনে বড় কোনো আদর্শ নেই। তার মাথায় শুধু ভাসছে একটা চিকন খাট, যেখানে কোনো রকম কাত হয়ে শোয়া যায়, যদি সে মিছিলে যোগ না দেয়, তবে তাকে মসজিদের বারান্দায় অথবা ফুটপাতে ঘুমাতে হবে।
এই মিছিল-মিটিং করতে গিয়ে পড়াশোনা থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে। যা-ই হোক, মিছিলের জোরে সে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে গেল। নেতার ক্ষমতা সম্পর্কে তার মনে অগাধ শ্রদ্ধা এল। বড় ভাইদের কাছ থেকে সে জানল, তাদের সঙ্গে থাকলে শুধু হলে সিট না, এমনকি একটা সরকারি চাকরি পর্যন্ত জুটে যাবে। তত দিনে ছেলেটি জেনেছে সরকারি চাকরি পেতে হলে তাকে ৫-১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে।
এত টাকা সে কখনোই দিতে পারবে না। এদিকে তার মা-বাবা অপেক্ষা করে আছেন, ছেলের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশায়। ছেলেটি বুঝে যায়, পড়াশোনার চেয়েও জরুরি নেতার সঙ্গে থাকা। একটা ভালো উপন্যাস পড়ার চেয়েও ফলদায়ক হলো নেতার বক্তৃতা শোনা। কারণ তার পক্ষে তদবির করার লোক বলতে নেতাই আছেন।
সে কোনো সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রী বা ব্যবসায়ীর পুত্র নয়। অথচ, চাকরিটা তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। নেতার চোখে পড়ার জন্য তাই আপ্রাণ চেষ্টা করে সে। বিপক্ষ দলের ছেলেদের ধরে ঠ্যাঙায়, নেতা খুশি হন। পিঠ চাপড়ে দেন।
এবার বিপক্ষ দল যখন মারতে আসে বাধ্য হয়ে সে চাপাতি হাতে তুলে নেয়। কারণ তখন কলম নয়, অস্তিত্ব রক্ষার জন্য চাপাতিই তার জন্য বেশি কার্যকরী।
হ্যাঁ, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব তরুণ ছাত্ররাজনীতি নামের অপরাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তাদের বেশির ভাগেরই এখানে আসার পেছনে মূল কারণ হলো, অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। মাথার ওপর একটা নিরাপদ ছাদ খুঁজতে গিয়ে আমরা যে এক অনিরাপদ পথে হাঁটছি, তার নেপথ্যে কারা রয়েছেন?
প্রিয় অগ্রজেরা, আপনারা কেন পারলেন না আমাদের একটা সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থা উপহার দিতে? কেন আমরা ক্যাম্পাসে এত নিরাপত্তাহীন? কেন চাকরি পেতে হলে ঘুষ দিতে হয়, তদবির করতে হয়? কেন আপনারা এখনো সাহস করে জোর গলায় বলতে পারেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ে নোংরা দলবাজির রাজনীতি বন্ধ করো। কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আমার বন্ধুরা লাশ হয়ে ফিরে যায়, কিন্তু আমাদের শিক্ষকেরা কোনো কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারেন না? কেন আমাদের শিক্ষকেরা এত রঙিন? শ্রদ্ধেয় অগ্রজ, আমরা উত্তর চাই।
আইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।