মহাকালি-গুলশান লিংক রোডের দুইপাশের দুইখান প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকনে আইজকা ঐ এলাকায় নাকি যানজট কম আছিল- এই কথা তুইলা অনেকরেই কইতে শুনলাম বড় লোকের পোলাপানেরা লাখ লাখ টাকা খরচ কইরা বিবিএ এমবিএ পড়তে পারে আর সরকাররে কয়টা টাকা ভ্যাট হিসাবে দিতে পারে না! আবার কাউরে কইতে শুনলাম, হ, এই সব ভোদাই পোলাপানের কাছ থেইকা প্রাইভেট ইউনির মালিকেরা লাখ লাখ টাকা হাতাইয়া নিতাছে কিন্তু বিনিময়ে একটা ভালো ক্যাম্পাস, ক্লাসের পরিবেশ, ল্যাব-লাইব্রেরি, উন্নত শিক্ষা ইত্যাদি কিছুই প্রভাইড করতাছে না, সেই দিকে তাগো কোন নজর নাই, সরকার সামান্য ভ্যাট ধরছে তাতেই তাগো এখন রাস্তা-ঘাটের গাড়ি ভাঙচুর করণ লাগবো!
যারা এইসব কথাবার্তা কইতাছেন, সেইসব মাইনষের এলিট শ্রেণীর প্রতি ঘিন্নার মনোভাবরে সন্মান জানাইনাইয়াই কিছু কথা তুলবার চাই। ভাই আপনেরা কি প্রাইভেট ইউনিরে অহনও স্রেফ বড় লোকের ব্রয়লার মুর্গী মার্কা পোলাপানের শিক্ষাগার বইলা মনে করেন? কিংবা আপনেরা কি সরকাররে বাদ দিয়া শিক্ষার মান ঠিক-ঠাক রাখার দায়-দায়িত্ব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পোলাপানের উপর ছাইড়া দিলেন? পোলাপান এইসব মৌলিক বিষয় নিয়া আন্দোলন করে না- এইটা তাদের অরাজনৈতিকতা কিংবা বেকুবি, সেইটা নিয়া কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু এইসব ব্যাপারে সরকারের দায়-দায়িত্বের জায়গাটা আগে স্মরণে রাখা দরকার। সরকার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বিনামূল্যে তো প্রদান করছেই না, উল্টা যারা গাটের পয়সা খরচ কইরা সেই সব অধিকার(বাস্তবে পণ্য) কিনতে যাইতেছে, তাদের কাছ থেইকা ভ্যাট নেয়ার মাস্তানি মারাইতেছে।
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মালিকেরা শিক্ষার দোকান খুইলা বইছে, নগদ নারায়ণের বিনিময়ে শিক্ষা বেচতাছে, যার বেশি পয়সা সে বেশি দামের সার্টিফিকেট কিনতাছে- এইগুলা গুরুতর সমস্যা।
বড়লোকের পোলাপান এইসব দোকানের কাষ্টমার হইয়া সহজেই ডাক্টার ইঞ্জিনিয়ার হইতাছে, মালিকেরা লাখ লাখ টাকা কামায়া নিলেও শিক্ষার মানের দিকে কোন নজর দিতাছে না- এই রকম একটার অবস্থার প্রতিবাদ তারা করছে না বরং সরকার সেইখানে ভাগ বসাইলেই চিল্লাচিল্লি- এই সবও সমস্যা।
কিন্তু তার চেয়ে বড় সমস্যা হইলো এই শিক্ষা বাণিজ্যের অস্তিত্বের শর্ত- রাষ্ট্র নিজেই কিন্তু তিলে তিলে এই পরিস্থিতির পয়দা করছে। বছর বছর বাড়তি পোলাপান ইন্টার পাশ করতাছে, কিন্তু বছর বছর তো সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হইতাছে না,সিট বাড়তাছে না, তাইলে এই সব পাশ করা পোলাপাইন যাইব কই? ১০/১৫ লাখ টেকা খরচ কইরা হইলেও তো তাগে সার্টিফিকেট জোগার করতে হইব।
এক সময় খালি কোটিপতির পোলাপান সেশনজট এড়ানোর লাইগা প্রাইভেট ইউনিতে পড়ত। যতই দিন যাইতেছে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকট ততই বাড়তাছে, ততই মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের পোলাপান প্রাইভেট ইউনির দারস্থ হইতে বাদ্ধ হইতাছে।
যে শ্রেণির পোলাপানের পক্ষে লাখ লাখ টাকা খরচ করা কোন ব্যাপারই না, সেই শ্রেণীর বাইরের পোলাপানরা যতই বাড়তে থাকবো ততই কিন্তু এই ধরণের আন্দোলনের ইস্যু তৈরী হইতে থাকবো। এরা ১০ লাখ টাকা দেয় কিন্তু এতটা অবলিলায় সেই টাকাটা জোগার হয় না যে আর কয়েক হাজার বাড়তি ভ্যাট দিতে তাদের কিছু-ই যাবে আসবে না!
আমার সাফ কথা, সরকার শিক্ষা-খাদ্য-বাসস্থান-চিকিতসা এইসব মৌলিক অধিকারের কোন ব্যাবস্থা করবো না, এইগুলাকে পণ্য বানাইয়া বাজারে ছাড়বো, আর তারপর পাবলিক সেই সব পণ্য কেনার সময় ভ্যাট ধরবো-- এইটা বড়ই বদমায়েশি, এই বদমায়েশি আমি মানি না।
আরএইগুলা বড়লোকের আবাল পোলাপানের আবাল আন্দোলন বইলা হালকা ভাবে নেয়ার পক্ষপাতিও আমি না। এইসব কিছুরে আমি সমাজ ও রাষ্ট্রের গভীর ও জটিল ব্যাধির লক্ষণ বইলাই সনাক্ত করতে চাই এবং সেই মতোই তার চিকিতসার পক্ষপাতি।
আপনাগো কি মত?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।