চেরি গ্রামের শেষপ্রান্তে মিসেস জোনস্ বাস করতেন। তার একটি ছোট কুকুর ছিল। টিপস্ নামে ছোট কুকুরটি একদিন প্রমাণ কোরে দিলো যে সে ছোট হলেও কত বুদ্ধিমান আর পরোকারী।
অতীতের কোনো একসময়ে একটি ছোট কুকুরকে টিপস্ নামে ডাকা হতো। ওছিল মিসেস জোনসের।
তিনি চেরি গ্রামের শেষপ্রান্তে প্রাইমরোজ কটেজে বাস করতেন।
টিপস্ ছিল খুব উপকারী ছোটকুকুর। প্রতিরাত্রে মিসেস জোনসের বাড়ী পাহারা দিতো। তাঁকে একাকী সময়ে সঙ্গ দিতো। বাড়ীর সামনের সামনের রাস্তায় অযথা কেউ টোটো কোরে ঘুরলে ও ডেকে ওঠতো।
তাছাড়া প্রতিহপ্তায় একবার মি. জোনাথনের কাছ থেকে সংবাদপত্র নিয়ে আসতো। তিনি হিল্সাইডে একটি ছোট কটেজে একাকী নিঃসঙ্গ বাস করেন।
মি. জোনাথন ব্যক্তিগত ভাবে পড়ার জন্যে সংবাদপত্র কিনতেন। তারপর তিনি এটি মিসেস জোনসকে দিতেন। তাঁর কাছ থেকে পরে আবার এটা অন্যান্যদের কাছে যেতো।
মিসেস জোনস নিজের জন্যে নিউজপেপার আনার তেমন সময় পেতেন না। অতএব টিপস্ তাঁর হয়ে এই কাজটি কোরে দিতো।
প্রতি বৃস্পতিবার বিকালে ও যাত্রা করতো। গ্রামের বালুকাময় সমতল রাস্তা দোঁড়ে পার হয়ে, নদীর সাঁকো পেরিয়ে অবশেষে পোঁছতো মি. জোনাথনের কটেজে। টিপস্ দরোজার উপর লাফিয়ে পড়ে ধাক্কা দিয়ে ওঠা খুলতো।
তারপর মন্থর গতিতে মি. জোনাথনের কাছে এগিয়ে অপেক্ষা করেতা।
বুড়ো লোকটি সব সময় টিপস্রে জন্যে পেপার প্রস্তুত রাখতেন, একটুকরো পরিচ্ছন্ন ফিতে দিয়ে পেপারটি কুন্ডুলী পাকিয়ে বেঁধে ওর মুখে পুরে দিতেন। ছোট কুকুরটি পুনরায় বাড়ী ফেরার পথ ধরে ছুটে চলতো। প্রাইমরোজে পৌছানোর আর মিসেস জোনসের পায়ের কাছে পেপারটি না ফেলা পর্যন্ত টিপস্ কোথাও একমুহুর্তের জন্যে থামতো না।
একদিন মি. জোনাথন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি বসন্তকালের ঝাড়াপোঁছায় হাত দিবেন।
সেই উদ্দেশ্যে মিসেস জোনসকে মই ধার দিতে বললেন।
‘আশ্চর্য, মই দিয়ে তুমি কি করবে?’ বিস্মিত মিসেস জোনস প্রশ্ন করলেন। ‘মি. জোনাথন তুমি পড়ে গিয়ে নিজেকে আঘাত করবে। ’
‘মোটেও না,’ বললেন বুড়ো লোকটি। ‘আমি আমার ঘরের সিলিঙে চুন দিতে যাচ্ছি মিসেস জোনস।
