খুনী জিয়া জানতো , তিনি বেঁচে থাকলে জিয়ার ক্ষমতায় থাকা কঠিন হবে। তাই তাঁকে হত্যার জন্য জিয়া ছিল মরিয়া।
এক প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যা করেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা তাহের কে।
'আমি ওদের সময় আমার মতো দিঘি খুঁড়েছিলাম বলে/আমার দিঘিতে পানি ওঠেনি। আমি ওদের সময়ে আমার মতো করে চাষ করেছিলাম বলে/আমার জমিতে শস্য জন্মেনি।
'
এ কবিতায় ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্যবোধের মতো ছিল কর্নেল তাহেরের ভিন্নমাত্রার স্বকীয়তা। বাংলাদেশের রাজনীতির সমসাময়িক ধারা থেকে স্পষ্ট ও ভিন্ন ছিল তাঁর রাজনৈতিক ভাবনা। তিনি ভেবেছিলেন সমাজতন্ত্রের কথা। সুর মেলাননি কারো বেঁধে দেওয়া সুরে। আপস করেননি নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে, আর তাই ফাঁসির মঞ্চে উঠেও উদাত্ত স্বরে আবৃত্তি করেছিলেন 'জন্মেছি মৃত্যুকে পরাজিত করব বলে।
'
স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসে অন্যতম উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পদক্ষেপ ৭ নভেম্বরের সিপাহি অভ্যুত্থানের নায়ক কর্নেল মো. আবু তাহের। ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে এসে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। দায়িত্ব নেন ১১ নম্বর সেক্টরের।
একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, কর্নেল তাহেরের সব ভাই-বোন একই সঙ্গে তাঁর নেতৃত্বে অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ ও সিপাহি অভ্যুত্থানসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংকটে। কর্নেল তাহের অনেকভাবেই ইতিহাসে অন্যতম, তিনিই প্রথম বাঙালি অফিসার হিসেবে পাকিস্তান আর্মির কমান্ডো দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্যারাসুট জাম্পিংয়ের নেতৃত্ব দেন।
আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের ফলে তৎকালীন পাকিস্তানের কমিউনিস্ট আন্দোলনের নাজেহাল অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে সমাজতন্ত্রের বীজ বপনের। তাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভেতরে থেকেও সম্পর্ক রেখেছিলেন সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে থাকা মানুষের সঙ্গে। ১৯৬৯ সালে সিরাজ শিকদারের সঙ্গে টেকনাফে ঘাঁটি গড়ে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সংগ্রামের।
ছুটি নিয়ে গোপনে তরুণদের আর্মস্ ট্রেনিং দিতেন, কী গভীর প্রত্যয় থাকলে সেনাকর্মকর্তা হয়েও এত বড় ঝুঁকি নেওয়া যায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ১১ নম্বর সেক্টরে দায়িত্ব পালনের সময় প্রচলিত ব্রিগেড গড়ার বদলে মনোযোগ দিয়েছিলেন গেরিলা যোদ্ধা তৈরিতে। নিজস্ব সেক্টরের কম্পানিগুলোয় পলিটিক্যাল কমিশনার হিসেবে বাম আদর্শের তরুণদের নিয়োগ দেওয়া নিয়ে জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়তেও পিছপা হননি। ১৪ নভেম্বর কামালপুর অপারেশনে একটি শেল উড়িয়ে দিয়েছিল তাঁর পা।
থেমে যাননি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্র্যাচে ভর করে নিজের আদর্শ বাস্তবায়নের লড়াই করে গেছেন কর্নেল তাহের।
স্বাধীনতার পরই বুঝতে পেরেছিলেন দেশের আসন্ন সংকট। সেনাবাহিনী পরিবর্তন করে চেষ্টা করেছেন পিপলস আর্মি তৈরির। খুঁজতে থাকেন স্বকীয় একটি বাম দলের। কিন্তু আপসহীন মনোভাবের কারণে কর্নেল তাহের সুর মেলাতে পারছিলেন না কারো সঙ্গে। ১৯৭২ সালে গঠিত জাসদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, পটপরিবর্তন চেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এমন নির্মম উপায়ে নয়। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। এরপর ঘটে রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম ফাঁসির প্রহসনের ঘটনা। কর্নেল তাহেরকে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা মামলায় ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির আদেশ দেন। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ফাঁসি হয় কর্নেল তাহেরের।
আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ এই কর্নেলের প্রসঙ্গ এখনো অমীমাংসিত। তাঁর লক্ষ্য অর্জনের উপায় নিরূপণ অস্পষ্ট হলেও তাঁর একটি উক্তিই বুঝিয়ে দেয় তাঁর ব্যাপ্তি। কর্নেল তাহেরই বলে গেছেন, Nothing is greater than possession of a fearless mind.
নিঃশংক চিত্তের চেয়ে বড় কিছু নেই ।
তাঁর চেতনা বাঙালীর পাথেয় হবে যুগে যুগে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।