আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পথে ইভটিজিং..কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি এবং পাশ্চাত্যের আদলের নারী স্বাধীনতার বিষময় ফল....



বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যাধিটি হচ্ছে পুরুষ কর্তৃক নারী ইভটিজিং এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি শিকার। ইসলাম নারীর স্বাধীনতা হরণ করেছে, নারীকে চার দেয়ালে মধ্যে অবরোধবাসিনী করে রেখেছে, তার অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে, পাশ্চাত্যের তথাকথিত বুদ্ধিজীবির ইসলামের বিরুদ্ধে ইত্যাকার অভিযোগ উত্থাপন করছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে। নারীর অধিকার নিয়ে আজকাল পৃথিবীর সর্বত্র সচেতনার নিদের্শনস্বরূপ সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কনফারেন্স হচ্ছে। নারীর অধিকার কায়েমে চতুষ্পদ প্রাণীর ন্যায় আচরণকারী পাশ্চাত্যের ধাপ্পাবাজদের কান্নাকাটি তাদের বাস্তব জীবনের ঘটনার সম্পূর্ণ উল্টো। বস্তুতঃ নারীর সমানাধিকারের শ্লোগানে নারীদের ঘর থেকে বের করে পর্দাহীন করার মাধ্যেমে তাদের সর্বস্ব লুন্ঠনই মূল উদ্দেশ্য।

পাশ্চাত্যের নারী সমাজের চিত্র দেখলেই বুঝা যায় যে, সেখানে নারীর সমানাধিকার নামে নারীদের নানা কৌশলে জিম্মি করে তাদের জীবন অর্থহীন করে তুলছে। কুমারি মেয়ে গর্ভধারণ, স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত র্গালফেন্ড ও কর্লগালদের সাথে সর্ম্পক স্থাপন, বিবাহপূর্ব সর্ম্পক স্থাপন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গর্ভধারণ করে ভাড়া চুক্তির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান, টাকার বিনিময়ে পণ্য-সামগ্রীর নগ্ন মডেল হিসেবে নারীদের অশ্লীল, নগ্নতা ও বেহাপনার প্রদর্শণ, সু্ন্দরি প্রতিযোগিতার নামে নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় উপস্থাপন, কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন ইত্যাদির কুকর্ম দ্বারা নারীর অধিকার কায়েম চলছে। পশুবৃত্তি জাহির করে পুরুষের মত নারীকে ফ্রি-সেক্স কালচারে অভ্যস্ত করে তোলাই কী নারী স্বাধীনতা? নারীকে কর্মে নিয়োগ দিয়ে জিম্মি করে ভোগ করাই কী নারী স্বাধীনতা? পণ্য-সামগ্রীর নগ্ন মডেল হিসেবে উপস্থাপন করে নারীর সম্মান ধূলিসাৎ করাই কী নারী স্বাধীনতা? নারীকে পর্ণগ্রাফির বস্ততে পরিণত করাই কী নারী স্বাধীনতা বা সমানাধিকার? মানবতার স্বার্থে নয়, অর্থের বিনিময়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গর্ভ ভাড়ার ফ্যাশেনে অংশ গ্রহণ করেছে ইরাক যুদ্ধেরত মার্কিন সৈনিকদের স্ত্রীরা। স্বামী রণাঙ্গণে এ সুযোগে বিপুল অর্থ উর্পাজনের জন্য ও নিজেদের একাকিত্ব ঘুচানেরা জন্য মাত্র ৯/১০ মাসে তারা কামিয়েছে ২০,২৫, কিংবা ৩০ হাজার ডলার। গত ২০০৬ সাথে অর্থের বিনিময়ে গর্ভ ভাড়া নেয়া মহিলার সংখ্যা ছিল ২৬০ জন এবং গত ২০০৭ সালে তা বেড়ে দাড়িঁয়েছে ১০০০ জনের উপরে।