ওটা খুব নোংরা হয়ে গেছে। সুতরাং আমার খুব উপকার হবে তোমার চেপ্টা ধাপওয়ালা মইটি পেলে। ’
‘ওটা চালাঘরে,’ বললেন মিসেস জোনস। ‘দরকার হলে নিতে পারো। তবে আমার অনুরোধ সাবধানে কাজ করবে।
মইটির একটি ধাপ অচল। ’
‘মি. জোনাথন মই খুঁজে নিয়ে বাসায় নিয়ে এলেন। কিছু চূণ ভালোমত মিশিয়ে ছাদে লাগাচ্ছেন। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। তিনি সারাদিন ধরে এই কাজটি কোরে ঘুমোতে গেলেন।
পরদিন আবার কাজ আরম্ভ করলেন। উনি মনে অসম্ভব ফূর্তি নিয়ে আপন মনে শিস দিয়ে চূণকাম করছেন। এমনি সময় একটি অভাবনীয় ঘটনা ঘটলো।
বাইরে পিওন লেটারবক্সে কিছু চিঠি ফেলছিল; যার ফলে দরোজায় জোরালো ধাক্কা পড়ায়, এমন বিকট শব্দ হলো যে মি. জোনাথন সৃষ্ট এই শব্দাঘাতে শক্ পেয়ে মই থেকে একবারে ভূমিতে ধরাশায়ী হলেন। যখন তিনি ওঠে দাঁড়ানোর কসরত করলেন তখন টের পেলেন যে তিনি একচুলও নড়ার মতো জোর পাচ্ছেন না।
‘হায়রে, আমার নিশ্চয়ই পায়ের গোড়ালি মচকিয়েছে, অথবা পা ভেঙ্গেছে, কিংবা অন্যকিছু,’ বুড়োমানুষটি তীব্র ব্যথায় কাতর হয়ে ওঠেন। ‘যাই ঘটুক না কেন, আমার এখন কি করবো? তাছাড়া আজ কেউ আসবে না, আমি কাউকে ডাক্তার আনার জন্যে পাঠাতে পারবো না। আমি সম্পূর্ণ একা যে আমার সাহায্য করারা কোনো প্রতিবেশী নেই। ’
তিনি মেঝের উপর শুয়ে আছেন। ব্যথায় ফুঁপোচ্ছেন।
তাঁর প্রকৃতপক্ষে জানা নেই এখন তিনি কি করবেন। হয়তো সারারাত তাঁকে এভাবে পড়ে থাকতে হবে। যদি কেউ একজন আসতো! তবে আজ এখানে আসার মতো কেউ নেই।
যেসময় এসব নিয়ে তিনি চিন্তায় মগ্ন, খানিকক্ষণ পর মি. জোনাথন শোনতে পেলেন কে যেনো নরোম ছোট পা ফেলে সামনের রাস্তা ধরে দোঁড়ে আসছে। তারপর দরোজার উপর একটি ছোটশরীর নিক্ষিপ্ত হলো।
ও ছিল টিপস্, লিটল্ নিউজপেপার ডগ্। আজ ছিল বৃস্পতিবারের বিকাল তাই ওর মনিবণীর উদ্দেশ্যে পেপার নিতে এসেছে।
ঘরে প্রবেশের পর মি. জোনাখনকে মেঝের উপর শুয়ে থাকতে দেখে ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো। তাঁর কাছে গিয়ে হাত চেটে দিলো। তারপর ওনার একপাশে বসে জিঞ্জেস করলো, ‘উওওফ্।
’
ওর ভাষায় অর্থ হলো : ‘কি ঘটেছে? আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি?’
