ছায়াপ্রেম-রৌদ্রময় আর শীতল বহ্নিপ্রণয়
জ্ঞানচৌতিশা
মীর সৈয়দ সুলতান
প্রথমে প্রণামি তত্ত্ব পুরুষ পুরাণ
ব্রহ্মা ইন্দ্র যার না পাইল সন্ধান।
মহেশ ভাবিয়া অন্ত না পাইল যার
মুনি সবে ধ্যান মর্ম না বুঝিল তার।
দিগম্বর হই কেন না পাইল উদ্দেশ
না চিনি সন্ন্যাসী সবে ভ্রমে প্রতি দেশ।
তপস্বী ব্রাহ্মণ-শুদ্র রামনারায়ণ
ভাবিয়া না পাইল তার অলেখা লক্ষণ।
সেই তনু প্রণামি, প্রণামি গুরু পদ
যাহার প্রসাদে পাইলু জ্ঞানের সম্পদ।
জনক-জননী দোহো প্রণাম করিআ
কহিব চৌতিশা জ্ঞান মনে বিমশিয়া।
আঞ্জি সে পরম তত্ত্ব নৈরূপ আকার
আঞ্জি বৃক্ষ বীজ হোন্তে অক্ষর প্রচার।
আঞ্জি আদি বৃক্ষনেত্র মায়াএ বর্জিত
আঞ্জি হোন্তে চৌতিশা যে অক্ষর বিদিত।
আঞ্জি যে পরম গুরু যুগল লোচন
আঞ্জি রূপে ত্রিখণ্ড বিদিত নিরঞ্জন।
কায়াতে আছএ তত্ত্ব কায়া গুণনিধি
কায়া লক্ষ্যে লক্ষিলে পাইবা তার শুদ্ধি।
কায়ানলে দহিতে আছএ সেই কাএ
কর্মদোষ পাপ ফলে চিনন না যাএ।
খরতর স্রোতোধার কাম পয়োনিধি
খুদ্রতর শরীরেত ভাসে মহা দধি।
খণ্ডিলে খণ্ডন নাহি সেই অখণ্ডন
খণ্ড খণ্ড হৈয়া আছএ তেকারন।
গহীন সমুদ্রে ঘর ঢেউএ তরঙ্গিত
গুণবন্ত তরিবেক তরিতে উচিত।
গোপত আছএ তত্ত্ব হৈয়া বেকত
গোপতে বেকত বেশ বেকতে গোপত।
ঘাটে ঘাটে রহিয়াছে নিজ রক্ষী সব
ঘট মধ্যে রহিয়াছে পুষ্পের সৌরভ।
ঘুরিয়াছে নিজ রূপ-কিরণ তাহার
ঘটে ঘটে ব্যাপিত আছএ নৈরাকার।
উঙ্কার অন্তরে জুতি তদন্তরে মন
উনাতে পুবণ হই রহ সর্বক্ষণ।
উঙ্কার স্তাবন করি তবে সে চিনিবা।
চিনিতে চিনহ তত্ত্ব সেই চিনে চিন
চেতাইলে পরম তত্ত্ব হও তাতে লীন।
চিনহ অচিন চিন নিচল নর্মল
চঞ্চল চপল মন রাখিবা নিচল।
ছায়াত কায়ার যথ আছে পরিচিন
ছায়া যেই কায়া সেই নাহি ভিন্ন ভিন্ন।
ছেদিলে ছায়ার দেহ ছেদন না যাএ
ছায়া লক্ষ্যে কায়া ভাঙ্গি রহিবেক কাএ।
যার যেইরূপ জান সেইরূপ সার
যে শরীরে বৈসে প্রভু নৈরাকার।
জিনিয়াছে কুম্ভের অঙ্গ জলের লক্ষণ
জল কুম্ভ কুম্ভজল একহি মিলন।
ঝিমেত ঝিমহ নিত্য না হৈবা বিমল
ঝারিয়া রাখহ মন ঝিমে অনুক্ষণ।
ঝিম ছাড়ি মন আর কাজেতক না যাএ
ঝিমের আলএ শক্তি রাখিবা সদাএ।
নির্মল উবল সেই শুদ্ধ সুধাকর
নিশ্চএ সেরূপ বৈসে সভার অন্তর।
নিমিখে নির্মল যথ খণ্ড ত্রিভুবন
নৈরাকার নিরূপ নিলক্ষ্য নিরঞ্জন।
টঙ্কার হুঙ্কার যত সতত নির্মাণ
টুটা ফুটা নহে সে যে সম সমাধান।
টলমল বর্জি তত্ত্ব ভেদ হুহুঙ্কার
টুটিব মনের যথ ভ্রম আন্ধিয়ার।
ঠেলা মারি পঞ্চ বৈরী মারহ সত্বর
ঠাইত হইবে তত্ত্ব নয়ান গোচর।
ঠাকুর আত্তমা জান ঘটেত আছএ
ঠাইতে থাকিতে তারে কর পরিচএ।
ডিটের উপরে ডিট সে ডিট উঝরি
ডুব দিয়া আমানেত চাহ ধ্যান করি।
ডন্ডেক আমান মন কার্যেত না যাএ
ডিটের আলয় শ্রুতি রাখিবা সদাএ।
ঢাকিছে কামে তার সুচরিত রূপ
ঢাকন না যাএ তত্ত্ব বেকত সে রূপ।
ঢাকিয়াছে নিজ রূপ কিরণ তাহার
ঢেউ-জল জল-ঢেউ নহে ভিন্নাকার।
আগে আগ রূপ ধরি আগে আগরীত
আগে মন না হইয়া আনন্দে হেরিত।
আগে মন হইলে সামর্থ্য হএ ভ্রম
আনন্দ করহ নিত্য বুঝি তার মর্ম।
তেলএ বারিত যেন বৈসে হুতাশন
