লাশ ব্যবসায়ী পলাশ আমাকে খুবই আক্ষেপের সাথে বললেন, ঢাকা মেডিকেলের রোগী সহজে মরে না। শালার ডাক্কতাররা কী ওষুধ খাওয়ায়, রোগী মরে না, আবার ভালোও হয় না, ঝুইলা থাকে। আমাগো ব্যবসাপাতি লাটে।
পলাশের কয়েকটি লাশবাহী মাইক্রো আছে। কোনও রোগী মারা গেলে সে গাড়িতে করে লাশ বাড়ি পৌছে দেয়।
আমি পলাশের সাথে দরদাম করছি। একটা লাশ কুমিল্লা নিয়ে যেতে হবে। সে তিন হাজার টাকা চাচ্ছে। বললাম, ভাই , সারা বছরই তো ব্যবসা করেন। আজকের দিনটা বাদ দ্যান।
তারপর আইজ শবে বরাত। আপনার সোয়াব হবে। একটু দয়া করেন। টাকা কমান।
পলাশ বললেন, ভাই, বহুত দয়া করছি , এর কমে পারমু না।
অন্য সময় চাইর হাজার টাকা নিতাম। এই কেস দেইখা তিন হাজার চাইতাছি।
আমি কেসটা একটু ব্যাখ্যা করি। বেশ কয়েক বছর আগে এক লোক তার বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে আমার সাথে দেখা করেন। বাচ্চা ছেলেটার থ্যালাসিমিয়া হয়েছে।
চিকিৎসার জন্য টাকা এবং রক্ত দরকার। আমাদের সবার চেষ্টায় শাহাবুদ্দিন এক সময় মোটামুটি সুস্থ হয় , এরপর দুই বছর আগে শাহাবুদ্দিনের মার ক্যান্সার ধরা পড়ে। এই অসম্ভব দরিদ্র পরিবারটি চরম বিপদে পড়ে।
আজ সকালে শাহাবুদ্দিনের বাবা ফোন দিয়েছিলেন, ডাক্তাররা শাহাবুদ্দিনের মার নাম কেটে দিয়েছেন, এখন বাড়ি চলে যেতে হবে, যাওয়ার ভাড়া নাই। অল্প কয়েকটি টাকার জন্য তিনি ঢাকা মেডিকেল থেকে আমার মিরপুরের বাসায় চলে আসেন।
টাকা নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখেন উনি মারা গেছেন। এতে করে তাদের বাড়ি ফেরার খরচ বেড়ে গেছে। খবরটা শুনে আমি মেডিকেলে গেলাম। দেখলাম লাশের দালালরা শাহাবুদ্দিনের মায়ের মৃতদেহ ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে । বাংলাদেশের মানুষ কোনো ব্যাপারে সহজে একমত হয়না, কিন্তু লাশের দালালরা একমত তিন হাজার টাকার নীচে লাশ কুমিল্লায় নেয়া যাবে না।
আমরা ক জন মিলে টাকাটার ব্যবস্থা করে ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম।
হায় আমার দেশ। হায় আমার দেশের মানুষ।
শাহাবুদ্দিনের বাবা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।