শহিদুল সাহেব যে বাসায় থাকেন সেটি একটি ছোট হাউজিং কমপ্লেক্স। ছোট হলেও বেশ ছিমছাম। ৫০/৬০টার মতো বাড়ি। তার বাড়িওয়ালাও ভালো। শহিদুল সাহেব প্রায় সাত বছর এই হাউজিং-এ আছেন।
হাউজিংটার জন্য তার দরদ আলাদা কারণ তাদের ছোটমেয়ের সম্ভাবনা নিয়ে তার স্ত্রী এবাসা দেখে যান এবং পরবর্তীতে এখানে থাকাকালীনই তাদের ছোটমেয়ের জন্ম। এজন্য বাসাটার প্রতি তার দূর্বলতা আছে। যাইহোক, প্রতি বছর রোজার ঈদের সময়ে গেটে যে ছয়জন দারোয়ান হাউজিং-র গেট পালাক্রমে পাহারা দেয় তাদেরকে তিনি বকশিশ দেন। এজন্য দারোয়ানরা তাকে বেশ পছন্দও করে। আসতে যেতে সালামটা দেয়, তিনিও তা উপভোগ করেন।
এরমধ্যে গত বছর একজন দারোয়ান এলো তার কাছে। স্যার, খুব অসুবিধায় পড়েছি। যদি ১০০টা টাকা দেন তবে আজকের বাজার করতে পারি। দিলেন শহিদুল সাহেব। প্রায় ছ'মাস পর, আবার তার আগমন।
স্যার, আমার মেয়েটা ল'তে ভর্তির চান্স পেয়েছে। ১০০০টাকা কম পড়েছে ভর্তির জন্য। আপনি যদি সাহায্য করেন তাহলে খুব ভালো হয়। আমি আগামী মাসের বেতন পেয়ে আপনাকে দিয়ে দিবো। আবারও শহিদুল সাহেব টাকাটা তাকে দিলেন।
কদিন পরে খোঁজ খবরও নিলেন মেয়েটা নিয়মিত ক্লাস করছে কিনা, ইত্যাদি।
দু'মাস পর এক সন্ধ্যায় আবার রাস্তায় দারোয়ান শহিদুল সাহেবের হাত ধরে ফেললো। স্যার, আমি তো কথা রাখতে পারিনাই। আমার মেয়েটার স্যার এরমধ্যে সোনালী ব্যাঙ্কে একটা চাকরী হয়েছে। এখন আমি অনেকটা নিশ্চিন্ত স্যার।
এখন মেয়ের কলিগরা বলেছে কাল যেন মিষ্টি নিয়ে যায় অফিসে। এখন মাসের মাঝখানে আমি টাকা কই পাই। স্যার আপনি আমাকে ৫০০টা টাকা দেন। আমি সবটাকা আপনাকে আগামী মাসের বেতন পেয়েই দিয়ে দিবো। এবার আমার আর কোন চিন্তা নাই।
শহিদুল সাহেব নরম শরম মানুষ। টাকাটা তিনি দিলেন।
মাস যায়, বছর যায়। টাকা ফেরত দেয়ার জন্য কেউ আসেনা। শহিদুল সাহেব মুখ ফুটে দারোয়ানকেও কিছু বলেননা।
ক'দিন আগে, দিনটা ছিল শুক্রবার। দুপুরে হঠাৎ বাসায় কলিং বেল বেজে উঠলো। শহিদুল সাহেব দরজা খুললেন। দেখলেন আরেকজন দারোয়ান দরজায়। কি ব্যাপার?জানতে চাইলেন তিনি।
কাঁচুমাঁচু হয়ে দারোয়ানজি বললেন, স্যার ৫০০টাকা দেয়া যাবে? একটু অসুবিধায় পড়েছি। আগামী মাসে দিয়ে দিবো। ............................................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।