সোসাইটি ফর এসিস্ট্যাড রিপ্রডাকটিভ টেকনোলজি সারা আমেরিকায় গর্ভ ভাড়া দেয়া-নেয়ার বিষয়টি মনিটরিং করছে। (তথ্য সূত্রঃ নিউজ উইক, ৭ এপ্রিল ২০০৮ ইং সংখ্যা) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন তার সেক্রেটারী মনিকা লিওনাস্কি। পরবর্তীতে এ নিপীড়ন নিয়ে নারীবাদী সংগঠনের মায়াকান্না ও মানবাধিকার প্রশ্নে হাজরো ঢাঁক-ডোল বাঁজানো এবং ইউরোপের নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক অভিযোগকারিনী মনিকা নিওনাস্কিকে সেকেন্ড লেডী হিসেবে স্বীকৃতিই কী নারী অধিকার? ওম্যান ভয়োলেন্স এন্ড মেইল পাওয়ার প্রকাশর ৫৭ নং পৃষ্টাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৫০ ভাগ নারী ও বৃটেনের ৫৩ ভাগ নারী কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। গত ৬ এপ্রিল ২০০৮ ইং রোজ রবিবার অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশন চ্যানেল নাইন নেটওয়ার্কের জনপ্রিয় সিক্সটি মিনিট অনুষ্ঠানে সভ্যতার ইতিহাসে পারিবারিক সর্ম্পকের এক কলংকজনক দিক উন্মোচিত হয়েছিল পাপীষ্ট পিতা-কণ্যার অবাধ যৌন সম্পর্কের ফরে 'চেলেষ্ট' নামক এক অবৈধ সন্তানের জন্মদান কাহিনী। অনুষ্ঠানে পিতা জন ডেভিস এবং কণ্যা জেনি ডেভিস তাদের নিষিদ্ধ সর্ম্পকের বৈধতার দাবীর পাশাপাশি তাদের অবৈধ সন্তান চেলেষ্টের সামাজিক স্বীকৃতি দাবীও করেছে।

" আমি জানি নিজ কণ্যার সাথে যৌন সর্ম্পক স্থাপন করা অবৈধ ও গুরুতর অপরাধ। কিন্তু কখনও কখনও বিবেক হার মানে আবেগের কাছে"- এ ভাবে টেলিভিশনে দর্শদের উদ্দেশ্যে নিজেদের মেলে ধরেন কণ্যা জেনি ডেভিস এবং অবৈধ চেলেষ্টের জন্মদাতা ৬১ বয়সী পিতা জন ডেভিস। যে পাশ্চাত্যে জীবনব্যবস্থায় আপন কন্যা সন্তানের সম্মান ও অধিকার খোদ জন্মদাতার দ্বারাই নিলজ্জতার সাতে হরণ করা হচ্চে সেখানে সাধারণ নারীদের সম্মান ও অধিকার কিরূপ ভয়াবহ তা বর্ণনাতীত। সিএনএন পরিবেশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ২৯ শতাংশ আমেরিকান পুরুষ জীবনে ১৫ বা তারচেয়ে বেশি নারীর সাথে যৌন সর্ম্পক স্থাপন করে এবং ৯ শতাংশ নারী তাদের জীবনে ১৫ বা ততোধিক পুরুষের সাথে যৌন সর্ম্পক স্থাপন করে। ১৫ বছরের আগে যৌনতার স্বাদ উপভোগ করে ১৬ শতাংশ মেয়ে।

(সূত্রঃ দৈনিক ইনকিলাব, ৪ এপ্রিল ২০০৮ ইং, পৃষ্টা-১৪) ১৯৯০ সালে বৃটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন যে, ১৯৭৯-১৯৮৭ সন পর্যন্ত নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশার কারণে বৃটেনে ৪,০০,০০০ জন জারজ সন্তান জন্মগ্রহন করে। (সূত্রঃ ড. বাশীর বিন ফাহদ আল-বাশীর, আসালীবুল আলমানিইয়ীন ফী তাগরীবিল মারআতিল মুসলিমাহ, পৃষ্টা-৩৩৪) পাশ্চাত্যের জীবন ব্যবস্থার সাথে ইসলাব আর্বিভাবের পূর্ব আইয়ামের জাহেলিয়াতের সাথে কোন পার্থক্য নাই। ইসলাম আর্বিভাবের পূর্বকালীন সময়ের অপকর্মের বর্ণনায়- "বিশ্বনবী" গ্রন্থে বলা হয়েছে- " তাদের আচরণে শয়তানও লজ্জা পেত"। আমি আমার লেখায় বলছি - " পাশ্চাত্যের এহেন কুকর্ম দেখে ইবলিশ লজ্জা পেলেও বাংলাদেশের সরকার, নারীবাদী সংগঠনগুলোর বেপর্দা নারী নেত্রীরা এমনকি মর্ডান ফ্যাশেনের জোয়ারে গা ভাসানো আধুনিক বাঙ্গালী ললনারা লজ্জিত নয়। " আজকাল বাংলাদেশে ইভটিজিং বেড়ে গেছে যেমন তেমনি নারীদের বেহাপনাও বেড়েছে অস্বাভাবিক গতিতে।

