আমি একজন প্রবাসী
শাবান হিজরি বছরের অষ্টম ও পবিত্র রমযানের পূর্ববর্তী মাস। ফযীলত ও মহত্ত্বের দিক দিয়ে এ মাস অসীম গুরুত্বের দাবিদার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসের গুরুত্ব বর্ণনায় উসামা বিন জায়েদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘রজব ও রমযান মাসের মধ্যবর্তী এই শাবান মাস সম্পর্কে লোকজন গাফেল থাকে অথচ এ মাসে মানুষের আমল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে উপস্থাপন করা হয়। ’ (আহমদ, নাসায়ি) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসের বেশির ভাগ দিন রোযাদার হিসেবে কাটাতেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনো রমযান ছাড়া পুরো মাস রোযা রাখতে দেখিনি, আর শাবান মাসের মতো অন্য কোনো মাসে তাকে অধিক হারে রোযা রাখতে দেখিনি।
’ (বুখারি ও মুসলিম)
এ মাসের মধ্যবর্তী রাত বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এ স¤পর্কিত হাদীসগুলোর মধ্যে বর্ণনার ধারাবাহিকতা ও বিশুদ্ধতার শর্ত পূরণের দিক দিয়ে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হাদীসটির বর্ণনাকারী আবু মুসা আশয়ারি (রাঃ)। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ শাবানের মধ্যবর্তী রাতে তার সৃষ্টির মুখোমুখী হন এবং মুশরিক (আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপনকারী) ও ঝগড়া ফাসাদকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। ’ (ইবনু মাজাহ, তিবরানি, ইবনু হাব্বান; আলবানি হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন। )
মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার কারণে এ রাতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক বিদআত ও অন্ধ বিশ্বাস।
এ পরিসরে শাবানের মধ্যবর্তী রাতকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু বিদআত স¤পর্কে আলোচনার প্রয়াস নেয়া হবে।
শাবানের মধ্যবর্তী রাতের মর্যাদা বর্ণনায় অনেকে সূরা দুখানের (২-৪) আয়াতগুলোর উল্লেখ করেন; মহান আল্লাহ বলেন, ‘সু¯পষ্ট কিতাবের শপথ। আমি একে এক ‘বরকতময় রজনী’তে অবতীর্ণ করেছি, কারণ আমি মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছিলাম। এ রাতে প্রতিটি বিষয় বিজ্ঞোচিত ফয়সালা করা হয়। ’ প্রকৃতপক্ষে পবিত্র কুরআনের কোথাও শাবানের মধ্যবর্তী রাতের উল্লেখ নেই।
উল্লিখিত আয়াতে পবিত্র রাত বলতে ‘লাইলাতুল কদর’কে বুঝানো হয়েছে। কেননা কুরআন যে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ হয়েছে এবং এ রাতেই মানুষের তাকদির নির্ধারিত হয় তা সূরা কদর দ্বারা প্রমাণিত। কুরআনের আয়াত দ্বারা কোনো কিছু প্রমাণিত হলে সে ক্ষেত্রে অন্য কোনো বর্ণনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না।
তারা এ রাতকে শবে বারাআত বা বারাআত নির্ধারণের রাত বলে; আর এ কারণে এ রাতে তারা উন্নত মানের খাদ্য ভক্ষণ করে, যাতে সারা বছর তাদের ভাগ্যে উন্নত মানের খাবার লেখা হয়। এ ক্ষেত্রে তারা পূর্বোক্ত আয়াতটিই প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে।
যারা এ পক্ষে মত পেশ করেন তাদের মধ্যে হযরত ইকরামা (রাঃ)-এর নাম সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ইবনু আব্বাস, ইবনু উমার, মুজাহিদ, কাতাদা, হাসান বসরি, সাঈদ ইবনে জুবাইর, ইবনু জায়েদ, আবু মালেক, দাহহাকসহ জমহুর মুফাসসির ঐক্যমত হয়েছেন, এটা রমযানের সেই রাত যাকে ‘লাইলাতুল কদর’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। ইবনুল আরাবি বলেন, ‘শাবানের মধ্যবর্তী রাতে ভাগ্যের ফয়সালা হওয়া সম্পর্কে বর্ণিত কোনো হাদীসই নির্ভরযোগ্য নয়, তাই সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করা উচিত। ’ (আহকামুল কুরআন) সূরা কদরে লাইলাতুল কদরের সব কিছুর ফয়সালা হওয়ার ¯পষ্ট ঘোষণা এসেছে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া‘তায়ালা বলেন, ‘সে রাতে ফেরেশতা ও জিবরাঈল তাদের রবের আদেশে সব রকম নির্দেশ নিয়ে অবতীর্ণ হয়। ’ এই স্পষ্ট ঘোষণার পর ‘শাবানের মধ্যবর্তী রাতে’ তাকদিরের ফয়সালা হয় এ জাতীয় বিশ্বাস বা ধারণার কোনো অবকাশ থাকে না।
তবে যারা সারা বছর কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ আদায় করেন এবং অভ্যাসগত কারণে এ রাতে নফল নামায আদায় করেন তাদের কথা ভিন্ন। আবার এ রাতে মানুষকে নফল নামায থেকে বিরত রাখাও ঠিক নয়; কেননা সাধারণ নিয়মে নফল নামায আদায় করা কোনো সময় দোষের হতে পারে না।
কিছু মানুষ এ রাতটি আনন্দ উল্লাস, আতশবাজি, হালুয়া-রুটি, শরবত বণ্টনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এটি উদযাপন করে থাকে। কিন্তু এ রাত আনন্দ-উল্লাসের কোনো অনুষ্ঠান নয়; বরং আত্মসমালোচনা ও ব্যক্তিগত ইবাদত-সাধনার একটি রাত। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী এ রাতে মুশরিক ও ঝগড়া-ফাসাদকারী এ দুই শ্রেণীর মানুষ ছাড়া অন্য সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।
অর্থাৎ সব শ্রেণীর মানুষের ক্ষমার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়নি। যে দুই শ্রেণীর মানুষ এ রাতে ক্ষমা পাওয়ার অযোগ্য বলে গণ্য তারা হলো মুশরিক তথা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপনকারী এবং ঝগড়া-বিবাদকারী। এ শ্রেণী দু’টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, কোনো মানুষ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না সে শিরক থেকে মুক্ত কি না। তার জ্ঞাতসরে বা অজ্ঞাতে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে অনেক শিরক। আর এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে যে ভয়টি করি তা হলো তোমরা ছোট শিরকে পতিত হতে পারো।
’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।