আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

sb]প্রথম আলোর ফান ম্যাগাজিনে নির্ল্লজ্জ প্রোপাগান্ডা

বদলে গেছি

সত্যজিত রায়ের হিরক রাজার দেশে সিনেমাটায় আমরা দেখেছি রাজা তার আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একজন বিজ্ঞানী (বুদ্ধিজীবী) নিয়োগ করেন। যে সারাক্ষণ তার যন্তর- মন্তর ঘরে গবেষণা করে এক ভয়ঙ্কর যন্ত্র আবিস্কার করেন। সে যন্ত্রের নাম মগজ ধোলাই। এ মগজ ধোলাই যন্ত্রে যাকেই ঢোকানো হয় সেই রাজার অন্ধ অনুগত হয়ে যায়। রাজার সমস্ত কথায় সম্মতি দেয়।

নিসন্দেহে এটা একটা চমৎকার রূপক ছিল। গণতন্ত্রে এ মগজ ধোলাই এর কাজটা করে মিডিয়া। মিডিয়া জনগণের সম্মতি উৎপাদন করে। (দেখুন কনসেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং- নোম চমস্কি)। লিপম্যান বলেন গণতন্ত্রে শাসক গোষ্ঠী উদ্ভ্রান্ত লোকেদের দিক থেকে উঠে আসা হুমকিকে লাঠিয়াল বাহিনী দিয়েই শুধু মোকাবেলা করে না মিডিয়া দিয়ে এ লোকগুলোকে বশে রাখে।

[এত স্বল্প পরিসরে এ আলাপটা শেষ করা যাবে না বলে শুধু মূল কথায় যাবার আগে সামান্য পটভূমি বলব। ] এত আলাপের কারণ কী? আপনাকে যদি এখন জিজ্ঞেস করা হয় আপনার দাবি কী? নিসন্দেহে বলবেন রমজানে দ্রব্যমূল্য হাতের নাগালে থাকতে হবে, নিরবিচিছন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে, ঢাকা বাসীরা বলবেন যানজট নিরসন করতে হবে, প্রথম আলোতে খবর এসেছে ক্ষতিপূরণের দাবিতে বড়পুকুরিয়ার বাসিন্দারা ধর্মঘট করছে ইত্যাদি নানা দাবিতে কিন্তু আপনি মুখর হয়ে উঠবেন। কারণ এগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনে- যাপনে অত্যন্ত জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় প্রশ্ন। এগুলো পূরণ হলে আপনি লাভবান হবেন। কিন্তু মিডিয়া আপনাকে এসব দাবির কথা বলবে ঠিকই আবার সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেবে স্টার প্লাসের সিরিয়ালে যাতে আপনি বিনোদনে ডুবে যান, দাবির কথা গুলো ভুলে যান (কালের কণ্ঠ বাংলাদেশে বসে কেন স্টার প্লাসের সিরিয়ালের ওপর ফিচার করে, বোঝা যায়?)।

আমাদের দেশে হালে প্রচারিত নাটকগুলো দেখুন সেখানে একটি মাত্র সমস্যা নায়ক-নায়িকার প্রেমের সমস্যা (অবশ্য শেষে গিয়ে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করে), সারাক্ষণ আপনাকে কাতুকুতু দিয়ে হাসানোর জন্য ভারামি (যেন সবাই খুব সুখে আছে)। এভাবে একটা সুখ সুখ প্রপাগান্ডা জারি রেখে জনগণকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে মিডিয়া যাতে আপনি রাজনৈতিক দাবি গুলোর কথা ভুলে যেতে পারেন। পত্রিকা পড়ে আপনি যখনই নিজের দাবির ব্যাপারে সোচ্চার হতে যাবেন তখনই পত্রিকা আপনার হাতে তুলে দেবে একটা ফান ম্যাগাজিন। সে ফান ম্যাগাজিন আবার আপনাকে করে দেবে নিরুপায়, বেচারা। প্রথম আলোর ফান ম্যাগাজিনে নির্ল্লজ্জ প্রোপাগান্ডা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক এ দাবি আপামর জনসাধারণের।

তবে এ দাবি ছাড়া অন্য কোন দাবি নাই এ কথা কে বলবে? প্রথম আলোর রসালো বলে, গতকালকের রসালোর একটি ছড়া নিচে দিলাম আর বন্ধনীতে আমার বক্তব্যও আনার চেষ্টা করলাম: তাই তাই তাই তাই তাই তাই আর কোনো দাবি নাই দাবি একটাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা চাই। (লোডশেডিং বন্ধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবার কোন দাবি নাই, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার কোন দাবি নাই, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারিদের চক্র খুঁজে বের করারও কোন দাবি নাই, দুগ্ধখামারিদের বাঁচানোর দাবি নাই, বন্যাদুর্গতদের বাঁচানো জন্যও কোন দাবি নাই। কারণ কালকের প্রথম আলোতেই আমরা দেখেছি প্রধান মন্ত্রী ওএমএস চালু করে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, টিসিবিকে কার্যকর করবেন, এফবিসিসিআই বাজার মনিটরিং করবে। এগুলো প্রথম পাতার খবর; কিন্তু যেন আপনার চোখ এড়িয়ে যায়, আবার প্রথম আলোর বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারেন তাই ভেতরে অর্থ বাণিজ্যের পাতায় ছোট্ট করে তারা জানিয়ে দিয়েছেন এ সব করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কোন বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সেখানে মোট সরবরাহের ২০ শতাংশ থাকতে হবে সরকারের হাতে।

