যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
টেপের পানি পড়ছে আস্তে আস্তে। সাঈদ আহমদ চৌধুরী অন্যমনস্কভাবে শুধু হাত দুটা পড়ন্ত পানির ধারার সামনে ধরে আছেন। পড়ন্ত পানির ধারা হাতের বাধা পার হয়ে বাথরুমের বেসিনে ছিটকে পড়ছে।
ছিটকে পড়া পানির শব্দ একটু অন্যরকম। সাঈদ আহমদ চৌধুরীর লক্ষ্য অবশ্য সেদিকে নেই। তিনি ওঝুর দোয়া মনে করার চেষ্টা করছেন। ইদানীং তিনি কিছুই সহজে মনে করতে পারেন না। হয়ত বয়সের দোষ।
বয়স তার এককালের প্রখর স্মৃতিশক্তিকে ধীরে ধীরে দিনে দিনে ভোতা করে দিচ্ছে। সাঈদ আহমদ চৌধূরী তার হাতে পড়ন্ত পানির ধারার দিকে তাকালেন। হাত উপছে পড়ছে পানি। কিন্তু কিছুতেই ওঝুর দোয়া মনে পড়ছে না। এই ওঝুর দোয়া তিনি প্রথম শিখেছিলেন মক্তবে।
মক্তব প্রতিদিন খুব সকালে শুরু হত। প্রায় ঘন্টা দুই গ্রামের ছেলেমেয়েরা ইসলামি শিক্ষা অর্জন করত। সাঈদ আহমদ চৌধূরীর মনে পড়ল তার সেই ছোটবেলার এক শীতের সকালের কথা। মক্তবে পড়তে গিয়েছিলেন। পড়ার মাঝখানে ছোট বাথরুম করার জন্য বাইরে যান।
বাথরুম করে ওঝু না করেই ফিরে আসেন। হুজুর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন পা শুকনা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সাঈদ ওঝু করছ?
সাঈদ আহমদ চৌধুরী হুজুরকে অত্যন্ত ভয় পেতেন। মক্তবের সবাই ই বাঘের মত ভয় পেত। সাঈদ আহমদ চৌধুরী তাই ভয়ে কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলেন।
তখন তার বয়স আর কত হবে,বার কি তের। হুজুর বর্জ্রকন্ঠে হুঙ্কার দিলেন, ওঝু না করে পিশাব করে আসছস?আইজ তরে কঠিন শাস্তি দিতে হইব। তারপর সেই কনকনে হিমশীতল ঠান্ডার দিনে হুজুর সাঈদ চৌধুরীকে টেনে নিয়ে যান পুকুরে। শুন্যে কোলে তুলে সেই বরফ শীতল জলে ছুড়ে ফেলে দেন। সেই দিনের কথা মনে হলে সাঈদ আহমদ চৌধুরী আজো শিউরে উঠেন।
আজ ও সেই ঠান্ডা পানির কথা মনে হলে তার হৃতপিন্ড কেপে উঠে। সাঈদ আহমদ চৌধুরী আর ভাবতে পারলেন না। হাতের দিকে চেয়ে দেখলেন এখনো টেপের পানি পড়ছে আগের মতই। অভিকর্ষের টানে দূরন্ত বেগে ছুটে চলেছে মাটির দিকে। এ এক অদৃশ্য আকর্ষন।
যে আকর্ষনে সবাই বন্দী। হাতের বাধাকে তুচ্ছ করে প্রবল উল্লাসে ছুটে চলা পানির স্রোতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সাঈদ আহমদ চৌধুরীর মনে আসল এখনো তার ওঝুর দোয়া মনে পড়ে নি।
সাঈদ আহমদ বুঝতে পারলেন ওঝুর দোয়া হয়ত আজ আর মনেই আসবে না। তিনি দু হাত এক করে আজলা ভরে পানি নিলেন। তারপর মুখে পানি দিতেই মনে হল তার সমস্ত মাথা যেন ঝিম মেরে উঠল।
চোখের সামনে ঝাপসা,পানি পানি অবস্থা। তার মনে হল বাথ্রুমেই মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন। সাঈদ আহমদ চোধরী চোখ বন্ধ করে রাখলেন খানিকক্ষন। একটু পর চোখ খুললেন। ইতিমধ্যে মাথার ঝিম ধরা ভাবটা মোটামোটি কেটে গেছে।
অন্যমনস্কভাবে তিনি চশমা চোখে রেখেই পানির ঝাপটা দিয়েছিলেন। হঠাত অপ্রস্তুত দূর্বল মস্তিষ্ক এটা সহজভাবে নিতে পারে নি। সাঈদ আহমদ চোধুরী চশমাটা খুললেন। দুটা গ্লাসেই পানি। এই গ্লাস দিয়ে তাকালে সবকিছু পানির নিচে মনে হয়।
চশমা তিনি ছোট বেলা থেকেই পড়েন। বলা যায় যুবক বয়স থেকেই চশমা ছাড়া তিনি কিছুই দেখেন না। পানি লাগা চশমাটা আবার চোখে লাগালেন তিনি। সবকিছু ঝাপসা। এরকমই ঝাপসা কারো কারো জীবন।
সাঈদ আহমদ ভ্রু কুঞ্চিত করে সেই কারো কারো দলে তার নাম আছে কিনা খুজতে লাগলেন!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।