‘আমি আশা করি তুমি পারবে, টিপস্,’ বলেন মি. জোনাথন। এখন তাঁকে আনন্দিত দেখালো। হয়তো টিপস্ সাহায্য করতে পারবে। তিনি আশেপাশে তাকান। মিসেস জোনসের জন্যে ইতিমধ্যে বাঁধা অবস্থায় নিউজ পেপারটি একটি চেয়ারের উপর পড়ে আছে।
‘পেপারটি এখানে টিপস্,’ তিনি ইশারা কোরে বলেন। ‘ওটা আমার কাছে আনো। ’
টিপস্ পেপারটি দেখতে পেলো আর এটা মুখে কোরে যেসময় ফিরে যাবার জন্যে ছুটে যা”িল এমনি সময় মি. জোনাথন ওকে পিছন থেকে ডাকলেন।
‘এখুনি যেওনা টিপস্,’ বলেন তিনি। ‘পেপারটা এখানে আনো।
’
চালাক ছোট কুকুরটি ইশারা বুঝতে পারলো। পেপারটা মুখে কোরে মি. জোনাথনের কাছে নিয়ে এলো। মি. জোনাথন তাঁর পকেট একটি পেনসিল বের কোরে কাগজের মাথায় মোটামুটি চোখে পড়ার মতো বড় অক্ষরে একটি চিঠি লিখলেন।
‘মিসেস জোনস,
আমি মই থেকে পড়ে গেছি।
অনুগ্রহ কোরে ডাক্তার পাঠান।
মি. জোনাথন। ’
তারপর পেপারটি তিনি অপেক্ষারত টিপস্রে মুখে আর একবার চালান দিয়ে বললেন, ‘এখন বাড়ী যাও। ’
টিপস্ দৌড় শুরু করলো, মি. জোনাথন কেন মেঝেতে শুয়ে আছে এই গোলমেলে বিষয়টি ওর ছোট মাথায় বোধগম্য হলো না। টিপস্ যথারীতি যত জোরে পারা যায় দৌঁড়ে এসে প্রাইমরোজে পৌঁছলো আর মনিবণীর পায়ের সামনে পেপারটি ফেললো। তিনি চোখের সামনে পেপারটি মেলে ধরতেই হিজিবিজি হাতে লেখা সংবাদটি চোখে পড়লো।
‘হায়রে কি কান্ড!’ তিনি কাতর হয়ে ওঠেন। ‘বেচারা মি. জোনাথন! তিনি মই থেকে আছাড় খেয়েছেন!’
সময় নষ্ট না কোরে তিনি ডাক্তারের কাছে ছুটলেন। তাঁর গাড়ী কোরেই মিসেস জোনস এসে পৌঁছলেন মি. জোনাথনের বাড়ীতে। তারা বিলম্ব না কোরে তাঁকে নিরাপদে বিছানার উপর শুয়ালেন। তাঁর পায়ে ব্যাঞ্জেজ বাঁধা হলো।
তাঁর পাশে খুবই সুস্বাদু হটড্রিংকস্ রাখা হলো।
‘এটা আমার চালাক কুকুর টিপস্রে কাজ, এই বিকালে আমার জন্যে সাপ্তাহিক পেপার নিতে এসে যে কিনা এই অবস্থায় মি. জোনাথনকে দেখতে পায়। ’ সগর্বে ডাক্তারকে বললেন মিসেস জোনস। ‘মি. জোনাথন আমার চোখে পড়ার জন্যে একটি ছোট চিঠি লিখে দেন পেপারের প্রথম পাতায়। ’
মি. জোনাথন শীঘ্রি আরোগ্য লাভ করলেন।
মিসেস জোনস আর টিপস্রে সঙ্গে প্রথমবার মতো দেখা হলো একসকারে লাঠিতে ভর দিয়ে বাজার করার সময়।
‘তুমি এখন এই অবস্থায় কোথায় যাচ্ছো?’ প্রতিবাদ করলেন মিসেস জোনস্। ‘আমি নিশ্চিত যে এখানে তোমার এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ শপিং নেই যা আমি তোমার হয়ে কোরে দিতে পারবো না। কি কিনবে তুমি, মি. জোনাথন?’
‘বিশেষ একজনের উদ্দেশ্যে খুব স্পেশাল একটি কিছু,’ হাসিমুখে বললেন মি. জোনাথন। ইশারায় মিসেস জোনস্ আর টিপস্কে ডেকে তিনি নিকটে একছোট দোকানে ঢুকলেন।
তোমরা কি কল্পনা করতে পারো কিংবা অনুমান তাঁর স্পেশাল বাজার কি ছিল? টিপস্রে জন্যে একটি অপূর্ব লাল কলার।
‘এটি শুধু ওর জন্যে যে কিনা প্রত্যেকে দেখিয়ে দিয়েছে সে ছোট হলেও কত বুদ্ধিমান আর পরোপকারী,’ বললেন মি. জোনাথন। তিনি ছোট কুকুরটির গলায় এটি পরিয়ে দিলেন। ‘ও- বাস্তবিক পুরস্কারের উপযুক্ত। ’
আমিও তাই ভাবছি, তোমরা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।