আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্তমান-পুরনো, মিলেমিশে একাকার।

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself.

বুধবার ছিল সরকারী ছুটি, বৃহস্পতিবার হলো চোখ নষ্ট। তারপরে দু'দিন সাপ্তাহিক ছুটি। মেয়েদের সাথে টানা চারদিন ঘরে থেকে আবার হোম-বাউন্ড হয়ে পড়্লাম। আজ তাই অফিসে গিয়ে কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারছিলাম না। আর আমার কাজ মানে তো খালি বকবক করা।

কাজে মন না-বসাতে পারা মানে চুপ করে থাকা। সেখানেও বিপত্তি। আমি চুপ করে থাকা মানে আরও দু'তিন জনের কাজ থেমে থাকা। ভাল্লাগলোনা আজ। একটা মুহূর্তও ভাল্লাগলোনা।

খালি মনে হচ্ছিল মেয়েদুটোকে ঘরে ফিরে জড়িয়ে না-ধরা পর্যন্ত মন ভালো হবেনা। হলোও ঠিক তাইই। এখন ওদের পাশে রেখে খুব ফুরফুরে মনে লিখতে বসছি। মন ভালো থাকলে অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে যায়। এত বকবক করি সারাদিন--- অথচ প্রথম যেদিন স্কুলের স্টেজে দাঁড়িয়ে বকবক করার সুযোগ পেয়েছিলাম, কিচ্ছু বলতে পারিনি।

ভ্যাবলার মত অপ্রাসংগিক দু-একটা কথা বলে উপস্থিত বক্তৃতায় সান্ত্বনা পুরস্কার কুড়িয়ে চলে এসেছিলাম। পরেরবারগুলোতে অবশ্য সে সমস্যা হয়নি! আমার চার বছর বয়সে স্টেজে প্রথম গাইতে উঠলাম। ছোট্ট একটা ছড়াগান দূর্দান্ত স্লো-মোশনে গাইতে গাইতে এমন লম্বা সময় নিয়ে নিয়েছিলাম যে তবলচি তার গুণের চর্চা না-করতে পেরে হাঁপিয়ে উঠেছিলো। বহুবছর স্কুলের অনেকের কাছে আমার সেই গানের রেফারেন্স শুনতে হয়েছে পরে। জীবনে প্রথম চিঠিটা লিখেছিলাম মনে হয় আমেরিকা প্রবাসী খালাত ভাইকে।

এখনও মনে আছে, অনেক ধুমধাম করে ওনাকে চিঠি লিখতাম। আমি ও বাকি ভাই বোনরা। বিশাল এয়ারমেইলের খামে করে সেই চিঠি ওনাকে পোস্ট করার পর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তাঁর জবাব আসতো। বেশিরভাগ সময়ই উনি আম্মুর চিঠিরই উত্তর দিতেন, আমাকে দিতেন কদাচিৎ, তাতেও আমার চিঠি লেখার উৎসাহে ভাটা পড়তোনা। প্রথম বাংলা টাইপ করলাম অফিসে বসে।

বিজয় লে-আউট মুখস্থ করে। তখন বাংলা টাইপ করতে পারা মানে পাওয়ারপয়েন্টে প্রেজেন্টেশন বানানোর মত (সে-আমলে কিন্তু!) সেরকম ফাটাফাটি একটা ব্যাপার। আদ্যিকাল বলে কথা। তখন দেখতাম সবাই দুইহাতের তর্জনী দিয়ে টাইপ করতো কীবোর্ডে তাকিয়ে তাকিয়ে, ধীরে ধীরে। অফিসে আমার নিজের কোনও ডেস্ক ছিলনা সেসময়।

প্রথম যেদিন নিজের একটা ডেস্ক হলো, আনন্দে দিশাহারা হয়ে গিয়েছিলাম। অথচ কিউবিক্‌ল থেকে যখন আমাকে একটা বড় পরিসরে টেবিল-চেয়ার আর ওপাশে আরো দুজন দর্শনার্থী বসার জায়গা দেওয়া হলো, বেশ মুষড়ে পড়েছিলাম মনে আছে। কারণ সেদিন থেকেই আমার ক্রমাগত বকবক শুরু। টেবিলের ওপাশের চেয়ার দুটোতে সারাদিন সমস্যা নিয়ে কেউ না কেউ আসছে, নাহয় চেয়ার খালি পেয়ে আড্ডা মারার জন্যেও আসছে---চাকরি ছাড়ার আগে পর্যন্ত এর থেকে মুক্তি পাইনি। প্রথম যেদিন চাকরিতে ঢুকেছিলাম, এক অফিসে এতজন সেলিব্রিটি দেখে টাশকি খেয়ে গিয়েছিলাম।

আরও ফাটাফাটি ছিল কলিগ হিসেবে ওনাদের সাথে কাজ করাটা। আমার প্রথম মোবাইল ফোনটা ছিল ফিলিপ্স ডিগা সেট। স্টুডেন্ট মানুষ, জিপির একটা ক্যাম্পেইনে চার হাজার টাকায় কিনেছিলাম, তাও ধার কর্জ করে, এবং বাসায় না-বলে। কারণ সে-আমলে মোবাইল ফোন কেনা মানে বেয়াদব পোলাপাইন হয়ে যাওয়া। বিভিন্ন কারণে আমার মোবাইল ফোন কেনার অভিজ্ঞতা সুখকর হ্য়নি।

আর মোবাইলের বিল দেওয়াটা সেসময় হাতি পোষার মতই ব্যাপার ছিল যতদিন নিজে কামাই না-করেছি। অবাক লাগছে ভেবে, আমার প্রথম স্কুলের দিনটার কথা একদম মনে নেই। প্রথমবার বেতন পেয়ে কী করেছি মনে নেই। একজনের সাথে ঢাকা-চিটাগাং ট্রেন-জার্নিগুলোর কথা মনে আছে, কিন্তু সেটার শুরুটা কেমন ছিল মনে নেই। অনেক চিঠি লিখতাম, ডায়রিও লিখতাম।

চিঠি-ডায়রি-গানের খাতা সব পুড়িয়ে ফেলেছি কখন কিভাবে, সব মনে আছে কিন্তু তার আগের অনেক কিছু তো মনে পড়েনা! বাচ্চারা ঘুম। ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবি মা-হওয়ার আনন্দটা কোনোওদিন তো ভুলবোনা! প্রথমজন, শেষজন---দু'জনের বেলায়ই প্রতিটা মূহুর্ত মনে আছে। বড়জনের প্রথম স্কুলে যাওয়ার কথা মনে আছে। খুব মনে পড়ে ভরদুপুরে আম্মুর গা-ঘেঁষে, গান শুনে শুনে ঘুমের দেশে হারিয়ে যাওয়ার কথা। ব্লগে যেদিন প্রথমপাতায় আমার লেখা ছাপা হলো, রাত একটায় ভাইয়াকে ফোন করে খবরটা দিয়েছিলাম।

আবার তারচেয়েও পরের অনেক কথাই অনেকে বলে, মনে পড়েনা কিছুই। লিখতে বসেছিলাম, লিখলামও বেশকিছু। কিন্তু আসলে যে কী লিখতে চেয়েছিলাম এখন আর মনে পড়ছেনা। তবে এটা মনে পড়ছে যে আমি কিছু লিখতে চেয়েছিলাম। স্মৃতিগুলো ফিল্টার হচ্ছে কখন কিভাবে সেটা জানতে পারলে বেশ হতো।

না-জেনেও অবশ্য খুব একটা খারাপ চলছেনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।