তনু মধ্যে তেন মতে আছে নিরঞ্জন।
তনু মধ্যে সহস্র দলেত বৈসে নিত
তার দীপ্তি পড়এ যে শরীর বিদিত।
থানে থানে রাখিয়াছে নিজ রক্ষীগণ
থাকিত হইয়া ধেয়াও সর্বজন।
থানস্থিতি বর্জিত গুজে সভান স্থান
থান শূন্য নহে জান পুরুষ পুরাণ।
থাবর জঙ্গম যথ বৈসে সর্বঠাম
থির হই রহিয়াছে ভিন্ন মাত্র নাম।
দক্ষিণ উত্তর পূর্ব পশ্চিম বর্জিত
দিশি নিশি রবি শশী নাহি স্থানস্থিত ।
দিশি নিশি আপেত আপনা লক্ষণ
দর্পন-নির্মল এক করিল সৃজন।
ধ্যান সামর্থ্য হই ধর্ম নৈরাকার
ধন্ধ অন্ধকার হোন্তে ভিন্ন কৈল সার।
ধর্ম অন্ধকার হোন্তে অন্তর্ধান কৈলা
ধরি গম্ভীর দধি যেন জীবাত্তমা পাইলা।
ধর অধিপতি সেই কায়ার জনক
নব অন্তরে জুতি গোপন নিলখ।
নব যৌবন তুল পুরুষ পুরাণ
নব রঙ্গ প্রচারিত করিল সন্ধান।
পুণ্যবান ধ্যান কৈল অতি অনুপমা
পরম সানন্দ হৈলা পরম আত্তমা।
পাইয়া পরম প্রিয়া প্রভু নিরঞ্জন
প্রেম রসে মগ্ন হই করে নিরীক্ষণ।
ফুটিল বিবিধ পুষ্প মহাতরুবর
ফুলফল শোভিত সামর্থ্য মনোহর।
ফুল সবে অষ্ট তাল গন্ধ সুবাসিত
ফল সমে সপ্ততাল শোভে চারি ভিত।
বিন্দু বিন্দু সহস্রেক বিন্দু বিন্দু জুতি
বুহ্য করি রহিয়াছে যথেক মূরতি।
বিন্দু বিন্দু নাথ বিন্দু নহে ভিন্ন ভিন্ন
বিমর্সিয়া বিরলেত চাহ অনুদিন।
ভকতি মিনতি করি গুরুত বিশেষ
ভক্তি কৈলে গুরু তবে কহিব উদ্দেশ।
ভজহ গুরুও পদ বুঝি আপনার
ভ্রম ভাঙ্গি যেই কহে সেই গুর সার।
মিলাও জীবেত জীব তেজি আপনার
মিল হইলে যথা যাইব চিন্তহ তাহার।
মনেতে অমান দিয়া কর পরিচএ
মন ভঙ্গ না হইলে সর্বত্র উদএ।
জগত জীবন ব্রহ্ম মহাশিব কর
যত্ন করি রহিয়াছে সভার অন্তর।
যত কর্ম ভোগ ভুগি পুরিলে নিধন
যার যেই স্থানে পুনি করিব গমন।
রহিয়া আপনা ভেসে খণ্ডে ত্রিভুবন
রহিয়াছে অলক্ষিতে না যাএ খণ্ডন।
রবির কিরণ কিবা কহিবারে নারি
রবি হোন্তে ভি তানে বুলিতে না পারি।
লখন অলখ লখ লই তান নাম
লীন হই সর্বত্রে আছএ সর্ব ঠাম।
লোভ মোহ কামক্রোধ নিদ্রাএ বর্জিয়া
লোকাচার মধ্যে রহ অধর্ম তেজিয়া।
বাবি অশ্ব আরোহণে হই মনুরাএ
বিবিধ প্রকারে খেলা খেলিয়ে খেলাএ।
বাউ ভগ্ন হৈলে জান আউ হইব শেষ
বাউত করহ নর আয়ুর উদ্দেশ।
সমস্র দলেত গুরু শতদলে বিষ
ষটচক্র ভেদিয়া তাতে করহ উদ্দেশ।
সহস্র দলেত রঙ্গি দেখি সর্বমএ
সূর্যের দৃষ্টেত যেন চন্দ্রের উদএ।
শ্রুতি নাশ দিঠে জান শিষ্য হেরে তিন
শক্তি বিন্দু ইচ্ছা বাক্য গুরুর অধীন।
সম্পূর্ণ আছএ বাবি নাভিকুণ্ড পাইয়া
সরএ নাসিকা নালে সরএ দধিয়া।
শিব-শক্তি দোহো এক ভিন্ন মাত্র নাম
শিব ধরিতে শক্তির লিঙ্গেত বিশ্রাম।
শ্রম যুক্ত কলেবর মলমূত্র ধরে
সেই সে পরম তত্ত্ব জগত প্রচারে।
হারাই আপনা ভেসে হের নৈরাকার
হরিব যথেক পাপ পুণ্য হৈব সার।
হীন জন দেখিয়া না কর হীন জ্ঞান
হীনেত আছএ জান পুরুষ পুরাণ।
ক্ষেমা হোন্তে ধিক জান নাহি পৃথিম্বিত
ক্ষেমা তপ জপ কৈলে আত্ম হিতাহিত।
ক্ষীণ অতি শিশু মতি সৈদ সুলতান
ক্ষীণ হনি বুঝি কহে চৌতিশার জ্ঞান।
..........................................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।