যে দেশের সিনেমা হলগুলো সয়লাব অশ্লীল আর নোংরা নগ্নতার বিনা বাধায় প্রচারের মাধ্যম, যে দেশের লীভ টুগেদার দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে, বয়ফেন্ড-গার্লফেন্ড নিয়ে নাইট ক্লাবে মাতামাতি হচ্ছে, পোশাক ও আচরণে অনুসরণ করা হচ্ছে সাকিরা, ম্যাডানো আর জেনিফার লোপেজদের অনুকরণে। ইসলামি পর্দা প্রথাকে যে দেশের নারী সমাজ নারী স্বাধীনতা আর প্রগতির অন্তরায় মনে করছে সে সমাজে নারী লাঞ্চণা-গঞ্চণা শিকার হবেই এটাই মহাসত্য। মহান আল্রাহ পাক ঘোষণা করেছেন - " যারা আল্লাহ বিধান অস্বীকার করবে তাদের প্রতিফল পার্থিব জীবনে লাঞ্চনা-গঞ্চনা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিন শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। " (সূরাঃ আল-বাকারা, আয়াত-৮৫) আল্লাহ পাক কোরআনের সূরা নূর এর ৩০-৩১ আয়াতে নর-নারীর দৃষ্টি সংযত ও নত করতে বলেছেন। "পুরুষরা যেন লজ্জাস্থানগুলো সাবধানে সংযত রাখে, মেয়েরা যেন তাদের সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানগুলো হিফাযত করে।

সাধারণতভাবে যা প্রকাশ পায় তার অতিরিক্ত সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না এবং বেশ-ভূশা, অলংকার ও গহনা পরে মেয়েরা পর পুরুষের সামনে যাবে না। " ইসলাম এভাবেই পুরুষদের নারীদের দিকে দৃষ্টিপাত হারাম ঘোষণা করে নারীদরে ইজ্জত-আব্রুর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিধান করেছে। অথচ আজ বাংলাদেশে বিভিন্ন চ্যানেলে সুন্দরি প্রতিযোগিতা হচ্ছে, বাহারি ফ্যাশেন সো হচ্ছে, নগ্নভাবে নারীদের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যা ইসলামী বিধানে খেলাপ এবং পাশ্চাত্যে অনুসরণ। আর পাশ্চাত্যে অনুসরণীয় স্বাধীনতার বিষময় ফল হচ্ছে যৌন নিপীড়নের শিকার, যা এদেশের নারী সমাজ প্রতিনিয়ত হতে চলছে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান, প্রাইভেট কোম্পানীতে নারীদের অতি সৌন্দর্য প্রদর্শনের কারণে চাকুরি পাওয়া সহজ হয়। কিন্তু কেন, কোন উদ্দেশ্যে? পরিশেষে ধিক্কার জানাই সেই যুবকদের যারা প্রতিনিয়ত ইভজিজিং অপরাধ করে যাচ্চে, সেই পুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যারা কর্মস্থলে সহকর্মী নারীকে কাজে সহযোগিতার নামে, পদ উন্নতি ও বেতন-বোনাস বৃদ্ধি উসিলায় য়ৌন নিপীড়ন অপরাধ সংগঠিত করেছে। পক্ষান্তরে ততোধিক ঘৃণা সেই নারী সমাজকে যা প্রগতি ও স্বাধীনতার নামে পাশ্চাত্যের অশ্লীতা ও বেহাপনার পূজাঁরি এবং ফ্রি-সেক্স কালচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। টাকার জন্য নিজের সত্তীত্ব বিক্রি করছে, পণ্য-সামগ্রীর নগ্ন মডেল হচ্ছেন। সবার সম্মালিত প্রচেষ্টায় সুন্দর ও কলংকহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ার মাঝেই মুক্তি নিহিত ইভটিজিং এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন অপরাধের।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।