অথচ এ সরকারের হাতে চিনি তেল এগুলো আছে শূণ্যের কোটায়। ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের ফলে হাজার হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবার খবর আছে তৃতীয় পাতায়। সেখানে প্রশাসন বলেছে তাদের করাবার কিছু নেই। অতএব এখানে দাবি করে কোন লাভ নেই। এভাবেই আপনি পাতার পর পাতা উল্টে গিয়ে দেখবেন দুই পাতা জুড়ে খেলার খবর।

অতএব আর কী দাবি থাকতে পারে। কিন্তু বর্তমানের গণতন্ত্রের কোন ক্ষতি হয় না অর্থাৎ আপনি আওয়ামীলীগ বা বিএনপি- যে দ্বিদলীয় চক্রের রাজনীতি প্রথম আলোরা চায় তাদের কোন ক্ষতি না করে যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে পারেন। আগের দিনই খবর দিয়েছে তারা যে জামাতের সঙ্গে বিএনপি কোন কর্মসূচিতে যাবে না। একই সঙেগ আরেকটি খবর দেই পরশু যথারীতি আমাদের দেশের আরেকটি বিদু্ৎ উৎপাদনকারী যন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে। মনে রাখনের বিষয় এর আগে বিএনপির সরকার দেশের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে পারে নি, এ সরকারও না।

এর আগে বিএনপি রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি, এ সরকারও না। অতএব এগুলো দাবি করলে আপনি এ দুই দলের বিরুদ্ধেই চলে যাবেন এমন কি বর্তমানের যে 'বাজার চলতি ভোটের গণতন্ত্র' আছে তারও বিরুদ্ধে । অতএব আপনার দাবি একমাত্র যুদ্ধাপরাধের বিচারেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া আর দাবি আপনার নেই। ) মামা মামি খালা খালু ভাই আর ভাবি চাচা চাচি ফুপা ফুপু সব্বার দাবি— দাবি নিয়ে সোচ্চার আপা-দুলাভাই করব মিছিল চলো রাজপথে যাই— আর কোনো দাবি নাই দাবি একটাই— যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা চাই।

(নারী উত্ত্যক্তের কারণে কালকে প্রথম আলোরই খবর দুই বখাটের পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করেছে স্থানীয় জনতা, গলায় জুতার মালা দিয়ে ঘুরিয়েছেও আরও দুজনকে। অথচ মামি, ভাবি, খালা, ফুপু , চাচি, আপার নাকি আর কোন দাবি নাই। শুধু যুদ্ধাপরাধের বিচার হলেই তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকবেন। এমন কি মেনকা, সিমি প্রমুখের হত্যা আত্মহত্যা বিষয়েও আমাদের মা বোনদের কোন মাথা ব্যথা নেই। তাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য রাষ্ট্রের কাছে তাদের আর কোন দাবি নাই! থাকতে পারে না! ) মা-বাবা, ভাইবোন পাড়া প্রতিবেশী এ দেশে একাত্তরে কারা তি বেশি করেছিল জানেন তো সেই সব নাম? মুক্তিসেনার দেহে ঝরিয়েছে ঘাম তাদের নামের আজ তালিকা টানাই আর কোনো দাবি নাই দাবি একটাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা চাই।

(ভাই যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়া খুবই জরুরি খুব প্রয়োজনীয় এবং আমাদের প্রাণের দাবি। এ দাবি পূরণের কথা দিয়েই হাসিনা সরকারী গদিতে বসেছেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের আর কোন দাবি নাই। আমাদের আসলে দাবির কোন শেষ নাই। ) আবার মিডিয়া অনেক দাবির কথা আমাদের জানতে পর্যন্ত দেয় না।

আপনারা যারা ঢাকায় থাকেন সম্ভবত একটি পোস্টার টাঙ্গাইলবাসীর আগেই দেখেছেন। গ্রামীণ ফোনের ৭০০ গাড়ি চালক তাদের ডিউটি ফি পাচ্ছে না, মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছে, দালালরা তাদের নিয়মিত ঠকাচ্ছে বেতন ভাতাদি দিচ্ছে না এ হল ওই পোস্টারের দাবি। তারা মানবাকধিকার প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার ইঙ্গিতও দিয়েছে। কিন্তু ঘুনাক্ষরে এর কোন কিছু কোন মিডিয়াতে জানতে পারলাম না। এমন কি এ কথাগুলো সঠিক না বেঠিক তাও না।

এই হল মিডিয়ার দাবি না থাকার রাজনীতি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।